নাহাজন হাজং এর উদ্যোগ
কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে আল্পনা নাফাক
কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের একটি সীমান্তবর্তী গ্রাম বনবেড়া। এই গ্রামটি একটি আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। গ্রামের মধ্যে মোট পরিবার হলো ১৭টি। তার মধ্যে ২টি পরিবার গারো জাতিগোষ্ঠী ও বাকি ১৫টি পরিবার হাজং জাতী গোষ্ঠী। নাহাজন হাজং এই গ্রামেরই একজন বাসিন্দা। নাহাজন হাজং এর বয়স ৪৫ বছর। তিনি মূলত একজন বর্গা চাষী ও দিনমজুর। তাঁর জমির পরিমাণ বসতভিটা সহ ৬৪ শতাংশ। নাহাজন হাজং এর তিন জন সন্তান। ২ মেয়ে ও ১ ছেলে। এক মেয়ে এক ছেলে দুজনই সপ্তম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।
নাহাজন ২০১২ সাল থেকে বারসিক এর কার্যক্রমের সাথে জড়িত। তিনি বারসিক’র বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। ফলে নাহাজন হাজং তার বড় মেয়েকে যৌতুক বিহীন বিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। নাহাজন হাজং বলেন, ‘আমি বারসিক এর বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে জেনেছি যে, যৌতুক দেওয়া ও নেওয়া দুটিই অপরাধ। তাই আমি স্থির করেছিলাম যে, আমার মেয়েকে আমি যৌতুকবিহীন বিয়ে দেব। কারণ পরিবর্তন নিজে থেকে শুরু না করলে অন্যকে দিয়ে পরিবর্তন করা যায় না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের গ্রামে এখন যৌতুক বিহীন বিয়ে হচ্ছে। এ গ্রামে আমিই প্রথমবারের মত আমার মেয়েকে যৌতুক বিহীন বিয়ে দিতে পেরেছিলাম।’
নাহাজন হাজং জৈবকৃষি চর্চা করেন। তিনি তার জমিতে ও শাকসব্জির বাগানে কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করেন। মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জৈব সারের গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি একটি হাউজ এর মধ্যে কেঁচো কম্পোষ্ট তৈরি করছেন। সেখান থেকে তিনি ধানের জমিতে ও শাকসব্জি বাগানে ব্যবহার করেন। নাহাজন হাজং বলেন, ‘এই কেচো কম্পোষ্ট তৈরির ফলে আমার অনেক সুবিধা হয়েছে। কারণ এর আগে আমি জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতাম। ফলে সার কিনতে অনেক টাকা লাগতো। অনেক সময় সার ক্রয় করার জন্য টাকা পেতাম না। এখন আমার সারের জন্য টাকা খরচ করতে হচ্ছে না। ফলে আমার এখন ধান বা সব্জি উৎপাদন খরচ অনেক কমে গেছে। আমন ও বোর মৌসুমে কেচো কম্পোস্ট প্রয়োগের জন্য বস্তায় ভরে রেখে দিই। এই সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। এর জন্য আমি অন্যান্য কৃষকদেরকেও উদ্বুদ্ধ করি যাতে তারাও এই সার উৎপাদন ও ব্যবহার করেন।’
নাহাজন হাজং এর বসত ভিটায় সারাবছর শাকসব্জি উৎপাদন করেন। যা দিয়ে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে তার বাগানে চালকুমড়া, কাকরোল, পাটশাক, ডাটা, মরিচ, টক পাতা, বেগুন ও কাঁচাকলা আছে। পরিবারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি শাকসব্জি বাজারে বিক্রি করেন। তিনি মে মাসে ২৫০০ টাকায় কাঁচা কলা বিক্রি করেছেন। বারোমাসি মরিচও মাঝে মধ্যে বিক্রি করেন তিনি। বারো মাসি বেগুনের চারা রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। নাহাজন হাজং মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন ধরণের শাকসব্জি উৎপাদন করেন ও বিক্রিও করেন। তার এমন উদ্যোগ পাড়া প্রতিবেশীদেরও উদ্বুদ্ধ করছে।