পায়রা চরাঞ্চলের উপযোগি ফসল
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
এলাকার পরিবেশ আর প্রতিবেশকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে মানুষের জীবন ও জীবিকার উপায়। এলাকার মাটি, খাল-বিল, নদনদী সব কিছু মিলেও মানুষের দীর্ঘ দিনের চিন্তা চেতনা, অভিজ্ঞতা, তাদেও চর্চা, স্থানীয় সম্পদকে বিবেচনা করে তাদের সাথে খাপ খাইয়ে টিকে আছে হরিরামপুর চরাঞ্চলে মানুষ। চাহিদা ও সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় মানুষ ও প্রাণী সম্পদের খাদ্য অভ্যাস। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর চরাঞ্চলের পাটগ্রামচর, উত্তর পাটগ্রামচর, নটাখোলা, সেলিমপুর, জয়পুর, বসন্তপুর গ্রামের সুতালড়ি, লেছড়াগঞ্জ ও আজিমনগর ইউনিয়নে চলতি বছর অন্যান্য ফসলের সাথে মাঠে অনেক পায়রা চাষ দেখা যায়।
হরিরামপুর কর্মকারকান্দি গ্রামে বাড়ি কৃষক ভাসান সরকার বলেন, ‘পায়রার ছাতু অনেক স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বেশি। এ সময় ১০-১২ বছর আগে পায়রা আমাদের এলাকায় প্রায় কৃষকই চাষ করত। মাঝখানে কিছু দিন পায়রা চাষ কমে যায়। আবার এলাকায় পায়রা চাষ বেড়ে গেছে। পায়রা শুধু মানুষের খাদ্য নয় বরং চরে গৃহপালিত প্রাণিসম্পদের খাদ্য হিসেবে পায়রা অত্যন্ত উপযোগি। তার কারণ হরিরামপুর চরাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি পরিবারে গরু পালন করে। এই গরুর খাদ্য হিসেবে পায়রা ব্যবহার হয়। এ ছাড়াও চরে রয়েছে অনেক ঘোড়া, ছাগল, ভেড়া তাদেরকে পায়রা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।’
সেলিমপুর গ্রামের কৃষক আকলিমা বেগম বলেন, ‘পায়রা ছাতু খেতে অনেক স্বাদ, পানি দিয়ে ভিজিয়ে গুড় বা চিনি দিয়ে মুড়ি সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। বর্তমানে শহর থেকে অনেক মানুষ চর থেকে পায়রা ছাতু নিয়ে যায়। তাছাড়াও আমরা যে এলকায় পায়রা চাষ হয় না সে সকল আত্মীয়স্বজনকে পায়রা ছাতু খাওয়ার জন্য পাঠাই।’
পায়রা এটেল মাটিতে ভালো হয়। তবে দোআঁশ মাটিতে পায়রা চাষ করা যায়। প্রতি ১ বিঘা জমিতে (৩৩ শতক) ১০ কেজি পায়রার বীজ লাগে। অগ্রহায়ণ থেকে পৌষ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত পায়রা বোনা যায়। আর চৈত্র মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে ফসল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি ৩৩ শতক জমিতে খুব ভালো হলে ৮-১০ মণ পর্যন্ত পায়রা হয়। প্রতিমণ পায়রার বর্তমান বাজার মুল্য ৩০০০- ৩৫০০ পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।
উল্লেখ্য যে, বেসরকারী উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ২০১২ সাল তেকে হরিরামপুর চরাঞ্চলের কৃষকদের পায়রা চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। প্রথমে ১০ জনকে কৃষককে ৫ কেজি করে পায়রা বীজ দিয়ে সহযোগিতা করে। তারপর পায়রা দিয়ে চরাঞ্চলে খাদ্য উৎসবের আয়োজন করা, গম পায়রার বীজ মেলা, কৃষক নেতৃত্বে গমপায়রা চাষে সম্প্রসারণ প্লট, অভিজ্ঞ কৃষকদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ সহায়তা প্রদান, গম-পায়রার মাঠ দিবস, কৃষক পর্যায়ে তথ্য আদান প্রদান করা, বীজ বিনিময় করা। বারসিক চরাঞ্চলে আবহাওয়া ও মাটি অনুযায়ী উপযোগি ফসল চাষাবাদ সম্প্রসারণ করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় চরাঞ্চলে বীজ সংকট মোকাবেলায় কৃষকদের বীজ সহায়তার জন্য বৈচিত্র্যময় ফসলের বীজ সংরক্ষণ কেন্দ্র তৈরিতে সহায়তা করা। যাতে চরবাসি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্বেও স্থায়িত্বশীল কৃষি ব্যবস্থা ও জীবিকা অব্যাহত রাখতে ইতি বাচক ভুমিকা রাখে।