জলবায়ু সংগ্রামী নারী চম্পা রানী এখন স্বাবলম্বী
নাছিমা পারীভন (শ্রীউলা) আশাশুনি, সাতক্ষীরা:
জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে জীবন ও জীবিকারও বিরূপ পরিবর্তন এসেছিলো চম্পা রানী দাসীর পরিবারে। তিন বেলা খাওয়ার পর্যন্ত জুটতো না তাদের। জলবায়ু পরিবর্তনের থাবা বাঁশ-বেতের হস্ত শিল্পতে পড়ার কারণে এক প্রকার কাজহীন ছিলো চম্পা রানীর স্বামী। দিনমজুরের কাজ করে কোনমতে জীবনধারণ করছিলেন তারা। তবে পরিবেশ প্রকল্পের কারণে এখন জীবন ও জীবিকায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে চম্পা রানীর পরিবার। নিজের পাশাপাশি স্বামীকেও আয়ের উৎসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি। সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে নারীদের একটি সংগঠনের।
চম্পা রানী দাসী (২৫) সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের নাকতারা ঋষিপাড়া গ্রামে বসবাস করছেন। অন্যের তিন শতক জমিতে স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে ছোট সংসার চম্পা রানীর। সন্তান দুটিকে স্কুলে পাঠিয়েছেন। দর্জির কাজ, ছিট কাপড়ের ব্যবসা এবং বাঁশ-বেতের কাজ করছেন তিনি। স্বামী করছেন নরসুন্দরের (নাপিত) এর কাজ। অভাব, অনটনে থাকা চম্পা রানী এখন ঘুরে দাঁড়াতে শিখে গেছেন।
চম্পা রানী ২০২১ সালে নেটজ পার্টনারশীপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় ও বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্পে নাকতাড়া ঋষিপাড়া গ্রুপে যুক্ত হন। এবং সেই গ্রুপের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এরপরই পরিবর্তন হতে থাকে চম্পা রানীর জীবন সংগ্রাম। পরিবেশ প্রকল্প থেকে একটি সেলাই মেশিন, ছিট কাপড় এবং ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য বাঁশ-দা-বটি সহযোগিতা পান। ১৩,৫০০ টাকার এই সম্পদ দিয়ে জীবন পরির্বতনে স্বপ্ন দেখেন চম্পা। তার এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে সময় লাগেনি। সেলাই মেশিনের কাজ করে এবং ছিট কাপড়ের ব্যবসা করে প্রতিমাসে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। এ আয় দিয়ে সংসার চলছে তার এবং বাঁশ-বেতের ক্ষুদ্র শিল্পের কাজ করে সেখান থেকে লাভ করে ২০টি হাঁস ও ৫টি মুরগি কিনেছেন চম্পা রানী। সেখান থেকে ডিম বিক্রয় করছেন এবং নিজেরাও খাচ্ছেন। শুধু তাই নয় নিজে কাজ করে সেখান থেকে সঞ্চয় করে ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে স্বামীকে সেলুনের দোকান করে দিয়েছেন। আর এভাবেই জীবনযুদ্ধে সফলভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন চম্পা রানী ও তার পরিবার।
চম্পা রানী জানান, ২০২১ সালে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় ও বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্পে পাওয়া সম্পদ কাজে লাগিয়ে তিনি এখন সফল। নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন পরিবারের। নিজের আয়ের পাশাপাশ স্বামীকেও আয়ের উৎস করে দিয়েছেন।
চম্পা রানী আরো জানান, পরিবেশ প্রকল্প থেকে জৈব সার তৈরির ও বাড়ি আঙিনায় সবজি চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং প্রকল্প থেকে পাওয়া সবজির বীজ দিয়ে বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করছেন। এছাড়া সাপ্তাহিক মিটিং-এ বিভিন্ন আলোচনা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারছেন। নিজে জানার পাশাপাশি অন্যকেও জানাচ্ছেন।
চম্পা রানীর স্বামী নিমাই দাস জানান, পরিবেশ প্রকল্প আমাদের ভাগ্যে পরিবর্তন ঘটিয়েছে। প্রথমে তার বউয়ের এসব গ্রুপ করতে যাওয় বা মিটিং করা পছন্দ না করলেও পরে সংসারের পরিবর্তন দেখে নিজেই অবাক হয়েছেন। তার স্ত্রী তাকেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলে জানান চম্পা রানীর স্বামী। এখন তারা আগের থেকে অনেক ভালো রয়েছেন। তিন বেলা খেতে পারছেন। অভাবও অনটন দূর হয়েছে বলে জানান তিনি।