অঞ্জলী রানীর স্বপ্ন

সাতক্ষীরা থেকে ফাতিমা আক্তার

মানুষ স্বপ্ন নিয়েই বাঁচে। নতুন করে স্বপ্ন দেখা একজন আগ্রহী ও উদ্যোগী নারী অঞ্জলী রানী (৪৭)। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন কদমতলা গ্রামে বাস করেন তিনি। ১৩ বছর আগে স্বামীর অকাল (বজ্রপাত) মৃত্যুর পর এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করে চলেছেন। মেয়ে দিপা (২৪) কে বিয়ে দিয়েছিলেন কিন্ত বাবার অকাল মৃত্যু চোখের সামনে দেখে ব্রেইন এর সমস্যায় স্বামীর ঘর বেশিদিন টিকল না। অবশেষে ঠাঁই হয় মায়ের কোলে। আর ছেলেটাকে অনেক পরিশ্রম ও কষ্ট করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে বিসিএস পরীক্ষায় বসার সুযোগ একমাত্র ছেলে দিপুর (২২)। অনেক কষ্ট ও পরিশ্রমের মাধ্যমে এবং অঞ্জলী রানীর ভাইয়ের সহযোগিতায় বর্তমানে ছেলে মেয়েসহ তিন জনের সংসারটা কোনরকমে চলছে।

২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে কদম সিএসও দলে যুক্ত হয় অঞ্জলী রানী। দলে যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে তার পারিবারিক ও ব্যবসায়িক উন্নয়ন পরিকল্পণা গ্রহণ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে উৎপাদনশীল হিসেবে একটি গরু সহযোগিতা করা হয়। নিজে আংশিক টাকা যুক্ত করে একটি দেশীয় (বকনা) গরু ক্রয় করেন। পরিবেশ প্রকল্প থেকে তাকে একই সাথে একটি কদবেল ও সবেদার চারা ও ৩টি হাঁস সহযোগিতা দেওয়া হয়। এরপর বারসিক’র নিয়মিত আলোচনা, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতায় তার নিজের সম্পটাকে বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগী ও যতœশীল হন।

পারিবারিক কাজের পাশাপাশি নিজের গরুটাকে ভালোভাবে দেখাশুনা করেন। একটি গোয়াল তৈরি করে খুব যতœ করে গরুটাকে পালন করেন। কিছুদিন পর গরুটি একটি বাচ্ছা জন্ম দেয়। গরু দুটি তাদের পরিবারের একটি বিশেষ অংশ হিসেবে পরম মমতায় পালিত হতে থাকে। এখন গুরু দুটি অঞ্জলী রাণীর একটি বড় স্বপ্নের জন্ম দিয়েছে। মাত্র ১০ শতক বসতভিটায় তিনি বছরব্যাপী বৈচিত্র্যময় ফসল চাষাবাদ করেন। বাজার থেকে খুব বেশি সবজি কেনা লাগে না।

এ বিষয়ে অঞ্জলী রানী বলেন, “আমি গরু দুটিকে নিজের হাতে অনেক যতœ নিয়ে লালন পালন করছি। বাইরে থেকে ঘাস কেটে এনে খেতে দেই। ঠিকমত যতœ নিয়মিত পরিচর্যা করি। এখন আমার গরু দুটির আনুমানিক মুল্য ৮০ হাজার টাকা। তবে আমি এখন এগুলো বিক্রি করব না। গোয়াল ভর্তি গরু করতে চাই। আর তখন একটি গরু বিক্রি করে আমার বসত ঘরটি মেরামত করব।’

গরু দুটি অঞ্জলী রানীর একটি বড় স্বপ্ন। এটা একদিকে যেমন তার পারিবারিক স্বপ্ন পুরণ হবে অপরদিকে তেমনি দেশীয় প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষা পাবে।

happy wheels 2

Comments