সংগ্রামী নাজমা খাতুনের দিনগুলো
সাতক্ষীরা থেকে মুকুন্দ ঘোষ
পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে নানাভাবে ভুমিকা রেখে চলেছে। তেমনই একজন উপকূলীয় সংগ্রামী নারী নাজমা খাতুন। স্বামী মারা যাওয়ার পরও জীবনযুদ্ধে হার না মেনে নিজের সাহস ও সংগ্রামে এগিয়ে চলেছেন স্বমহিমায়। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবাুরার হরিসখালি গ্রামের নাজমা খাতুন (৩৯) এর বসবাস। নাজমা খাতুন ৯ ভাই বোনের মধ্যে ৫ম তম সন্তান। নাজমা খাতুনকে পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবার। নাজমা খাতুন ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বিয়ের পরে স্বামীর পাশাপাশি নিজেদের সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করে নাজমা খাতুন। একটা পুরানো সেলাই মেশিনে কাজ করে সামান্য পরিমাণে আয় করতেন তিনি।
মাত্র ৫ শতক বমতভিটায় নাজমা খাতুনের স্বামী ও তিন সন্তানসহ পাঁচজনের সংসার ছিলো। কিন্তু ২০১৭ সালে কালো জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নাজমা খাতুনের স্বামী না ফেরার দেশে চলে যায়। স্বামী মারা যাওয়ার পরে নাজমা খাতুনকে অনেক কষ্টে দিন কাটাতে হয়। স্বামী মারা যাওয়ার পরে নাজমা খাতুন মেয়ে হোসনেয়ারাকে (২০) বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে নাজমুল হুদা (১৭) ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়াশুনা করে সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরর কাজ করেন। ছোট ছেলে নাইম হোসেন (১২) ৪র্থ শ্রেণীতে পড়াশুনা করছে।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে হরিসখালীর পুষ্পকাঠি সিএসওতে যুক্ত হয় নাজমা আক্তার। যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিয়মিত সাপ্তাহিক মিটিংএ অংশগ্রহণ করেন। পরিবেশ প্রকল্প থেকে উৎপাদনশীল হিসাবে সিটকাপড় সহযোগিতা করা হয়। সিট কাপড়ের পাশাপাশি একটি কদবেলের চারা একটি সবেদার চারা পাঁচটি হাঁস ও অল্প কিছু বীজ সহযগিতা করা হয়। এরপর বারসিক এর নিয়মিত আলোচনা, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতায় তার ক্ষুদ্র ব্যবসাকে বড় করার চেষ্টা করে।
নাজমা খাতুন বলেন, “সিটকাপড়ের ব্যাবসা থেকে একটু একটু করে টাকা সঞ্চয় করি এরপর সিটকাপড়ের পাশাপাশি কিছু মাটির জিনিস এর ব্যবসা শুরু করি। আমি আগে সেলাই মেশিনে যতটা কাজ করতাম সিটকাপড় বাড়িতে নেওয়ার পর কাজটা একটু বেশি হয়েছে। সেলাই মেশিনে কাজ ও ব্যবসা করে মাসে পাঁচ হাজার টাকা আয় করতে পারি।’ নাজমা খাতুনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বারসিককে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।