জাহানারা বিবির দিন বদলের স্বপ্ন
সাতক্ষীরা থেকে মুকুন্দ ঘোষ
প্রাচীন যুগে মানুষ খাবারের জন্য বিভিন্ন পশুর মাংস খেয়ে জীবন ধারন করতো এবং এর পশাপাশি বিভিন্ন গাছের ফল সংগ্রহ করত। এই সব ফল খেয়ে বীজ এখানে সেখানে ফেলে দিতো নারীরা। এখান থেকে নারীদের হাতে বোনা বীজ দিয়ে চাষাবাদের প্রচলন হয়েছে শুরু হয়। এরপর থেকে মানুষ পশুপালন সভ্যতা থেকে কৃষি সভ্যতার দিকে এগিয়ে গিয়েছে এবং আধনিক কৃষির প্রচলন শুরু হয়েছে, সেখানে কৃষিক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা কতটুকু তা সহজেই জানা যায়। গ্রাম বাংলার নারীদের কাছেও অনেক কাজের মধ্যে কৃষিই গুরুত্বপূর্ণ। বীজ সংরক্ষণ ও বপন থেকে শুরু করে চারা রোপণ, সেচ, ফসল উত্তলন এমনকি বিপণনেও নারীরা এককভাবে ভূমিকা পালন করে থাকেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন কৃষিক্ষেত্রে।
ধানের বীজ সংরক্ষণ, রোদে শুকানো, বীজতলা তৈরি, ফসল সংগ্রহসহ মাড়াই, ঝাড়াই, বাছাই, সেদ্ধ করা, সংরক্ষণ, খড় শুকানো প্রভৃতি সব কাজই গ্রামীণ নারীরা করেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে নানাভাবে ভূমিকা রেখে চলেছেন। তেমনই একজন উদ্যোগী নারী জাহানারা বিবি। পারিবারিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে নিজের সামান্য (১৮ শতক) জায়গাতে ধান চাষ করেন। নিজের লাগানো ধান থেকে নিজের খাবার চাহিদা পূরণ করেন।
বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমের ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোলঘেঁষা সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনের বুকচেরা ইউনিয়ন গাবুরা। এই গাবুরা ইউনিয়নের নারী জাহানারা বিবি (৬৭)। জাহানারা বিবি ১৩ ভাই বনের মধ্যে ১১ তম। এতো ভাইবোনের মধ্যে পড়ার সুযোগ না হওয়ার কারণে মাত্র এগারো বছর বয়সেই বিয়ের পিড়িতে বসতে হয় তাকে। তাঁর স্বামী আজীবর মারা গেছেন ১৫ বছর আগে। তাঁর চার ছেলে।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে নেটর্জ পাটনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টির সহযোগিতায় পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত সংগঠন বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে মধ্যমখলিসাবুনিয়া গ্রামের মালঞ্জ দলে যুক্ত হয় জাহানারা বিবি। পরিবার উন্নয়ন পরিকল্পনায় ছাগল নিলে পরিবারের আয় বাড়বে উল্লেখ করেন জাহানারা বিবি। তাই বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে সহায়তা হিসাবে তিনি তিনটি ছাগল দুইটি গাছের চারা সাত প্রকারের বীজ ও পাঁচটি হাঁস পান। জাহানারা বিবি হাঁস, মুরগি ও ডিম থেকে নিজেদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করেন এবং কিছুটা বিক্রয় করে মালঞ্জ দলে সঞ্চয় জমা করে কিছু টাকা।
জহানারা বিবির কাছে ধান চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বারসিক’র থেকে জলবায়ু সহনশীল কৃষি চর্চা বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং নিয়মিত মিটিং থেকে লবণ সহনশীল সবজি চাষ সম্পর্কে জেনে ধান চাষে উৎদোগী হই।’ তাঁর বসতভিটায় তিনি যে সবজি চাষ করেন সেখানে তিনি জৈব সার ব্যবহার করেন। তিনি গর্ত কম্পোস্ট এবং ধান চাষে যতটা সম্ভব জৈব সার ব্যবহার করার চেষ্টা করেন। এর ফলে বসতভিটার সবজি উৎপাদনে পানি খরচ কম হয় এবং কম সার ব্যবহার হয়। বালাইনাশক হিসাবে তিনি বিভিন্ন প্রকার জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করার চেষ্টা করেন।
জাহানারা বিবির বসতভিটয় শিম, লাউ এবং ফল গাছ হিসেবে রয়েছে নারিকেল, কদবেল সবেদা খেজুর ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রকার সবজির মধ্যে রয়েছে বেগুন, লালশাক, পালংশাক, রসুন, পেঁয়াজ, আমের মধু, মুলা, কফি, ঝাল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চিচিঙ্গা, ইত্যাদি। তিনি জানান, বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে সহায়তা পেয়ে এবং জলবায়ু সহনশীল প্রশিক্ষণ পেয়ে অনেক বিষয় জানতে পারেন, যা তাঁর জীবিকায়নে কাজে দিয়েছে। তিনি বারসিককে ধন্যবাদ জানান।