দেশি জাতের কলা চাষ করে সফল তরুণ কৃষক মোমিনুল ইসলাম
রাজশাহী থেকে সুলতানা খাতুন
রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চলের পবা উপজেলা সবজি চাষের অন্যতম এলাকা। এ অঞ্চলের ৭০ থেকে ৮০ভাগ জনগোষ্ঠী কৃষি কাজের সাথে জড়িত। দর্শন পাড়া ইউনিয়নের বিলনেপালপাড়া গ্রাম তার ব্যতিক্রম নয়। এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল।
এই গ্রামেরএকজন তরুণ কৃষক মোঃ মমিনুল ইসলাম (৩৪)। তার আবাদি কৃষি জমির পরিমাণ ২ বিঘা। তিনি আগে শহরে অটো চালিয়ে জীবন নির্বাহ করতেন। বর্তমানে তিনি কৃষি কাজের সাথে জড়িত। গত তিন বছর ধরে তিনি ১৪ শতাংশ জমিতে বৈচিত্র্যময় ১০ জাতের কলা চাষাবাদ করছেন। প্রথমে তিন থেকে চার জাতের কলা থাকলেও পরবর্তীতে জাত সংখা বাড়িয়ে এখন দশ জাতের কলা গাছ রয়েছে। তিনি চিনি চম্পা, বিচা কলা, মানিক কলা, জিন কলা, সবরি কলা, সবুজ আনাজি কলা, সাদা আনাজি কলা, জেড কলা, কাঁঠালি কলা এবং অনচিনি কলা চাষ করেন। বর্তমানে তার কলাবাগান থেকে তিনি মাসে ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকার কলা বিক্রি করে থাকেন। পাশাপাশি তিনি কলার মোচা কলার কাঁনজেল এগুলো শহরে বিক্রি করে আসেন।
কৃষক মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সময়ে সবাই যখন হাইব্রিড জাত সার কীটনাশক এই দিকে ঝুঁকে পড়ছে নিজেরসহ পরিবেশের ক্ষতি করছে তখন আমি নিজে চিন্তা করে উদ্যোগ নিয়েছি। দেখতে চেয়েছি দেশী প্রজাতির কলা চাষ করে ভালো হয় নাকি! বর্তমান সময়ে আমি কলা চাষ করে সন্তুষ্ট। কলা চাষে তেমন কোন খরচ নাই শ্রমিকের ঝামেলা নাই। নিজেই সবকিছু করতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই শুধু ধান চাষ না করে সবাই বৈচিত্র্যময় ফসল চাষাবাদ করুক। এতে বৈচিত্র্য বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। আমি আমার এবাগান থেকে অনেকের সাথে কলা চারা বিনিময় করেছি।
তিনি আরও জানান, আমাদের মধ্যে থেকে বেশ কিছু কলা জাত হারিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো ধরে রাখার চেষ্টা করছি। আর সে কলাগুলোর বাজার মুল্যও ভালো। তাই আমি বিভিন্ন এলাকা থেকে এ জাতগুলো এনে সংরক্ষণ করেছি। আরো অনেক কলা জাত আছে সেগুলো সংগ্রহে আনার চেষ্টা করছি।’
বর্তমানে বেশ কয়েকটি কলার জাত আমাদের মধ্যে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো বিছাকলা। বিছা কলা দিয়ে গরু ছাগলের বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় হয়। অনেক সময় এ কলা হাট বাজারে খুঁজে পাওয়া যায় না। বর্তমানে শহরেও বিছা কলার চাহিদা অনেক। এছাড়া জ্বীন কলা সেটা হিন্দুদের বিভিন্ন পূজোয় লাগে। এ কলা বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়। এক একটি কলা এক একটি গুণে গুণান্বিত। তাদের আলাদা আলাদা বৈচিত্র্য আছে। কলা চাষ ছা্ড়াও মোমিনুল ইসলাম দেশি জাতের ৬টি ছাগল ও ৫টি ভেড়া পালন করছেন। তার নিজের ২ বিঘার পুকুর রয়েছে। পুকুরে নিজে মাছ চাষ করছেন।