ভেষজ চিকিৎসায় ‘ভুঁইকুমড়া’
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সাড়ে পাঁচশত প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদবৈচিত্র্য রয়েছে। এসকল উদ্ভিদের রয়েছে নানা গুণ। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় যুগ যুগ ধরে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ভেষজ চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহার করে আসছে এসকল নানা উদ্ভিদবৈচিত্র্য। এর মধ্যে ভুঁইকুমড়া একটি অতি পরিচিত নাম। গ্রামীণ চিকিৎসা কাজে ভুঁইকুমড়ার ব্যবহার দেখা যায় অতি প্রাচীনকাল থেকে।
বন-বাদাড়, ঝোপ-জঙ্গল কিংবা পরিত্যক্ত স্থানে এই ভুঁই কুমড়া জন্মে থাকে। ভুঁউকুমড়া এর ইংরেজি নাম (Ipomoea mauritiana)। এটা এক ধরনের লতানো ঔষধি উদ্ভিদ। এরা উপযুক্ত পরিবেশে খুব সহজেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই উদ্ধিদটি লতার মতো করে বড় কোন গাছের সাথে জড়িয়ে থাকে। মাটির নিচে আলুর মতো কুমড়া আকারের কন্দ তৈরি হওয়াতে এবং কুমড়ার মত দেখতে হওয়াতে এটার নাম দেওয়া হয়েছে ভুঁইকুমড়া। এদের পাতা সাধারণত সবুজ রঙের হয় এবং পাতা দেখতে মিষ্টি আলুর পাতার মতো। তবে পাতার চারপাশ গভীরভাবে খাঁজকাটা, লতি পাঁচ থেকে সাত ভাগে বিভক্ত। প্রায় ছয় ইঞ্চি লম্বা বোঁটায় দুই থেকে তিন ইঞ্চি চওড়া গাঢ় বেগুনি রঙের ফুল ও ফল ফোটে। মূলত কুমড়ার শাস ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয়।
ভুঁই কুমড়া একটি ঔষধি উদ্ভিদ হিসেবে গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয়। মাটির নিচের যে কুমড়া হয় এর শাস রোদে শুকিয়ে গুড়া তৈরি করতে হয়। যেসব মায়েদের বুকের দুধ কম হয় তারা এই শুকনা গুড়া পানিতে ভিজিয়ে নিয়মিত খেলে দুধের চাহিদা পূরণ হয়।
ভুঁই কুমড়া সম্পর্কে কবিরাজ অল্পনা রাণী মিস্ত্রী বলেন, “ভেষজ চিকিৎসায় আমার বাড়িতে নানা ধরনের ঔষধি উদ্ভিদ রয়েছে তার মধ্যে ভুইকুমড়া অত্যন্ত এক মূল্যবান উদ্ভিদ। এটি আমি গ্রামের কৃষক শামসুর রহমানের বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে এনে লাগিয়ে রেখেছি, মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে এটি বেশি ব্যবহৃত হয়।”
সোনামুগারী গ্রামের গঙ্গারাম ধীবর, ধূমঘাট গ্রামের শামসুর রহমান বলেন, “ভুইকুমড়া অনেক দামি গাছ। এই গাছে এক ধরনের ম্যাগনেট তৈরি হয়। যেটা বহু দামে বিক্রি করা যায়।”
দেশীয় গাছ গাছড়া ও ঔষধি উদ্ভিবৈচিত্র্যে সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে টিকে থাকবে ভেষজ চিকিৎসা পদ্ধতি, সুরক্ষিত থাকবে বৈচিত্র্য। এ কারণে গ্রামীণ জনপদের অন্যান্য ঔষধি উদ্ভিদবৈচিত্র্যের মতো অতি মূল্যবান ভুঁই কুমড়াকে সুরক্ষা ও সংরক্ষণ জরুরি।