কৃষিক্ষেত্রে ঘন কুয়াশার প্রভাব
কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে অর্পণা ঘাগ্রা
পৌষ মাঘ মাসে কুয়াশা হবেই এটাই স্বাভাবিক, এটাই মানুষের চিরাচরিত বিশ্বাস ও ধারণা। কিন্তু এই বছরের কুয়াশা আর বিগত বছরের কুয়াশার মধ্যে পার্থক্য আছে বলে অনেকেই মনে করেন। বিশেষভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক কুয়াশার কারণে কৃষকগণ কৃষিক্ষেত্রে নানান ধরনের সমস্যার সন্মূখীন হচ্ছেন। যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো ধানের বীজসহ শীতকালীন অন্যান্য শশ্য ও ফসল।
ঘন কুয়াশার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত একজন কৃষক নাগঢড়া গ্রামের নিপেন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, “আমার ৩২ শতাংশ জমির জালা (চারা) ঘন কূয়াশার কারণে হলুদ হইয়া যায়তাছে। পাতাগুলা পুইড়া যায়তাছে। জায়গায় জায়গায় পচতাছে। পোঁকার আক্রমণও বাইড়া গেছে। এই জালাগুলা হলুদ হওয়ার কথা আছিল চৈত্র মাসে, আর বাট্টি হইলে। কিন্তু এই বছর কুয়াশা বেশি দিতাছে। হেই কারণে কচি জালাগুলাও হলুদ হইতাছে।” তিনি আরো বলেন, “এই জালাগুলা লাগাইলে ধান গাছে সবুজ পাতা বাইর হইতে দেরি অয়।”
রংশিংপুর গ্রামের কৃষাণী জয়ন্তী রানী সরকার প্রায় ৮ শতাংশ জমিতে গোল আলু চাষ করেছেন। এই আলু তিনি চৈত্র মাসের প্রথমদিকে তুলতেন। কিন্তু এই বছর কুয়াশার কারণে অধিকাংশ আলু গাছ পচে মরে যাচ্ছে। মারা যাওয়া গাছে কোন ফলন হয়নি। তিনি বলেন, “কুয়াশাগুলা পাতাগুলারে ভিজাইয়া রাখে। কুয়াশা খুব বেশি ঠান্ডা হওয়ায় আলু গাছ সহ্য করতে পারতাছেনা। তাই গাছগুলা মারা যায়তাছে। গাছের শিকরগুলা পইচা গেছে।”
চান্দুয়াইল গ্রামের কৃষক আব্দুল বাতেন ৬০ শতাংশ জমিতে মরিচ, ৪০ শতাংশ জমিতে টমেটো ও ৩২ শতাংশ জমিতে বাণিজ্যিকভাবে শশা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “এই সময়টা টমেটো আর মরিচ গাছে ফুল ধরার উপযুক্ত সময় আছিল। ফুল ধরতে শুরুও করতেছিল। কিন্তু বেশি কুয়াশা পড়াতে ফুল আসা কইম্যা গেছে। গাছে যে ফুল আছে তা থেইক্যাও ফল হইতাছেনা। মরিচ গাছে জাব পোকা বেশি আক্রমণ করতাছে। টমেটো গাছ ও ফলেও পচন ধরা বাড়তাছে। আর শশা গাছেতো সবেমাত্র ফুল আসতে শুরু করেছিল।” তিনি আরও বলেন, “এমন সময়ই শশা গাছের পাতা হলুদ হয়তাছে। পাতাগুলা পইচা যায়তাছে। কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ কইরা অনেক ঔষধ দিসি কিন্তু কোন কামে লাগে নাই। বাগানের এই অবস্থা দেইখ্যা খালি কষ্ট পাইতাছি।”
চান্দুয়াইল গ্রামের কৃষক আব্দুল বাতেনের সবজি বাগান পরিদর্শনকালীন উপ সহকারী কৃষি অফিসার মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ঘন কুয়াশার পর হালকা রৌদ্র শাক সবজি গাছে ছত্রাক ও পোঁকা আক্রমণের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই বছর কৃষিক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এবারের প্রকৃতি পূর্বের তুলনায় কিছুটা হলেও ভিন্ন। তাই ফসলে নতুন নতুন পোকার আক্রমণও দেখা দিচ্ছে। এসব থেকে ফসল রক্ষা করতে কৃষকদেরকে বারবার নতুন নতুন পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।” অপর উপসহকারী কৃষি অফিসার সোহেল রানা কৃষকদেরকে যেকোন ফসলের জমিতে আলো, বাতাস চলাচল করার ব্যবস্থা রাখার ও জমিতে বোর্দো মিক্সচার ব্যবহার করার পরামর্শ প্রদান করেন।