গোল আলুর মড়ক নিয়ন্ত্রণে বর্দোমিকশ্চার
মানিকগঞ্জ থেকে মো. মাসুদুর রহমান
মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার গোলই গ্রামের কৃষাণী সেলিনা খাতুন (৪০) চলতি মৌসুমে নিজ বসতবাড়ি সংলগ্ন ৩ শতক পালানী জমিতে গোল আলুর মড়ক বা নাবি ধ্বসা রোগ দমনে বোর্দো মিকশ্চার ব্যবহার করে সফল হয়েছেন।
গোল আলু ফসল উৎপাদনে রোগবালাই অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। তাই রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ভালো ফলন আশা করা সম্ভব। সেলিনা পর্যাপ্ত পরিমাণে কেঁচো কম্পোস্ট ও আর্বজনা পচা সার প্রয়োগ করে জমি ভালোভাবে চাষ করে পৌষ মাসের ১ম দিকে স্থানীয় জাতের আলু বীজ সংগ্রহ ও বপন করেন। বারসিক-মানিকগঞ্জ রিসোর্স সেন্টার তাকে স্থানীয় জাতের আলু বীজ সহায়তা দেয়।
আলু চাষাবাদ আবহাওয়ার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। স্থানীয় এলাকায় মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীত পড়ায় কিছু কিছু আলু গাছের পাতার কিনারা থেকে শুকিয়ে মারা যেতে থাকে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে গিয়ে গাছের পাতা, কান্ড শুকিয়ে মারা যেতে থাকে।এলাকার কৃষকরা এই রোগকে গোল আলুর মড়ক রোগ বলে অভিহিত করে থাকেন।
সেলিনা খাতুন আক্রান্ত গাছগুলো জমি থেকে তুলে ফেলেন এবং রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে ৫০ গ্রাম পাথর চুন, ৫০ গ্রাম তুঁতে মাটির পাত্রে আলাদা আলাদাভাবে এক রাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন ৫ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে উক্ত মিশ্রণ (যা বর্দোমিকশ্চার নামে পরিচিত) রোদের সময় ভালভাবে ছিটিয়ে দেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে ১ বার করে নিয়মিত ১ মাস এই স্প্রে প্রয়োগ করায় নতুন কোন গাছ আর আক্রান্ত হয়নি। তিনি বলেন, “বর্দোমিকশ্চার খুব সহজেই তৈরি করা যায়। আক্রমণের আগে দিতে পারলে হয়তো আক্রমণই হতো না।”
সর্বোপরি রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত আলু উৎপাদন করতে পারায় তিনি খুবই খুশি। তিনি ফেব্রুয়ারি মাসের ২য় সপ্তাহে তাঁর জমি থেকে ৬০ কেজি আলু সংগ্রহ করেন। উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম হলেও স্থানীয় জাতের আলুতে রোগ ও পোকার তেমন আক্রমণ হয় না। পাশাপাশি সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো ঘরের মাচায় প্রায় ১ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যায়। সেলিনা আশা করেন, এই আলু সারাবছর তার পরিবারের চাহিদা মিটবে এবং আগামী বছর বীজ হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
আলুর মড়ক নিয়ন্ত্রণে ব্যয় সাশ্রয়ী ও সহজপ্রাপ্য উপকরণে তৈরি এই বোর্দো মিকশ্চার রাসায়নিক কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার কমিয়ে যেমন পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে তেমনি উৎপাদন খরচ কমাতেও সহায়ক হবে।