গরু চরিয়ে জীবন চলে সিরাজুল ইসলামের

গরু চরিয়ে জীবন চলে সিরাজুল ইসলামের

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) থেকে মফিজুর রহমান

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের সোরা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম সিরাজ (৭২)। পেশায় বাবুর্চি ছিলেন। কিন্তু রান্না করতে করতে দু’চোখে সমস্যা দেখা দেওয়ায় পেশা ধরে রাখতে পারেননি। দুটো চোখই অপারেশন করায় কোন কঠিন কাজও করতে পারছিলেন না। তখন জীবন-জীবিকার তাগিদে বেছে নেন গরু রাখালের কাজ। ১৫ বছর ধরেই অন্যের গরু চরিয়ে জীবন চলছে তার। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে টিকে রয়েছেন তিনি।

7

সিরাজুল ইসলাম বলেন, “সকালের খাবার খেয়ে ৭টার দিকে সোরা গ্রাম থেকে গরু নেওয়া শুরু করি। রাস্তা দিয়ে আসার সময় আমাকে দেখে মালিকেরা গরু ছেড়ে দেন। সারাদিন মাঠে মাঠে গরু চরিয়ে বিকাল ৫টার সময় আবার গরুর পাল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেই। পথে যেতে যেতে যার গরু তার বাড়িতে চলে যায়। সকালে আসার সময় এক বোতল পানি নিয়ে আসি।” তিনি আরও বলেন, “সারাদিন রোদে থাকি বলে পানি গরম হয়ে যায়। তারপরও তাই দিয়েই মেটায় পিপাসা। অতিরিক্ত পানি পিপাসা লাগলে মাঠের পাশর্^বর্তী কোন পুকুরে নেমে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে বসে থাকি। ভিজা কাপড়েই কেটে যায় দিন। সকালে খেয়ে গরু নিয়ে বের হই আর বিকালে গরু বাড়ি বাড়ি পৌছে দিতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।” তিনি বলেন, “বাড়ি গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। এভাবে চলতে থাকে সারা মাস। এক মাস গরু চরালে মালিকেরা গরু প্রতি ১০০ টাকা করে দেয়। ১০০ গরু চরিয়ে যা পায় তা দিয়েই চলে সংসার। তবে, সবাই আবার ঠিক মত টাকা দেয় না।”
11
তিনি আরো বলেন, “বছরের মাঘ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত মানিকখালী বিলে গরু চরিয়ে ঘাস খাওয়াতে পারি। কিন্তু বাকি সময় এ কাজ করা যায় না। তখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে ডিম, হাঁস-মুরগি ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করি। যা আয় হয়, তা দিয়ে কোন রকম সংসার চলে যায়।

সিরাজুল ইসলাম সিরাজ কবিতার ছলে বলেন,

‘নিদারুণ নিয়তি, এ কেমন তোমার খেয়াল
নিজ কর্ম ফলে, না ভাগ্য দোষে হলাম গরুর রাখাল?
গরু চরাই মাঠে মাঠে, সকাল দুপুর বেলা
মনের মাঝের স্বপ্নগুলো মিছে করে খেলা।
স্বপ্ন আমার বিলাপ করে, নীরব অশ্রু নিয়ে
কূল হারানো জীবন আমার, থামবে কোথায় গিয়ে।
জীবন পথে যা ভেবেছি, হয়ে গেছে আজ ভূল
জীবন আমার গন্ধবিহীন, যেন কচুরী ফুল।
ভাগ্য দোষে রাখাল আমি, চরাই গরুর পাল
বিধাতা আমার পৃথিবীতে পাঠাতে ছিল বে-খেয়াল।

10

শুধু সিরাজুল ইসলাম নয়, এ অঞ্চলের মাটি ও পানির লবণাক্ত বৈশিষ্ট্য এবং এলাকার পরিবেশগত ভিন্নতা এখানকার জীবন ও পেশায় এনেছে নানা বৈচিত্র্য। টিকে থাকাকে করে তুলেছে অনেক বেশি সংগ্রামমুখর। তাই এখানকার জনজীবন, পেশা, ভাষা, সংস্কৃতি, প্রাণসম্পদ এবং বাস্তুসংস্থানের বৈচিত্র্য জানা ও এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা করা উচিত।
কেননা শুধু প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ নয়, চলমান জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় পুরো বিশ্বকে সংকটে ফেলে দিয়েছে। যা মোকাবেলা করে টিকে থাকছে সিরাজুল ইসলামদের মতো অনেকেই।

 

happy wheels 2

Comments