কেঁচো আমার একমাত্র সম্বল
রাজশাহী থেকে ব্রজেন্দ্র নাথ
রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদের কারিগর পাড়ার নারী কৃষক মোসাঃ বিলকিস বেগম (৪৫)। তাঁর স্বামী মো রসিদ আলী (৪৫)। বিলকিস বেগমের বসত বাড়ির পরিমাণ ১০কাঠা এবং আবাদী জমির পরিমাণ ২বিঘা। বিলকিস বেগমের পরিবারে সদস্য সংখ্যা। দরিদ্রতার কারণে তাঁর আবাদী ২বিঘা জমি ২০ বছর ধরে বন্ধক রয়েছে। সংসারের অভাব অনটনের কারণে তার আবাদযোগ্য জমিটি বন্ধক দিয়েছেন বলে জানান। বর্তমানে তার স্বামী মো. রসিদ আলী লিভারের অসুখে ভুগছেন। সংসারে আয় রোজগারের লোক একমাত্র তার ছেলে।
অভাব অনটনে ভরা এই সংসারটাকে টিকিয়ে রাখার মতো তার ছেলের একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা। তাই মোসাঃ বিলকিস বেগম সংসারের অভাব অনটনের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য ২০১৬ সালে নিজেই উদ্যোগ নিলেন ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করার। প্রথমে একটি চাড়ি দিয়ে শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্ট । প্রায় দুই বছরের বেশি সময়ে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বর্তমান ভার্মি কম্পোস্ট এর চারির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬০টি হলো। একসময় গরু থাকলেও এখন নেই। তারপরও ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করা ছেড়ে দেননি।
তিনি আশপাশের মানুষের কাছ থেকে তিনি ৩০ টাকা দরে গোবর কিনে নিজে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করেন। বর্তমান প্রতিমাসে তার ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১০ মণ। নিজের সবজি ক্ষেতে ব্যবহার করেন। আবার তা বিক্রিও করেন। বর্তমান তার বেশিরভাগ সার বিক্রি করেন। বিগত দুই বছরে তিনি ২০ মণ ভার্মি কম্পোস্ট বিক্রি করে আয় করেছেন দশ হাজার টাকা। আবার কেঁচো বিক্রি করেও আয় করেছেন একই পরিমাণ টাকা। আশপাশের কৃষক এবং মৎস চাষীরা এই ভার্মি কম্পোস্ট কিনে ব্যবহার করেন। মৎসচাষে ভার্মি কম্পোস্ট দিলে মাছ দ্রুত বেড়ে উঠে। এছাড়াও পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ উপায়ে মাছ চাষ ভালো হয় বলে অনেক মৎচাষী এখন ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করেন। বিলকিস বেগমের কাছ থেকে পবা উপজেলা কৃষি কর্মকতার কার্যালয় কেঁচো কিনে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রসারণ করছেন। বর্তমানে তাঁর বাড়িতে এখনো বাড়িতে ৮ মণ ভার্মি কম্পোস্ট সার রয়েছে।
ছোট্ট একটি ঘরের মধ্যে শুরু করে বর্তমান চারির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় জায়গার সংকুলান হচ্ছে না বিলকিস বেগমের। তাঁর এখন আরও সেড বা জায়গা করার দরকার। ভার্মি কম্পোস্ট থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসারের খরচ চালান বলে একটি ভালো এবং প্রসারিত সেড তৈরি করতে পারছেন না। প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রায় ২০টি চারি এখনো বাঁশের ঝারের নীচে ঢেকে রাখেন। তিনি বলেন, “এখন যদিও এগুলো ঢেকে রেখেছি কিন্তু বর্ষা মৌসুম আসলে সমস্যা হবে। তাই দ্রুত সেড বা ঘর তৈরি করা প্রয়োজন।” তাঁর এই কাজের আগ্রহ দেখে বিভিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করেছে কিন্তু তাঁর সহযোগী আরো দরকার বলে জানান।
বিলকিস বেগম সরকারি সহযোগিতা আশা করেন। ঘরের মধ্যে মাচা করে চারিগুলো রাখলে ভালো থাকবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, “বর্তমান মাসে যেভাবে উৎপাদন বেড়েছে সেইভাবে বিক্রি হচ্ছে না। বর্তমান প্রায় ১০ মণ কেঁচো সার আটকে আছে। এটি বিক্রি করতে পারলে আমার অর্থের সংস্থান হবে।” তিনি আরও বলেন, “মানুষ এখনো ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারে খুব বেশি সচেতন হয়নি। আবার আমার এই সার তৈরির বিষয়টি অনেকে জানে না।” তাই প্রচারণা এবং কিছু সাইনবোর্ড তৈরিতে সহায়তা করার কথা জানান। তিনি আগামীতে আরো বেশি করে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করতে চান। তিনি বলেন, “বর্তমানে আমার এমন হয়েছে যে, এই কেঁচোই আমার একমাত্র সম্বল।”