বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি ও প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় পলিথিন নিষিদ্ধের দাবিতে মানববন্ধন
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৮ উপলক্ষে আজ ০৪ জুন সকাল ১০ ঘটিকায় রাজশাহী জিরো পয়েন্ট চত্বরে বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি ও প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিষিদ্ধ পলিথিনের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধে যথাযথ আইন প্রয়োগের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক, তরুণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্র ও জিরো পয়েন্ট সিক্স জিআরজেড রাইডারস এর আয়োজনে উক্ত মানববন্ধনে সর্বস্তরের সচেতন মানুষ বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশ, মাটি ও প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষার দাবিতে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে মূল চার দফা দাবি সম্মলিত মুল প্রবন্ধ পাঠ করেন এন্টি প্লাস্টিক ক্যাম্পেইন এর তরুণ সমন্বয়ক ও বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্র’র সভাপতি জাওয়াদ আহমেদ রাফি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেভ দ্যা ন্যাচারের সভাপতি মিজানুর রহমান, জিরো পয়েন্ট সিক্স রাইডারস এর সভাপতি জুবায়ের হোসেন সহ স্থানীয় তরুণ ও নানা শ্রেণি পেশার ৬৫ জন মানুষ।
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সবুজ নগরী রাজশাহী শহরে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিনের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। একই সাথে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিতেও মারাত্বক ক্ষতিকারক পলিথিন নানা ভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এই অপচনশীল পলিথিন মাটির সাথে মিশে মাটির গুনাগুণ- উর্বরতা, পরিবেশ এবং প্রাণবৈচিত্র্য বিনষ্ট করে দিচ্ছে। বর্তমান নগরীতে এই পলিথিনের কারনে জলাবদ্ধতারও সৃষ্টি হতে দেখা যায়। অন্যদিকে নিষিদ্ধ এই পলিথিন আগুণে পুড়ালে সেটা থেকে যে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়, তা বাযুর সাথে মিশে পরিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্যের অপূরনীয় ক্ষতিসাধন করে। কৃষি প্রধান বরেন্দ্র অঞ্চলে ফলের বাগানসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অপরিকল্পিত ও অসচেতনভাবে পলিথিন ব্যবহারের ফলে সেই পলিথিন মাটি ও পরিবেশর সাথে মিশে গিয়ে তা মারাত্মক সংকট তৈরী করছে।
অংশগ্রহণকারীগণ আরো বলেন, রাজশাহী মহানগরীসহ গোটা বরেন্দ্র অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে এ নিষিদ্ধ পলিথিন প্রকাশ্যে বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন মজুদ বিতরণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও প্রায় ২২-২৩ বছর আগে করা পরিবেশ সংরক্ষন আইন ২০০২ সালে সংশোধনী এনে পলিথিনের উৎপাদন ও বাজার জাত নিষিদ্ধ করা হয়। আইনে বলা হচ্ছে, “সরকার নির্ধারিত পলিথিন সামগ্রীক উৎপাদন, আমদানী ও বাজারজাত করণে প্রথম অপরাধের দায়ে অনধিক ২ (দুই) বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ২(দুই) লাখ টাকা অর্থদন্ড (জরিমানা) বা উভয় দন্ড এবং পরবর্তীতে প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে অন্যূন ২ বছর, অনধিক ১০ বছরের কারাদন্ড বা অন্যূন ২ লাখ টাকা, অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড (জরিমানা) বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন অপরাধীরা। বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের দায়ে অনধিক ১ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড (জরিমানা) বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।”
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীগণ দাবি করেন, আমরা কোন ক্ষেত্রেই মাঠ পর্যায়ে পলিথিনের উৎপাদন, বাজারজাত ও ব্যবহার নিষিদ্ধের জন্যে আইনের যথাযথ প্রয়োগ দেখিনা। আমরা চাই বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অ্ঞ্চলের পরিবেশ ও প্রাণ বৈচিত্র্য সুরক্ষা করার জন্য সরকারী ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন আইন মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হোক এবং বরেন্দ্র অঞ্চলকে পলিথিন মুক্ত করা হোক ।
মানববন্ধনে অচিরেই সবুজ শহর রাজশাহীকে পলিথিন মুক্ত, বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি ও প্রাণ বৈচিত্র্য সুরক্ষায় কৃষিতে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে, পলিথিন মুক্ত করণে যথাযথ সকল আইন প্রয়োগসহ নিয়মিত ভাবে প্রসাশনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করার দাবি তুলে ধরেন। স্থানীয় সংগঠন সেভ দ্যা ন্যাচারের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, “রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশ, মাটির উর্বরতা ও প্রাণ বৈচিত্র্য সুরক্ষায় অবিলম্বে আমাদের দাবী সমূহ বাস্তবায়ন করতে হবে।” পরিবেশ অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য যে, এবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৮ এর জাতিসংঘ ঘোষিত মূল শ্লোগান Beat plastic pollution ‘পলিথিন দূষণ হ্রাস করি’ । উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে গণসচেতনতা এবং মানবন্ধনের আয়োজন করে রাজশাহীর সচেতন মহল।