খরার কবলে বরেন্দ্রের আমন
তানোর, রাজশাহী থেকে মিজানুর রহমান
খরার কবলে পড়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রধান আবাদ আমন। বৃষ্টিনির্ভর এই আবাদ এ বছর হয়ে পড়েছে সেচনির্ভর। যেসব এলাকায় সেচ সুবিধা নেই সেখানকার কৃষকরা এখনও তাকিয়ে রয়েছেন আকাশপানে।তবে আপাতত বৃষ্টির সুখবর দিতে পারছে না আবহাওয়া দফতর। ঢাকা আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ু চলে যাওয়ায় চলতি অক্টোবরে প্রথম সপ্তাহেই বিদায় নেবে বর্ষা। এরপর প্রকৃতিতে আগমন ঘটবে শীতের। ফলে সামনে বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে অক্টোবরজুড়ে রাজশাহীতে ১০০ থেকে ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া দফতর। এর আগে সেপ্টেম্বরে দুর্বল মৌসুমী বায়ুর কারণে বৃষ্টিপাত কমেছে এই অঞ্চলে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তাপমাত্রা। আর এ কারণেই মধ্য সেপ্টেম্বরে এ অঞ্চলের কোথাও কোথাও মৃদু তাপপ্রবাহ দেখা দেয়। ভারি বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নামেনি তাপমাত্রার পারদ।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানিয়েছেন, চলতি অক্টোবরের এই তিন দিনে রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত নেই। এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে এ অঞ্চলে ১১৮ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৩৩ দশমিক ৪ মিলিমিটার। এছাড়া এ বছরের জুলাই ও আগস্টে রেকর্ড করা হয় ৩২৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। কিন্তু গত বছরের এই দুই মাসে বৃষ্টিপাত প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল। আবহাওয়া অফিস বলছে গত বছরের এই দুই মাসে ৬১৩ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এই অঞ্চলে। এছাড়া গত এক সপ্তাহ থেকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠানামা করেছে ৩৪ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। আর এতেই বিপাকে পড়েছে বরেন্দ্র কৃষি।
এদিকে কৃষি দফতর বলছে, সেচ সুবিধা থাকায় খরার কবলে পড়েনি আমন আবাদ। কৃষকরা যে যার মতো সেচ দিচ্ছেন। তবে এতে ফসলের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। তবে মাঠের চিত্র বলছে অন্যকথা। বিস্তীর্ণ বরেন্দ্র অঞ্চল এখনো আসেনি সেচের আওতায়। কোথাও কোথাও নেই পুকুর কিংবা ডোবা। ফলে এসব অঞ্চলের কৃষকরা বৃষ্টির জন্য এখনও চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় রয়েছেন। কোথাও কোথাও বৃষ্টির জন্য ইস্তেস্কার নামাজ আদায়ের খবরও পাওয়া গেছে। বরেন্দ্র খ্যাত রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, গোমস্তাপুর, নওগাঁর নিয়ামতপুর, নিতপুর, পোরশা ও সাপাহার এলাকায় খরার প্রভাব পড়েছে ব্যাপক। এসব অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমন খেত ফেটে চৌচির। যেখানে সুবিধা রয়েছে, সেখানে কৃষকদের গভীর নলকূপ থেকে সেচ দিতে দেখা গেছে। আর যাদের এই সুবিধাও নেই তারা এখনও বৃষ্টির প্রতিক্ষায়।
কৃষকরা বলছেন, দিন দিন খরায় ফসলের মাঠ শুকিয়ে যাচ্ছে। অথচ মাঠজুড়ে এখন ফসল দানা বাঁধার সময়। কোথাও কোথাও দুধ অবস্থায় আছে। এই অবস্থায় খেতে সেচ না দেয়া গেলে ফসল চিটা হয়ে যাবে। উপায় না পেয়ে খরচের কথা চিন্তা না করেই খেতে সেচ দিচ্ছেন তারা। এদিকে গত মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীর তানোরের মুন্ডুমালা কলেজ মাঠে বৃষ্টি কামনায় ইস্তেস্কার নামাজে অংশ নেন এলাকার মানুষ। বুধবার বিশেষ এই নামাজ হয় পোরশা উপজেলার সরাইগাছি ঈদগাহে। নামাজে অংশ নিতে এর আগে এলাকায় ব্যাপক প্রচারণাও চালানো হয়। জামাতে উপস্থিতিও ছিলো চোখে পড়ার মতো।
তানোর পৌরশহর এলাকার কৃষক ও ধান গবেষক নূর মোহাম্মদ জানান, খরায় আমন টেকানো এখন দায়। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমন উৎপাদন অর্ধেকে নেমে যাবে। তবে কৃষকদের এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি জানিয়েছেন, বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়েই সেচের জন্য গভীর নলকূপ রয়েছে। ফলে আমন আবাদ খরার কবলে পড়েছে এটি বলার সুযোগ নেই। তবে উৎপাদন খরচ বাড়ছে এটি ঠিক।