প্রাকৃতিক খাদ্যভান্ডারকে রক্ষা রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার
কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
নেত্রকোনা উপজেলার কলমাকান্দা উপজেলার কালাপানি ও লেঙ্গুরা গ্রামের যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষে সম্প্রতি প্রাকৃতিক খাদ্যের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলায় প্রদর্শিত হয়েছে তিনটি জাতি গোষ্ঠীর (গারো, হাজং ও বাঙালি) প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করা শাকসব্জি।
মেলায় গারোরা প্রদর্শন করেছেন পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা প্রায় ৫৬ জাতের শাকসব্জি। এই শাকসব্জিগুলো তাঁরা কোনটা তারকারি হিসেবে রান্না করে খান, কোনটা আবার সেদ্ধ করে খান। প্রকৃতির অফূরন্ত খাদ্য ভান্ডার থেকে তারা প্রতিদিনই এসব শাকসব্জি সংগ্রহ করে ব্যবহার করছেন। শাকসব্জির পাশাপাশি গারোরা দুটি স্টলে প্রদর্শন করেছেন ছড়া থেকে কুড়িয়ে আনা কিছু শামুক। এ ব্যপারে পলিনূস নকরেক বলেন, ‘প্রকৃতি থেকে পাওয়া খাদ্যের মেলায় শুধু শাকসব্জি কেন শামুকসহ আরো জলজ কিছু মাছও প্রদর্শন করা উচিৎ ছিল কিন্তু আমরা সংগ্রহ করতে পারি নাই। আমরা গারো হাজংরা শামুক প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে তরকারী হিসেবে খাই। এর জন্যই শামুকও প্রদর্শন করা হয়েছে।’
মেলায় হাজংরা একটি স্টলের মধ্যে তাদের পণ্যসমাগ্রী প্রদর্শন করেছেন। তারাও প্রকৃতি থেকে পাওয়া মোট ৪০টির মত বিভিন্ন ধরণের শাকসব্জি প্রদর্শন করেছেন। গারোদের সাথে হাজংদের প্রকৃতি থেকে পাওয়া খাদ্যের ধরণ প্রায়ই একই দেখা গেছে। তবে খাদ্য প্রস্তুত প্রক্রিয়াটি একটু ভিন্ন বলে মত প্রকাশ করেন নারায়ন হাজং।
মেলায় বাঙালিরা একটি স্টলে তাদের খাদ্যগুলো প্রদর্শন করেছেন। তাঁরাও চেষ্টা করেছেন প্রকৃতি থেকে পাওয়া বিভিন্ন শাকসব্জি প্রদর্শন করতে। প্রকৃতির অফুরন্ত খাদ্যভান্ডার থেকে পাওয়া বিভিন্ন খাদ্য তালিকায় গারো ও হাজংদের তুলনায় বাঙালিদের সংগ্রহ কম লক্ষ্য করা গেছে। এই প্রসঙ্গে লেঙ্গুরা গ্রাম থেকে আসা একজন প্রবীণ ব্যক্তি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মেলায় গারো ও হাজংরা যে ধরণের শাকসব্জি প্রদর্শন করেছেন এর মধ্যে অনেক শাকসব্জি আমি এর আগে দেখেছি কিন্তু এগুলো যে শাকসব্জি হিসেবে খাওয়া যায় তা আমি জানতেন না। এখানে এসে আমি প্রকৃতি থেকে পাওয়া অনেকগুলো খাদ্যের সাথে পরিচিত হতে পেরেছি।’
প্রকৃতির খাদ্য ভান্ডার এখন দিন দিন কমে যাচ্ছে। পাহাড়েও এখন তেমন শাকসব্জি পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান অংশগ্রহণকারীরা। এ বিষয়ে পারুল দারিং বলেন, ‘পাহাড়ে এখন সুপারী, কচু, কাসাবা, রাবার, কাজুবাদাম, ও বনজ গাছের বাগান করার ফলে সব কিছু ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।’ এছাড়ার পাহাড় কেটে অবকাঠামো উন্নয়নের ফলেও এগুলো নষ্ট হয়েঠে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। অন্যদিকে দায়ূদ রংদী বলেন, ‘আমরা যারা বয়স্ক তারা এইসব লতাপাতা সম্পর্কে জানি তাই আমরা রক্ষা করতে চেষ্টা করি। কিন্তু যারা জানেন না বিশেষ করে নতুন প্রজন্মরা না জেনে এগুলো রক্ষা করার প্রয়োজন মনে করে না। প্রকৃতির খাদ্যভান্ডারটাকে সঠিক রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার।’