কলমি শাক দামে স্বস্তা পুষ্টিগুণে ভরা
মো. মনিরুজ্জামান ফারুক, ভাঙ্গুড়া (পাবনা) থেকে
দামে খুব স্বস্তা অথচ পুষ্টিগুণে ভরা সবজি ‘কলমি শাক’। যত্রতত্রভাবে বেড়ে ওঠে বলে এ সবজিটির কদর আমাদের দেশে খুব কম। অথচ এতে রয়েছে নানা গুণাগুণ। যা আমাদের শরীরের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সক্ষম। কলমি শাক মূলত ভাজি করে খাওয়া হয়। এছাড়া ভর্তা ও মাছ দিয়ে রান্না করেও খাওয়া যায়। হাট-বাজারে খুব স্বস্তায় কলমি শাক বিক্রি হয়ে থাকে। নিম্ন আয়ের মানুষেরা সহজেই এ সবজিটি খেয়ে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারেন।
কলমি শাক চাষ খুব লাভজনক। নামমাত্র খরচে এ শাক একবার চাষ করে কয়েক দফা ফলন পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন কলমি শাকের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। এটির উপকারিতার কথা ভেবে মানুষের খাদ্য পুষ্টির তালিকায় দিন দিন কলমি শাকের ব্যবহার বাড়ছে।
মুক্তকোষ উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, কলমি শাক (Ipomoea aquatica) এক প্রকারের অর্ধ-জলজ উষ্ণমন্ডলীয় লতা। ইংরেজিতে একে বলে water spinach, river spinach, water morning glory, water convolvulus, Chinese spinach, Swamp cabbage এবং এশিয়ার কিছু অঞ্চলে Kangkong।
কলমি শাক পানিতে কিংবা ভেজা মাটিতে জন্মে থাকে। পাতা সবুজ রঙের। ফুলের রঙ সাধারণত সাদা এবং গোড়ার দিক বেগুনি। ফুলে বীজ হয়। বীজ থেকেও গাছ লাগানো যায়। জানা যায়, প্রতি ১০০ গ্রাম কলমি শাকে রয়েছে ২৯ কিলোক্যালোরি, সোডিয়াম ১১৩ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৩১২ মিলিগ্রাম, খাদ্যআঁশ ২.১ গ্রাম, প্রোটিন ৩ গ্রাম, কর্বোহাইড্রেটস ৫.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৫০ মিলিগ্রাম, লৌহ ২.৫ মিলিগ্রাম, জলীয় অংশ ৮৯.৭ গ্রাম।
আসুন জেনে নেই কলমি শাকের নানা উপকারিতার কথা। কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকায় শরীরের হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। এ শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। বসন্ত রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কলমি শাক ভালো কাজ করে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে লৌহ থাকায় রক্ত শূন্যতার রোগীদের জন্য বেশ উপকারি। নিয়মিত কলমি শাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। রাত কানা রোগ হলে সাথে সাথে কলমি শাক কয়েক সপ্তাহ প্রতিদিন একবেলা ভাজি অথবা রান্না করে রোগীকে খেতে দিলে রোগ ভালো হয়। হাত-পা বা শরীর জ্বালা করলে কলমী শাকের রসের সাথে দুধ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে এক সপ্তাহ খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। পিঁপড়া, মৌমাছি, বিছা বা কোন পোকা-মাকড় কামড়ালে কলমি শাকের পাতা ডগাসহ রস করে লাগালে যন্ত্রণা কমে। আমাশয় হলে কলমী পাতার রসের সঙ্গে আখের গুড়া মিশিয়ে শরবত বানিয়ে সকাল-বিকাল নিয়মিত খেলে আমাশা ভাল হয়। এছাড়া কলমি শাক চোখের জন্য বিশেষ উপকারী।
কলমি শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যশক্তি থাকায় শারীরিক দুর্বলতা দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। কলমিশাক মূলত আঁশজাতীয় খাবার। তাই শরীরের খাবার হজমের জন্য কলমি শাক বিশেষ উপকারী। কলমি শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে লৌহ থাকায় এ শাক দেহের রক্তশূন্যতায় দারুণ কাজ করে।