প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাশে আমরা

সাতক্ষীরা শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল

মানুষ সামাজিক জীব আর পৃথিবীতে প্রত্যেকটি জীব সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। এটা সেই পৃথিবী সৃষ্টির আদিকাল থেকে দেখা যায়। প্রত্যেকটা জীব পৃথিবীতে বসবাস করলেও আমাদের মনুষ্য জাতির মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য। সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে সকল মানুষকে সমান করে না পাঠালেও প্রত্যেকের আছে নিজস্ব শক্তি, সামর্ত ও সক্ষমতা, যা দিয়ে সে সমাজে পরিবারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে আমরা অনেক সময় সেই সব অবদানকে ভুলে যাই বা তাদেরকে তাচ্ছিল্য মনে করি। কোন একজন প্রবীণ হয়ে গেলে তাকেও প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ফেলছি আর যে প্রতিবন্ধী তাকে তো অনেক আগেই প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধী মানে সে অক্ষম সে কিছু করতে পারে না। আমাদেরকে সেই বেড়া জাল থেকে বের হতে হবে।

pic-3
আজ যে যুবক বা নবীন তাকেও যে একদিন প্রবীণ হতে হবে সেটা তাকে বুঝতে হবে। আবার যে প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে জন্ম নিয়েছে সেও কিন্তু তার নিজের মতো করে চলতে পারে তার সেই সক্ষমতা আছে সে ভিন্নভাবে সক্ষম। প্রত্যেক মানুষ সমাজের অংশ। তেমনি প্রতিবন্ধীরা এ সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারাও দেশ গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। তারাও সুযোগ পেলে নিজের দক্ষতা প্রকাশ করতে পারে, তার বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। তাদের বাদ দিয়ে কখনোও ভালো কিছু আশা করা সম্ভব নয়।

pic-1

২০০৯ সাল থেকে শ্যামনগর উপজেলায় কৈখালী ইউনিয়নে জয়াখালী গ্রামের নাজমুননাহার এর প্রচেষ্টার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে এবং নারী নেতৃত্ব বিকাশের জন্য জয়াখালী নারী সংগঠন তৈরি হয়। তৈরির পর থেকে প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সেবা আদায় তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল (২৮ জানুয়ারি) বারসিক’র উদ্যোগে স্থানীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের জয়াখালী নারী সংগঠনের কার্যালয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে “প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাশে আমরা” বিষয়ক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। জয়াখালী নারী সংগঠনের সভানেত্রী নাজমুননাহার বেগমের সভাপত্বিতে ও বারসিক কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ মন্ডলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্টানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নাচ, গান, গজল, কবিতা আবৃত্তি, নিজের জীবনের গল্প উপস্থাপন করেন।

pic-5

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরবর্তী আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সমাজ সেবক লিয়াকাত আলী, উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির সদস্য সাংবাদিক শাহীন ইসলাম, কৃষাণী শিরিনা পারভীন, নারী সংগঠনের সভানেত্রী নাজমুননাহার, প্রবীণ প্রতিবন্ধী সুধান্য মন্ডল ও বারসিক কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ জোয়ারদার ও মারুফ হোসেন মিলনসহ প্রমুখ। আলোচকরা বলেন, ‘এখন তো আর প্রবীণ ও প্রতিবন্তীদেও নিয়ে কেউ ভাবে না। তাদেরকে বাদপড়ার দলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের একাকীত্ব দূর করতে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। তাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে। আর এ দায়িত্ব আমাদের পরিবার থেকে গ্রহণ করতে হবে।”

pic-2

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা জীবনে কোন দিন এরকম অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা কোন দিন চিন্তা করিনি। আমাদেরকে যে মানুষ মনে রাখে মূল্যায়ন করে তা আজকে এ অনুষ্টানে এসে বুঝতে পেরেছি।” অন্য অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ‘শ্যামনগর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী কৈখালী ইউনিয়নের জয়াখালী গ্রামে। প্রতিবন্ধীদের কোন সুযোগ না দেওয়া তাদের মধ্যে জড়তা তৈরি হয়ে গেছে। তারা এখন কোথাও যেতে চায় না, কাউকে কিছু বলতে চায় না। নিজেকে নিজেই বোঝা মনে করে। বারসিক যে উদ্যোগ নিয়েছে এটা ধারাবাহিক করলে তারা জড়তা থেকে বের হতে পারবে। এর জন্য বারসিককে সাধুবাদ জানাই।’

pic-6

অনুষ্ঠানে জয়াখালী গ্রামের কৃষক-কৃষাণী, শিক্ষার্থী, শিশু নবীন ও প্রবীন প্রতিবন্ধী, প্রবীন ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহন করেন। সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্টানে অংশগ্রহনকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুরুস্কার প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্টানের সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়।

happy wheels 2

Comments