একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুল হালিম
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান
শিক্ষিত হয়েও চাকুরির পেছনে না ছুটে নিজেকে কৃষি পেশায় যুক্ত করেছেন সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের কাস্তা গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম (৩৬)। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে আব্দূল হালিম পরিবারের মধ্যে সবার ছোট। বাবা জোনাব আলী ছিলেন একজন প্রান্তিক কৃষক। সংসারে অস্বচ্ছলতার কারণে পরিবারের অন্যান্য ভাই বোনদেরও বেশি লেখাপড়া করাতে পারেননি তার বাবা। পরিবার থেকে লেখাপড়ার জন্য কোন সহযোগিতা মেলেনি আ: হালিমের। নিজের আগ্রহে শিক্ষিত হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন তিনি। ১৮ বছর আগে এসএসসি পাশ করেছেন। শেষ করেছেন বিএসএস কোর্সও। বর্তমানে অধ্যয়নরত আছেন আইন বিষয়ে।
যে কোন চাকুরি করার যোগ্যতা ছিলো তার। চেষ্টা করলে পেতে পারতেন ভালো কোন চাকুরি। কিন্তু চাকুরি করার মানসিকতা কখনই তৈরি হয়নি তার। চেষ্টা করেছেন নিজে কিছু করার। তাই চাকুরির পেছনে না ছুটে বেছে নেন কৃষি পেশা। কিন্তু কৃষি কাজ শুরু করার পর আব্দুল হালিমকে শুনতে হয়েছে গ্রামের মানুষের নানা কথা। তিনি বলেন, ‘মানুষ বলতো ‘তুমি শিক্ষিত, তুমি করবে চাকুরি, তুমি কেন কৃষি কাজ করো। তবুও হাল ছাড়িনি। বাবার সাথে কৃষিজমিতে কাজ করার ফলে কৃষি কাজে ভালো অভিজ্ঞতা লাভ করি।’ তাই আব্দুল হালিম গ্রামের মানুষে কথায় কান দিয়ে এগিয়ে চলেন সামনের দিকে। নিজে পরিশ্রম করে কৃষি কাজ করলে কৃষি কাজ করে ভালো আয় করা যায় এই মনোবল থেকে নিজেকে সকলের কাছে মেলে ধরেছেন একজন কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে।
আব্দুল হালিম জানান, তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া ৩৩ শতাংশ এবং গ্রামের মানুষের কাছ থেকে লিজ নেওয়া ৫ বিঘা জমি নিয়ে কৃষি কাজ শুরু করেন। কৃষিতে উৎপাদন খরচ কমাতে জৈব সার, জৈব বালাইনাশক ব্যবহার, বীজ সংরক্ষণ করার মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় কৃষি অনুশীলন শুরু করেন। তার চাষকৃত ফসলের মধ্যে রয়েছে, ধান, পাট, সরিষা, গম, মটর খেসারি পেঁয়াজ, নানা রকমের শাক সবজি। তাছাড়া বাড়ির সাথে ৩৫ শতাংশ জমিতে গড়ে তুলেছেন একটি মাছের খামার এবং তার একটি মুরগির খামার ও গোয়ালে রয়েছে ৪টি গরু। তিনি জানান, সব মিলিয়ে কৃষি থেকে তার বাৎসরিক আয় হচ্ছে দেড় লাখ টাকা। কৃষির বাণিজ্যিকীরণ, কোম্পানির বীজ সারের উপর কৃষকের নির্ভরশীলতা, কৃষি শ্রমিকের সংকট, ফসলের লাভজনক মূল্য থেকে কৃষক যখন বঞ্চিত এবং বড় কৃষকের কৃষি থেকে সরে আসা, নানা মূখী কারণেই অনেক কৃষকই কৃষি থেকে সরে যাচ্ছেন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এই পেশাকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছি। এখন আমি ভালো আছি। মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক বেকার যুবক আছে যারা চাকুরি পেছনে না ছুটে কৃষিকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন। আমি ভবিষতে আমার কৃষি কাজকে আর ও প্রসারিত করবো যেন মানুষের কর্মসংস্থান হয় এবং নতুন প্রজন্ম তরুণ শিক্ষিত যুবকেরা উৎসাহিত হয়।’
তিনি মনে করেন, তাঁর এই সফলতার পেছনে বারসিক’র অবদান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বারসিক আগ্রহী মানুষের ব্যক্তিগত ও যৌথ উদ্যোগকে সহায়তা করে থাকে। এই সংগঠনের মাধ্যমে জানতে পারি কৃষকরে অধিকার সর্ম্পকে। আর বিভিন্ন তথ্য সহায়তা পেতে আমি মাঝে মাঝে কাস্তা বারোওয়ারি কৃষক কৃষাণি সংগঠনের মাসিক সভায় অংশগ্রহণ করি এবং সদস্য হই। সদস্য হওয়ার পরে আমি বারসিক’র মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় কৃষি কাজের উপর কৃষক কৃষক অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর, জৈব সার, জৈব বালাইনাশক তৈরি, বীজ সংরক্ষণ, উদ্যোক্তা তৈরি, নেতৃত্ব উন্নয়নসহ নানা ধরনের প্রশিক্ষণ পাই, যা থেকে কৃষি কাজে অনুপ্রাণীত হই।’ এ প্রসঙ্গে কাস্তা বারোওয়ারি কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সভাপতি ভানু রায় বলেন, ‘কৃষি কাজের মধ্য দিয়ে আব্দুল হালিম অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছেন এবং তাঁর সামাজিক মর্যাদাও বেড়েছে। তাকে দেখে নতুন প্রজন্মের শিক্ষিত যুবক কৃষি কাজে উৎসাহিত হবেন বলে আমি মনে করি।