জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী একজন রেহেনা খাতুন
মানিকগঞ্জ থেকে মো নজরুল ইসলাম
দিন শেষ রাত হয়, আলো ঢেকে আধার ও আধার কেটে হয় আলো। কিছু মানুষের জীবনে অন্ধকার ও সংগ্রাম পিছু ছারে না। তবুও আলোকিত জীবন ও সমাজ দেখার নেশায় কেটে যায় জীবন বেলা। সমাজে হাজার মানুষের মধ্য তেমনই একজন আলো হাতে জীবন সংগ্রামী মানুষ রেহেনা খাতুন (৬৮)। সমাজের লোকে তাঁকে হেনার মা বলে ডাকেন।
হেনার মা বলেন, নারীদের কোন বাড়িঘর ও আসল ঠিকানা থাকে না তবুও বলি। স্বামীর ও এলাকার স্থায়ী ঠিকানা মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলাধীন মহাদেবপুর ইউনিয়নের কাছিধারা গ্রামে। যৌথ পরিবারের সংসার জীবনের শত কষ্টের মাঝেও ভালোই ছিলাম। আমি দুই কন্যা সন্তানের জননী। দুঃখের গল্প হলো এই যে আমার দুই কন্যার বাড়ন্ত সময়ে আমার স্বামীর বিয়োগ ঘটলে আমি চরমভাবে আহত হই। যৌথ পরিবারের স্বামীর ভিটা ও বাবার ভিটায় ঠাঁই না পেয়ে আমার বোনের আত্মীয়ের সহযোগিতায় মানিকগঞ্জ শহরের মানরা এলাকায় এক বাসা বাড়িতে কাজ নেই। তারপর শুরু হয় জীবনের নতুন অধ্যায়।
তিনি আরও জানান, স্বপ্ন হলো কষ্ট করে হলেও দুটি মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করবো। মেয়েদের জন্য বাসার কাজ ছেরে মানিকগঞ্জ পিটিআইতে রান্নার কাজের যোগালি হিসেবে রোজ হাজিরা ভিত্তিতে কাজ নিলাম। একটানা প্রায় বিশ বছর চাকরি করেও মনের আশা পুরো করতে পারিনি তাই বলে আমি এখনো হালও ছাড়িনি সেটি নাতিনকে নিয়ে স্বপ্ন বুনছি। অামার মেয়েরা খুবই সুন্দরী থাকায় সমাজের ছেলেদের অত্যাচার ও চাপে ছোটকালেই বিয়ে দিতে বাধ্য হই। এখন বড় মেয়ের ঘরে দুই নাতিন আছে।বড় নাতিন মানিকগঞ্জ এস কে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মেয়েদের মধ্য থাকলেও আমি নিজে উপার্জন করি, অন্যকে চালাই কারো দ্বারা চালিত হইনা এবং কারো ইনতেদারি যেন না হইতে হয় আমি সকলের কাছে এই আর্শিবাদ চাই। এখন আমার লক্ষ্য নাতিন মানুষ করা তাই নাতিনের খরচা মেটাতে একটু কষ্টের কাজ করি।
রেহেনা খাতুন জানান, সকালে অন্ধকার থাকতে তিনি মানিকগঞ্জ কাচা বাজার আড়তে খেপুর দোকানে আসেন। এখানে সবজিপাতি ও ঘর গোছানোর কাজ করেন। আবার কাজ শেষে আড়তঘুরে ছাটসবজিপাতি সংগ্রহ করেন। বাছ দিয়ে ভালো সবজিগুলো নিয়ে গাওয়ালে আসেন। উস্তা করলা, ভেন্ডির চাহিদা কম দামে বিক্রি করেন। তাই সবাই খুশি হয়। তিনিও খুশি হন। তাঁর কষ্টের জায়গা হলো কাজ করে এখনো এক ডিসিম জায়গা করতে পারলেন না। এখন মনের জোর থাকলেও শরীরের জোর কমে আসছে তাঁর। পৌরসভার নাগরিক হয়ে এখনো তিনি বয়স্ক বিধবাভাতাসহ কোন সরকারি সুযোগ সুবিধা পাননি। পরের বাড়ি থাকতে চান না, সরকারের কাছে নিবেদন করছেন স্থায়ী একটি আশ্রয় ঘরসহ ঠিকানা।