গৃহস্থালির বর্জ্য নিম্ন আয়ের মানুষের আয়ের উৎস হতে পারে
ঢাকা থেকে ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল
যে পচনশীল বর্জ্য মানুষ ফেলে দেয় সেই বর্জ্য থেকে সার তৈরি করে মানুষ আয় করতে পারে। গতকাল ঢাকার হাজারীবাগের বালুরমাঠের বাড়ৈইখালী এলাকায় ‘গৃহস্থালী বর্জ্য থেকে সার তৈরি, অংশীদারিত্ব ও বাজারজাতকরণ বিষয়ক বারসিক আয়োজিত সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
বস্তিবাসী অধিকার সুরক্ষা কমিটির সভাপ্রধান হোসনে আরা বেগম রাফেজার সভাপতিত্বে ও বারসিকের প্রজেক্ট ম্যানেজার ফেরদৌস আহমেদ এর সঞ্চালনায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা’র) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান, বিশেষ অতিথি ছিলেন নারী নেত্রী ও কবি কাজী সুফিয়া আখতার, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল এন্ড কলেজ এর অধ্যক্ষ আকমল হোসেন ও বারসিক’র পরিচালক এবিএম তৌহিদুল আলম।
হাজারীবাগের বউ বাজার ও বালুরমাঠ এলাকার সিবিও সদস্য ও কমিউনিটির মানুষেরা তাদের গৃহস্থালি বর্জ্য জমিয়ে ড্রামে ভরে ধারাবাহিকভাবে তৈরি করেছে জৈব সার আর এই সারগুলো আজকে আনুষ্ঠানিকভাবে নার্সারি মালিকদের হাতে তুলে দেয়া হয়। সভায় তারা বলেন, ‘যদি এগুলো ব্যবহার করে নার্সারি মালিকরা সন্তুষ্ট হয় তবে বৃহৎ করে আবার সার প্রস্তুত করবেন তারা। নার্সারি মালিক মো: রিপন মিয়া বলেন, ‘আপনারা যে কষ্ট করে সার বানিয়েছেন এজন্যই আপনাদের ধন্যবাদ। কারণ কাজটা ওতো সহজ না। এই সার হয়তো আরও ভালো করা সম্ভব। কিন্তু আপনারা যে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ শিখলেন, সেটা অনেক বড় কাজে লাগবে। কমিউনিটি নেত্রী অর্পণা রানী বলেন, ‘আমরা পচনশীল বর্জ্য দিয়ে সার বানিয়ে ইতোমধ্যেই নিজের লাগানো গাছে ব্যবহার করছি। এটা খুবই কার্যকর। আমাদের দরকার একটু পৃষ্ঠপোষকতা তাহলেই আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আব্দুস সোবহান বলেন, ‘সরকার দ্রুত বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য ২০০৯ সালে কুইক রেন্টাল এর আশ্রয় নিয়েছিলেন কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি বর্জ্য থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে যাচ্ছে যা খুবই আশাব্যঞ্জক। সরকারের উচিত হবে পচনশীল বর্জ্য থেকে সার তৈরির কাজকেও পৃষ্টপোষকতা প্রদান করা।’ বিশেষ অতিথি কবি ও নারী নেত্রী কাজী সুফিয়া আখতার বলেন, ‘নারীরা এই সার বানানোর কাজ শিখে তাদের আয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন আর এটা নারীর ক্ষমতায়নে বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে।’ এবিএম তৌহিদুল আলম বলেন, ‘পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে যারা ময়লা রপ্তানি করেন। আপনারা ক্ষুদ্রভাবে কাজটি শুরু করেছেন এটা একটা বড় ব্যাপার। সারের মানোন্নয়ন হবে, এটা আরও বড় পরিসরে হবে এটাই প্রত্যাশা।’ অধ্যক্ষ আকমল হোসেন বলেন, ‘বিশ^ব্যাপী বাণিজ্য ও বাজার বড় একটি বিষয়। আজকে আমাদের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের দরুণ। তাই সরকারের উচিত জৈব সারকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা প্রাণ বৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য।’
সভায় আরও আলোচনা করেন ইয়ুথ সদস্য সেলিনা আক্তার, কমিউনিটি সদস্য আনোয়ার হোসেন, বারসিকের শিল্পী বৈদ্য, সাবিনা নাঈম, কামরুন নাহার, নার্সারী মালিক আব্দুল খালেক, আব্দুর রহমান প্রমূখ।
সভাপতির বক্তব্যে বস্তিবাসী নেত্রী হুসনে আরা বেগম রাফেজা বলেন, ‘আমরা নগর দরিদ্র, নি¤œ আয়ের মানুষ। আমরা বস্তিবাসী হিসেবে জন্মগ্রহণ করি নাই, পরিস্থিতি আমাদের বস্তিবাসী করেছে। আমরা পচনশীল বর্জ্য দিয়ে সার তৈরির ট্রেনিং করেছিলাম আজ আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। এটা একটা বড় সাফল্য। আমাদের সামনের দিকে তাকাতে হবে, বড় করে স্বপ্ন দেখতে হবে। বস্তিবাসীরা সার বানিয়ে সারাদেশে মানুষের চাহিদা মিটাবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করছি। এক্ষেত্রে নার্সারির মালিকরা আমাদের পাশে থাকবেন বলে কথা দিয়েছেন এটা একটা বড় প্রাপ্তি। আমরা এই কাজটিকে এগিয়ে নিতে চাই সরকারী ও বেসরকারীর সহযোগিতায়।’
অনুষ্ঠানে সিবিও, নারী দল, ইয়ুথ, সাংবাদিক ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য যে, উক্ত অনুষ্ঠানটি ইউএস এইড এর অর্থায়নে এবং কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর কারিগরি সহযোগিতায় ‘ঢাকাকলিং’ কনসোর্টিয়াম প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত হয় যা ডিএসকে, বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাসনলেজ (বারসিক), কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওর (কাপ) এবং ইনসাইট্স এর মাধ্যমে জানুয়ারি ২০২১-ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত চলবে।