পুকুরে সরিষা চাষ করে তেলের চাহিদা পূরণ

নেত্রকোনা থেকে খাদিজা আক্তার লিটা
বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচেছ গ্রাম, শহরের প্রতিটি পরিবার। খুব কম সময়ের মধ্যে মানুষের আয়ের তুলনায় ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া প্রতিটি মানুষকে বিকল্প উপায় খ্ুঁজতে হচ্ছে। কৃষি প্রধান এ দেশে অধিকাংশ পরিবার কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় সংকট মোকাবেলায় কৃষি জমির সর্ব উৎকৃষ্ট ব্যবহার, অনাবাদী জমি চাষের আওতায় আনার উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে।
বাজারের যে দ্রব্যটি মূল্য বৃদ্ধি সকল শ্রেণীর জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়েছে সেটি হলো তেল। তেলের মূল্য একেবারে দিগুণ হয়ে গেছে। তাই চলতি বছর তেলের সমস্যা সমাধানে অন্যান্য বছরের তুলনায় সরিষা চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। আমতলা ইউনিয়নে বিশ্বনাথপুর গ্রামের পাশদিয়ে বয়ে গেছে মগড়া নদী নদীর চরে শীতকালীন সবজি পাশাপাশি কোন কোন কৃষক সরিষা চাষ করেন। তেলের সংকট থাকায় সরিষা চাষের আগ্রহ বেড়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায়। আগ্রহের সাথে জমি বাড়েনি তাই অনেক কৃষক হতাশ হয়ে পড়ছেন।


সবুজ মিয়ার আমতলা ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামের একজন আদর্শ কৃষক। বাড়ির সামনে দশ কাঠা জমির উপর দু’টি পুকুর। পুকুর দু’টিতে শীত মৌসুমে পানি থাকে না। পুকুর ব্যবহার করতে অপেক্ষা করতে হয় বর্ষা মৌসুমের জন্য। কিন্তু চলতি বছর দীর্ঘ কয়েক মাস পতিত থাকা পুকুরে সরিষা চাষ করার পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বীজ সংকট দূর করতে স্থানীয় উপসহকারী ও কৃষি অফিসে বারসিক’র সহায়তায় যোগাযোগ করেন এবং বীজ সংগ্রহ করেন। উপসহকারীর কৃষি কর্মকর্তার নিকট থেকে প্রয়োজনীয় সরিষা বীজ সংগ্রহ করে পুকুরের জমিতে অগ্রহায়ণের শুরুতে বোনে দেন বিনা চাষে। পুকুরের তলদেশ, পুকুর পাড়ের চারপাশ সরিষা বপন করেন। দেখতে দেখতে অল্প দিনে সরিষা গাছগুলো বড় হয়ে উঠে। পৌষে শুরুতে হলুদ ফুলে চেয়ে যায়। শীতের কুয়াশা ভেজা বাতাসকে মাতিয়ে সরিষা ফুলের গন্ধ পুকুরের পাশ দিয়ে গ্রামের পাকা রাস্তা দিয়ে হেটে চলা প্রতিটি মানুষকে কিছু সময়ের জন্য দাঁড় করি দেয়। পুকুরের যে দিকে তাকানো যায় হলুদ ফুল ফুটে আছে। স্কুল, কলেজের ছেলে মেয়েরা দল বেঁধে মাঝে মাঝে ছুটে আসে ছবি তুলতে।


হলুদ রঙ শেষ হতে সরিষা গাছে সরিষার ফলন শুরু হয়। এ এক অপরূপ দৃশ্য। সবুজ পুকুরের রূপ নেয় পতিত পুকুরটি। গাছ দেখে পথচারীরা সরিষা উৎপাদন কেমন হবে বুঝতে পারেন। সবুজ মিয়ার পতিত পড়ে থাকা পুকুরে সরিষা গাছগুলো দেখে নিজেও খুব খুবই আনন্দিত। দু’টি পুকুর থেকে দশ মণ সরিষা পেয়েছেন সবুজ মিয়া।
পুকুরের সরিষা চাষ সম্পর্কে সবুজ মিয়া বলেন, ‘কোন ধরনে চাষ ছাড়াই আমি পুকুরের সরিষা চাষ করেছি। এতে চাষ খরচ কমেছে, সরিষা চাষ করে একদিকে আমি পরিবারের সারা বছরের জন্য ভেজাল মুক্ত খাঁটি সরিষা তেলের চাহিদা মিটাতে পারব। সেই সাথে আমার পুকুরটি উপকার হয়েছে, সরিষা গাছের গুড়ায় যে পরিমাণ ঘাস হয়েছে এগুলো পচে পুকুরে প্রাকৃতিক মাছের খাবার তৈরিতে সহায়তা করবে।’ সরিষা তুলে ফালগুন মাসে সেলো মেশিন দিয়ে পুকুরের অল্প পানি জমিয়ে মাছে পোনা চাষ শুরু করেছেন তিনি। এতে ভালো লাভ পাবেন বলে আশা করছেন তিনি। সবুজ মিয়া একজন আদর্শ কৃষক তৈল, লবণ ছাড়া ধান, সবজি সব কিছু নিজেই চাষ করেন। বাড়িতে গরুর খামার রয়েছে। প্রতিবছর এক থেকে দেড় লাখ টাকার গরু বিক্রয় করেন।


চলতি বছর সরিষা চাষ করে তেলের জন্যও আর বাজারের উপর নির্ভর থাকতে হবে না বলে তিনি আশা করছেন। সবুজ মিয়া পুকুরে সরিষা চাষ দেখে নিজ গ্রাম ও পাশ্ববর্তী অনেক গ্রামের কৃষক যাদের পতিত জমি আছে তাঁরা সেগুলো কাজে লাগানোর আগ্রহ বেড়েছে। সবুজ মিয়ার কাছে এসে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিচ্ছেন অনেক কৃষক।
আমাদের দেশে শীতে মৌসুমে অনেক পুকুরে পানি থাকে না। বর্তমানে বাজারে তেলের সংকট মোকাবেলা এ ধরনে পুকুর বা অনাবাদী জমিতে সরিষা চাষের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। যাতে করে বাজারের উপর নির্ভরশীলতা কমার পাশাপাশি ভেজালমুক্ত তেল পেতে পারেন সর্বস্তরের মানুষ।

happy wheels 2

Comments