যুবদের কর্মসংস্থান ও শিল্প প্রসারে আঞ্চলিক বৈষম্যের শিকার রাজশাহী

যুবদের কর্মসংস্থান ও শিল্প প্রসারে আঞ্চলিক বৈষম্যের শিকার রাজশাহী

রাজশাহী থেকে মো. শহিদুল ইসলাম

বরেন্দ্র অঞ্চলের যুবদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আঞ্চলটির বৈচিত্র্য, সম্পদ ও সম্ভাবনাগুলোকে অধিক গুরুত্ব দিবার কথা বলেছেন রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের যুবকরা। কৃষি প্রধান এই অঞ্চলের নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ও শিল্পগুলোর প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তাঁরা।

গতকাল সোমবার রাজশাহী মহানগরীর গণকপাড়ায় একটি রেস্তোরার সেমিনার হলে রাজশাহীতে যুবদের কর্মসংস্থান: সমস্যা ও সম্ভাবনা শীর্ষক মতবিনিময় ও সংলাপে উক্ত কথাগুলো বলেন রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের তরুণ-যুবরা। উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারিসক ও বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরামের আয়োজনে উক্ত মতবিনিময় ও সংলাপে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রায় ৪৬টি স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠনের প্রতিনিধিসহ নাগরিক সমাজ ও সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।

সংলাপে অংশগ্রহণকারি যুবকরা বলেন, ‘আমাদের রাজশাহীর ঐতিহ্য রেশম শিল্পের উন্নয়ন হলে সেখানেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, ঘরে ঘরে রেশম চাষ করে অনেকে স্বালম্বী হতে পারে। দেশ বিদেশে রেশমের চাহিদা থাকায় এগুলো থেকে মানুষের আয় বৃদ্ধি হবে। পাশাপাশি রাজশাহীর আমকে কেন্দ্র করে শিল্প এবং কারিগরি সহায়তা সহ কৃষি প্রধান এই অঞ্চলের কৃষি কেন্দ্রিক শিল্পকে গুরুত্ব দেবার কথা তুলে ধরেন। গ্যাসের পর্যাপ্ততা না থাকায় রাজশাহীতে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠছেনা। শিল্প প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে অন্যান্য অঞ্চলের থেকে রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চল পিছিয়ে যাচ্ছে। অংশগ্রহণকারিগণ বলেন, ‘গ্যাসের শিল্প ব্যবহার বাড়াতে সকল ধরনের কার্যকর উদ্যোগগুলো নিতে হবে নীতিনির্ধারণীদেরকে।’

সংলাপে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরামের প্রচারণা সম্পাদক আতিকুর রহমান, এতে বলা হয়, রাজশাহীতে বৃহৎ চারটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বেহাল দশা। চিনিকল, পাটকল, টেক্সটাইল মিল ও রেশম কারখানাকে অধিক গুরুত্ব দিলে এখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তিনি রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলার আহবান জানান। এতে করে কৃষি প্রধান এই অঞ্চলের কৃষকদের উপকার হবে। সংলাপে তরুণ-যুবরা রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের উন্নয়ন পরিকল্পনায় যুবদের মতামত ও তাদের পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিবার কথা বলেন। তাঁরা বলেন, ‘প্রযুক্তি যেমন দরকার আছে, তেমনি আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল আমাদের প্রকৃতি পরিবেশকেও ঠিক রাখতে হবে। তারা বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য যেমন নদী জলাভূমিগুলো সংস্কার করার দাবি জানান। একই সাথে এসকল সামাজিক সম্পদে প্রান্তিক মানুষের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দাবি করেন। বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি কার্য়কর পদক্ষেপ নেবার কথা বলেন তরুণরা।’

সংলাপে বরেন্দ্র অঞ্চলের আদিবাসী যুব ও কর্মসংস্থান বিষয়ক দিকগুলো তুলে ধরেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি ও বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক সাবিত্রী হেমব্রোম। তিনি বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের আদিবাসী যুবকদের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষভাবে পদক্ষেপগুলো নিতে হবে।
রাজশাহী শহরের বস্তিবাসী যুবদের কর্মসংস্থান বৈষম্য অসমতামূলক কর্মসংস্থান বিষয়ে কথা বলেন বহরমপুর বস্তিবাসী সার্বিক উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘বস্তিতে আমাদের নারীদের শ্রমের মূল্য ঠিকভাবে দেয়া হয়না, আবার শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার কারণে বস্তির যুবকরা সরকারি অনেক ট্রেনিং এবং সেবারগুলো থেকে বঞ্চিত হয়। তিনি বস্তির যুবকদের জন্য কারিগরি শিক্ষা চালুসহ শ্রমের মজুরী বৈষম্য রোধের দাবি করেন।

উক্ত সংলাপে যুবদের নানা প্রশ্ন এবং নিজ প্রতিষ্ঠানে যুবদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ও অন্যান্য দিকগুলো তুলে ধরেন রাজশাহী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আলম আলী, রাজশাহী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মোহা: আব্দুল হান্নান, ব্যবসায়ী নেতা সেকেন্দার আলী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ড. আয়নাল হক, সোনার দেশ পত্রিকার সম্পাদক আকবারুল হোসেন মিল্লাত, যমুনা টিভির প্রতিনিধি জাবিদ অপু। সভাপ্রধান হিসেবে ভুমিকা বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি শাইখ তাসনীম জামাল, এছাড়াও ইস্যুভিত্তিক তরুণদের কর্মসংস্থান সংকট, দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের দিকগুলো তুলে ধরেন অংশগ্রহণকারি তরুণরা। সংলাপটি সঞ্চালনা করেন বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারি ও গবেষক মো: শহিদুল ইসলাম।


সমাপনী বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি শাইখ তাসনিম জামাল বলেন- রাজশাহীতে আগের তুলনায় যেমন কর্মসংস্থানের দিকগুলো তৈরী হয়েছে, তেমনি স্থানীয় শিল্পের গুরুত্বগুলো অনেকটা বিনিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন- এখানে যেমন কর্মসংস্থানের জন্য বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক, বিসিক শিল্প নগরীসহ অনলাইন ভিত্তিক কিছু কর্মসংস্থান তৈরী হয়েছে। কিন্তু সেগুলো একশ্রেণীর যুবকরাই বেশি প্রাধান্য পায়। তাই যুবদের কর্মসংস্থানে বৈচিত্র্য আনতে বা বৈচিত্র্যময় পেশাগুলোকে তিনি সমভাবে গুরুত্ব দেবার দাবি করেন।
ছবি সংযুক্ত করা হলো:

happy wheels 2

Comments