বৈচিত্র্যময় বীজ কৃষি প্রতিবেশকে সমৃদ্ধ করে
রাজশাহী থেকে সুমন আলী ও অমৃত সরকার
বলা হয়ে থাকে বৈচিত্র্যময় বীজ কৃষি পতিবেশকে সমৃদ্ধ করে। বৈচিত্র্যময় বীজ থাকলে একটি কৃষক পরিবার অনেক বেশি খাদ্য নিরাপত্তায় সমৃদ্ধ। কৃষি যদি একটি এলাকার প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে থাকলে বীজ বৈচিত্র্য সেই শক্তির প্রধান ভূমিকায় থাকে। বর্তমানে একমূখি ফসল চাষের আধিক্যের কারণে দিন দিন বৈচিত্র্যময় ফসল চাষ আশংঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে প্রান্তিক মানুষসহ সকল পর্যায়ের মানুষেরই বৈচিত্র্যময় খাদ্য গ্রহণের হার অনেক কম। কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণে বারসিক স্থানীয় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। যার সুফল পেতে শুরু করেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মানুষেরা।
বারসিক ও জনগোষ্ঠির যৌথ উদ্যোগে নিয়মিতভাবে এমনই সব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, যা এলাকায় কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হয়। কৃষক নেতৃত্বে প্রায়োগিক কৃষি গবেষণা তেমনই একটি উদ্যোগ। অপ্রচলিত শস্য ফসল সুরক্ষা, এলাকা উপযোগি শস্য ফসলের জাত বৈচিত্র্যতা বৃদ্ধি সর্বোপরি দেশীয় বীজ ও ফসল বৈচিত্র্য বৃদ্ধিও নিয়মিতভাবে কৃষক নেতৃত্বে প্রায়োগিক কৃষি গবেষণার এই উদ্যোগটি নিয়মিত বাস্তবায়ন হয়ে আসছে। আর এই বিষয়ে বারসিক’র কর্মএলাকার গ্রামগুলোতে ঘুরে ফিরে দেখলেই চেখে পড়ে এমনই ছোট ছোট উদ্যোগ, যা এলাকায় প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধকরণে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে।
তেমনই কিছু উদ্যোগে প্রায় ৪ বছর ধরে সহযোগিতা করা হচ্ছে রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার ছোট-আমগাছি গ্রামের জনগোষ্ঠির সদস্যদের। সেখানে আমগাছি নারী উন্নয়ন সংগঠন নামে একটি নারী সংগঠন আছে। যে সংগঠনের ৪০জন সদস্য সবাই প্রত্যক্ষভাবে কৃষি কাজের সাথে যুক্ত। বারসিক থেকে নিয়মিত তথ্য প্রদান ও বীজ সহযোগিতার মাধ্যমে এই গ্রামে এখন বৈচিত্র্যময় শস্য ফলের চাষ হচ্ছে। বাড়ির আঙ্গিনায় আলুর পাশাপাশি উল্লেখযোগ্যভাবে পেঁয়াজ, রসুনের পাশাপাশি অপ্রচলতি ফসল হিসেবে গো-মটর, মহুরী, শলুক চাষ করছেন সংগঠনের নারীরা। অল্প জমিতে বেশি জাতের ফসল চাষের মাধ্যমে সেখান থেকে সারাবছর খাওয়ার জন্য ডাল ও মসলার যোগান পাচ্ছে। পাশাপাশি নিয়মিত বীজ বিনিময়ের মাধ্যমে এলাকার অনেক মানুষকে এধরনের কাজের সাথে যুক্ত করছেন সংগঠনটির সদস্যরা।
এই সংগঠনের সভাপতি জান্নাতুন নেসা (৩৭)। তিনি এবার তাঁর বাড়ির আঙ্গিনার ১০ শতাংশ জমিতে লালশাক, ধনিয়া, গো-মটর, পেঁয়াজ, রসুন, দেশি টমেটো রোপণ করেছেন যেন এখান থেকে সারাবছরের মসলা ও ডালের চাহিদা পূরণ করা যায়। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে গো-মটর, ধনিয়া, মহুরী, মেথির বীজ ছিলো না। আমরা বারসিক থেকে ৩ বছর আগে এ বীজগুলো পাই। তখন থেকেই আমাদের সংগঠনের সদস্যরা সবাই অল্প করে এই ফসলগুলো চাষ করি। এর ফলে আমাদের আর বাজার থেকে কিনতে হয় না। আমরা এই বীজগুলো সংরক্ষণ করি ও বিনিময় করি।
এ বিষয়ে সংগঠনটির সহ-সভাপতি রীতা বেগম (৩৬) বলেন, “এবার আমাদের সংগঠনের সবাই মিলে এই ফসলগুলো প্রায় ৮ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। যার ফলে এই পুরাতন ফসলগুলোর চাষ বৃদ্ধি হচ্ছে। আগামীতে আরো বাড়বে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সারাবছর খাওয়ার জন্য অল্প করে কিনতে হলেও অনেক টাকা লাগত এখন তা লাগে না।’
প্রান্তিক মানুষের ঘরে যদি বৈচিত্র্যময় খাদ্যশস্য থাকে তাহলে একদিকে যেমন খাদ্য নিরাপত্তা সমৃদ্ধ হয় অপরদিকে স্থানীয় এলাকায় বীজ বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হয়ে কৃষি প্রাণবৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করতে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। বারসিক’র এ ছোট ছোট উদ্যোগগুলোর ফলে এলাকায় কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হচ্ছে।