শহীদ দিবস ও নতুন প্রজন্ম
নেত্রকোনা থেকে খাদিজা আক্তার লিটা
নেত্রকোণা অঞ্চলের সদর উপজেলার বালী গ্রামের মৌজেবালি যুব সংগঠনের উদ্যোগে দরুণ বালী সামছুল আলম প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে “মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১৭” উদ্যাপন করা করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল যুব সংগঠন, স্কুলের শিক্ষার্থী ও আপামর জনসাধারণের স্কুল প্রাঙ্গনের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও এক আলোচনা সভা। দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. দুলাল মিয়া শিক্ষার্থীদের সামনে একুশের ইতিহাস তুলে ধরেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “শুধু ফুল দিয়ে শহীদ মিনার সাজালেই শহীদদের প্রতি ও এ দিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষ হয়ে যায় না, আমাদের নতুন প্রজন্মকে এর সঠিক ইতিহাস জানতে হবে, ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান বোধ সকলের থাকতেহবে।”
মৌজে বালি যুব সংগনের সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কোন আনন্দ করার দিন নয়, যাদের রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে আমরা আজ মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারছি, তাদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করার পাশাপাশি নিজেদেরর মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করার দিন।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের নতুন প্রজন্মের নিকট এর সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা খুব বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কারণ নতুন প্রজম্মের অনেক ছেলে মেয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি বলতে শুধু খালি পায়ে গিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া আর মাইকে গান বাজানো বুঝে, দিনটির মাহাত্ম্য সম্পর্কে তারা তেমন অবগত নয়, অবশ্য এ জন্য তারা এককভাবে তারা দায়ি নয়, আমরাই এর তাৎপর্য তাদের সামনে তুলে ধরি না বা প্রয়োজন মনে করি না”।
যুব সংগঠনের সদস্য মাহাবুবুর আলম কিভাবে একুশে ফেবব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় তার ইতিহাস শিক্ষার্থীদের নিকট তুলে ধরে বলেন, “কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীণ জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন। তারই প্রেক্ষিতে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “২০১০ সালের ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে উত্থাপন করে বাংলাদেশ এবং মে মাসে ১১৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের তথ্য বিষয়ক কমিটিতে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়।”
স্কুলে পর্যায়ে শুধু একশে ফেব্রুয়ারিতেই শহীদকে স্মরণ না করে মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীদের সাথে এর ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। তাই প্রতিবছর যুব সংগঠনের উদ্যোগে মহান এ দিবসটি র্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উৎযাপিত হয়ে আসছে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বালী গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী ১০টি গ্রামের প্রায় ৫০০০ মানুষ অংশগ্রহণ করে।
এ বছর মৌজেবালী যুব সংগঠন আগামী প্রজন্মের নিকট একুশের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা জন দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি মৌজেবালী ও দরুণ বালী ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৭জন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা। শিশু শিক্ষার্থীরা তাদের রঙের ছোঁয়ায় শহীদ মিনারের ছবি আঁকে মহান ভাষা শহীদের প্রতি জানায় গভীর শ্রদ্ধা জানান।
মৌজেবালী যুব সংগঠনের উদ্যোগে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনের ফলে বর্তমান ও আগামী নতুন প্রজম্ম দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানতে সক্ষম হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ভাষা শুদ্ধভাবে বলা ও লেখা চর্চার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শুধু বাংলা ভাষাই নয়, বিশ্বের সকল ভাষার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সকল ভাষাভাষির মানুষের মধ্যে পারস্পারিক আন্তঃসম্পর্ক ও আন্তঃনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি এবং সকল জাতির স্ব-স্ব সংস্কৃতির চর্চা ও ধারণে জনগোষ্ঠীকে অনুপ্রাণিত করবে।