এসো প্রাণ প্রকৃতির গল্প শুনি
বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে শহিদুল ইসলাম
‘প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য যে কমে গেছে। আগের তুলনায় গরম যে বেড়ে গেছে! পাখি যে কমে গেছে! আগের মতো আর শেয়ালের ডাকে ঘুম ভাঙেনা। ঘর থেকে আর মুরগি চুরি করেনা খেক শিয়ালী । সবই যেন আজ স্মৃতি হয়ে গেছে। ঘুম ভেঙে ভোরের হাওয়া শেষ হলে সুর্য যেন ধর্য্যৈহীন উত্তাপ ছড়ায়। আগের দিনে বরেন্দ্র অঞ্চলের লু হাওয়ার মধ্যেও একটা শান্তি পাওয়া যেতো, এখন আর সেই শান্তি নেই। সবই নেই, আর নেই। সকালের রাস্তায় হাটতে পাখির গানের মুগদ্ধতায় আর প্রাণ ভরে না। তবুও চলতে হয়। তবু বাঁচতে হয়। কেমন যেন হয়ে গেছে আমদের প্রিয় প্রকৃতি। তবুও আশা জাগানিয়া এগিয়ে চলি আমরা বাঁচার তাগিদে।’ সম্প্রতি প্রাণ, প্রকৃতি ও আবহাওয়া জলবায়ুর গল্পের আসরে প্রবীণরা এসব কথা বলেন।
বারসিক এবং বরেন্দ্র অঞ্চলের স্থানীয় জনসংগঠনগুলোর যৌথ আয়োজনে বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবসকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সপ্তাহ পালন করা হয়েছে। জাগাও বৈচিত্র্য, থামাও উষ্ণতা, বাঁচাও প্রাণ” শ্লোগানে সপ্তাহব্যাপী এই আয়োজনে বরেন্দ্র অঞ্চলের নানা শ্রেণী পেশার মানুষ এই সপ্তাহ পালন করছে। এরই অংশ হিসেবে দর্শনপাড়া ইউনিয়নের প্রবীণ শিক্ষক, কৃষক, নারী, পুরুষ এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আবহাওয়া পরিবর্তন ও স্থানীয় প্রাণবৈচিত্র্য সংকট আলোচনায় নবীন ও প্রবীণরা বরেন্দ্র অঞ্চলের অতীত এবং বর্তমানের দিকগুলো তুলে ধরেন।
প্রাণ, প্রকৃতি ও আবহাওয়া জলবায়ুর গল্পের আসরে অংশগ্রহণকারীগণ বলেন, “বড় বড় গাছ আর নেই, দেশীও গাছ আর নেই, অনেক পাখি আর নেই, বন্যপ্রাণী কমে গেছে। যার ফলে প্রকৃতির মধ্যে যে খাদ্য জাল বিরাজমান ছিলো তা ধ্বংসের দিকে।” তারা বলেন, “কিছু প্রাণী মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় তা মানুষের ফসলসহ জীবনেরও হানি করছে। ফসলে পোকার আক্রমণ বেড়ে গেছে। রাসলেস ভাইপার তার নিজ বসবাসের জায়গা হারিয়ে লোকালয়ে আসছে। মানুষকে দংশন করছে। মানুষ আবার সাপকে মেরেও ফেলছে। সহিংসতা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। শুধু মানুষই নয় বিভিন্ন প্রাণে প্রাণে সহিংসতা বেড়ে গেছে।” তারা আরও বলেন, “একটি সংস্কৃতির সাথে আরেকটি সংস্কৃতির বিরোধ দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। সবকিছুর জন্যেই অন্য কেউ দায়ি নয়। সব কিছুর জন্যে সম্পূর্ণভাবে দায়ি আমরা মানুষ। তাই মানুষকেই এই সহিংসতা প্রতিরোধে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে।”
নিজের সমাজ, নিজের দেশ, সর্বোপরি পৃথিবীকে শান্ত এবং সুন্দর পরিবেশময় ধরে রাখতে মানুষের ভূমিকাই মূখ্য। তাই আমাদেরকেই সকল প্রাণের খাদ্য নিরাপত্তা, বসবাসের নিরাপত্তা, বাঁচার নিরাপত্তার দিকগুলো গুরুত্ব দিতে হবে। শুধূ মুখেই বললে হবে না। বাঁচার প্রয়োজনেই মানুষকেই প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।