সবার প্রশংসা পাচ্ছে কাঠের ব্রীজটি
কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
কথায় আছে, দশের লাঠি একের বোঝা, দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ, এমন করে আমরা প্রতিদিন অহরহ দশ দিয়ে নানান কথা বলি একে অন্যের সাথে। ঠিক তেমনই লেঙ্গুরা ও চৈতানগর গ্রামের দশজন উদ্যোগী মানুষ একটি উদ্যোগ নিলেন গণেশ্বরী নদীর উপর কাঠ দিয়ে ব্রীজ তৈরি করার ।
তাঁরা প্রতিবছর লেঙ্গুরা এর গণেশ্বরী নদীতে ডাক এনে নৌকায় যাত্রী পারাপার করতেন। পানি কমে গেলে সেখানে বাঁশের চাটাই বানিয়ে দিত যাত্রীদের চলার সুবিধার্থে। তখন তারা লক্ষ্য করতেন যে, অনেকসময় নৌকা পারাপারে যাত্রীদের বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও প্রবীণ ব্যক্তিদের খুবই অসুবিধা হয়। এই সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যেতে পারে সেটা নিয়ে ঐ দশজন প্রায়ই আলোচনা করতেন একে অপরের সাথে। তারপর তাঁরা একটি উদ্যোগ নেন নদীর উপর কাঠের ব্রীজ তৈরি করার। দশজন মিলে তহবিল সংগ্রহ করে শুরু করেন কাঠ দিয়ে ব্রীজ বানানো কাজটি। এমন করে পরিশেষে প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার ব্যয় করে প্রায় ৪৫০ ফুট দৈর্ঘ্য গণেশ্বরী নদীর উপর তৈরি করেন কাঠের ব্রীজ। অনেকে সন্দেহ করেছিল এটি হয়তোবা পাহাড়ি ঢলে টিকবে না। কিন্তু না, পাহাড়ি ঢলেও কোন প্রকার সমস্যা হয়নি ব্রীজটির। পুরো বর্ষা পাড়ি দিয়ে এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে ঐ কাঠের ব্রিজটি। বলছিলাম কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নের গণেশ্বরী নদীর উপর তৈরি করা ব্রীজটির বিষয়ে।
সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন লেঙ্গুরা, খারনৈ ও রংছাতী ইউনিয়বাসী এই রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন বিভিন্ন কাজে। বৃষ্টি থাকলে পাহাড় থেকে পানি সরাসরি নেমে আসে তাই ঐ সমসয় নদী ভর্তি পানি থাকে। আবার যখন বৃষ্টি থেমে যায় তখন নদীর পানি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আর এমন সময়ে দেখা দেয় নৌকা দিয়ে পারাপারে সমস্যা। হাঁটু পানিতে নেমে নৌকায় উঠতে হতো। অনেক সময় নৌকা ডুবে যেত। কিন্তু এখন আর সেই সমস্যায় ভূগতে হচ্ছে না এখানকার লোকজনদের। প্রতিদিন এই কাঠের ব্রীজ দিয়ে প্রায় হাজার খানেক লোক যাতায়াত করে বলে জানান ঐ ব্রিজে যারা ভাড়া রাখেন তারা। প্রতিদিন স্কুল ও কলেজের প্রায় ৫শ’ জনের মতো শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। প্রবীণ ব্যক্তি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন প্রকার ভাড়া নেওয়া হয় না।
এই প্রসঙ্গে ঘোড়াগাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, “এই ব্রীজ হওয়াতে অনেক ভালো হয়েছে। কারণ এর আগে যখন নৌকা দিয়ে পার হতাম তখন অনেক সময় সময়মতো স্কুলে পৌছতে পারতাম না। সাইকেল এপারে রেখে প্রায় ২ কিলোমিটার হেটে যেতে হতো। এখন সাইকেল নিয়ে সময়মত স্কুলে পৌছতে পারছি।” চৈতানগর গ্রামের কাঞ্চন মিয়া বলেন, “আমরা দেখসি এই নদীতে অনেকবার ব্রীজ তৈরির জন্য মাপযোগ করা হয়েছে কিন্তু কোন প্রকার বাস্তবায়নের কাজ হচ্ছিল না। তাই আমরা সরকারের দিকে চেয়ে না থেকে নিজেরা মিলে এমন ব্রীজ দেওয়ার চিন্তা করেছি।” লেঙ্গুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণী শিক্ষার্থী তমালিকা বলেন, “আগে যখন নৌকা দিয়ে নদী পার হতাম তখন কাপড় ভিজে যেত ও ভয় লাগতো ডুবে যাওয়ার, এখন আর এমন সমস্যা হয় না।” মো. সিদ্দিক বাড়ি গোবিন্দপুর পেশায় মোটরসাইকেল ভাড়া চালক তিনি বলেন, “আগে যখন দূর্গাপুর যেতাম তখন কলমাকান্দা দিয়ে যেতে হতো কারণ এখানে নৌকায় পারাপার হতে হতো অনেক সময় নৌকা পাওয়া যেত না এখন আমরা অনায়াসে চলাফেরা করতে পারছি।
লেঙ্গুরা গ্রামের সাধারণ জনগোষ্ঠী আবারো প্রমাণ করলো যে নিজেদের সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেদেরই কাজ করতে হয়। তাদের এই উদ্যোগের ফলে এখন প্রায় তিনটি ইউনিয়নের মানুষ খুব সহজেই চলাফেরা করতে পারছেন। এমন উদ্যোগ সবার কাছে প্রশংসার দাবিদার।