কদর বাড়ছে “চন্দ্রমল্লিকার”
আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ ॥
শীতকালীন ফুলের মধ্যে চন্দ্রমল্লিকার মতো দীর্ঘস্থায়ী ফুল আর একটাও নেই। বাহারি বর্ণ-বৈচিত্র্য, পাপড়ির দৃষ্টিনন্দন বিন্যাস ও বড় আকারের জন্য এটি একটি সবার কাছেই জনপ্রিয় ফুল। মূলত চন্দ্রমল্লিকার বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়। বর্তমানে মানিকগঞ্জে বাণিজ্যিক ভিত্তিক চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে বহুলাংশে। বিভিন্ন রঙের এই ফুলগুলোর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমূল্য রয়েছে প্রথম সারিতে।
চন্দ্রমল্লিকা বা চন্দ্রমুখীর এখন ফুলের জগতে জনপ্রিতার অনেক ওপরে। এ ফুলের এত বেশি বাহারি রঙ আর নানা প্রজাতি রয়েছে যে, কোন রেথে কোনটা পছন্দ হবে তা বলা মুশকিল। বড় ফুলের হালকা গোলাপি, সাদা বা ঘিয়ে রঙের স্নোবল চন্দ্রমল্লিকা সবার প্রাণ জুড়ায়। চন্দ্রমল্লিকার বিভিন্ন জাত রয়েছে। বাণিজ্যিকভিত্তিতে যেগুলোর চাষ হয়, সেগুলোকে প্রধানতঃ দুই শ্রেণীতে ভাগ করা ছোট প্রজাতি – বাসন্তী (জলদি জাত), উজ্জ্বল হলুদ, মেঘামী, হালকা বেগুনী, উনা (নাবিজাত) – হালকা গোলাপী। আর বড় প্রজাতির মধ্যে – চন্দমা, স্নোবল, সোনার বাংলা, রোজডে, পুইসা পকেট।
জানা যায়, চন্দ্রমল্লিকার ইংরেজি প্রতিশব্দ Chrzsanthemum; শব্দটি গ্রীক থেকে এসেছে। ক্রিসস অর্থ ‘সোনা’ এবং এনথিমাম অর্থ ‘ফুল’। বৈজ্ঞানিক নাম: Chrzsanthemum indicum. এ গাছ ৫০ থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। বৃহদাকৃতির ফুলগুলো সচরাচর সাদা, হলুদ অথবা পটল বর্ণের হয়। গাছে ফুল তাজা থাকে ২০ থেকে ২৫ দিন। ফুলদানি সাজানোর জন্য লম্বা ডাঁটাসহ এবং মালা গাঁখার জন্য ডাঁটা ছাড়া ফুল তোলা হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট চন্দ্রমল্লিকা ফুলের বারি চন্দ্রমল্লিকা-১ ও বারি চন্দ্রমল্লিকা-২ জাত দুইটি উদ্ভাবন করেছেন।
একটি বেসরকারি ফুল গবেষণা ও পরিচর্যা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধর ডা. মোজাম্মেল হক বলেন, “চন্দ্রমল্লিকা তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা আবহাওয়া এবং রৌদ্রজ্জল জায়গা পছন্দ করে। বাংলাদেশে শীতকালই এই ফুল চাষের উত্তম সময়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ সুনিস্কাশিত দোআঁশ ও বেলে মাটি চন্দ্রমল্লিকা চাষের জন্য উপযোগী। জাত ভেদে ফলন কম বেশি হয়। তবে গাছ প্রতি বছরে গড়ে ৩০-৪০টি ফুল পাওয়া যায়।
বিভিন্ন প্রজাতির ফুল উৎপাদন ও বিপনণকারী প্রতিষ্ঠান বানিয়াজুরীর সিফাত নার্সারির মালিক আব্দুর রশিদ জানান, শীতের সময় হরেক রকম ফুলে বাগান ভরে ওঠে। এর মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ফুল হচ্ছে চন্দ্রমল্লিকা। চাহিদার পাশাপাশি দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে চন্দ্রমল্লিকার। তাই দিন দিন নার্সারীতে এ ফুলের কদর বাড়ছে।
সৌখিন ফুল চাষী গৃহবধূ নাহিদা জেনী জানান, বারান্দার টবে চন্দ্রমল্লিকার নানান রঙ আমাদের মন ভালো করে দেয়। এ ফুল অনেক দিন টবে ফোটা থাকে, ফুলও ফোটে অনেক।