প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে আদিবাসীদের ভূমিকা
সিলভানুস লামিন
বিশ্বের প্রায় ৩৭০ মিলিয়ন আদিবাসী স্থায়িত্বশীল, কার্বন নিরপেক্ষ এবং অনেক ক্ষেত্রে কার্বন-নেতিবাচক জীবনযাত্রা পরিচালনা করে; যার কারণে তারা হাজার হাজার বছর টিকে আছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রাখতে পারছেন। প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে আলোচনায় আদিবাসীদের একটি সম্পর্ক রয়েছে। কেননা বিশ্বের বেশির ভাগ আদিবাসীদের ‘বাস’ খুবই প্রকৃতিঘনিষ্ঠ! তাদের জীবন ও জীবিকাও খুবই বেশি প্রকৃতিনির্ভর। বাংলাদেশে ৪৫টি আদিবাসী রয়েছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে এই আদিবাসী মানুষের সংখ্যা আনুমানিক ৩০ লাখ, যা পৃথিবীর অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতি, জীবনপ্রণালী প্রকৃতির সঙ্গে রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। প্রকৃতি ছাড়া আদিবাসীদের অস্তিত্ব কল্পনাই করা যায় না; একটি আদিবাসী শিশু জন্মের পর থেকে প্রকৃতির সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। কারণ এই প্রকৃতির কাছেই সে প্রয়োজনীয় সবকিছুই পেয়ে থাকে। চাষাবাদ থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি, জ্বালানি, আসবাবপত্র, ঔষধ, খাবার-দাবার সবকিছুই আদিবাসীরা প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে থাকে। বাংলাদেশের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সাঁওতাল, খাসি, গারো, পাত্র, ওরাঁও, হাজং, খারিয়া, মুন্ডাসহ অনেকগুলো আদিবাসী বাস করেন। আদিবাসীরা নানান বঞ্চনা, প্রতারণা ও হয়রানির মধ্য দিয়ে তাদের জীবন পরিক্রমা পরিচালনা করেন। সরকারি সুযোগ-সুবিধা, স্বীকৃতি না পেলেও তারা তাদের মতো করেই এদেশের সমৃদ্ধ উন্নয়ন, অগ্রগতি ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য বৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় নিরবে অবদান রেখে যাচ্ছেন। নিজ অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে যাওয়ার কৌশল তাদেরকে শিখতে হয় সেই ছোট্টকাল থেকে। এই সংগ্রামময় জীবনে প্রকৃতি তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায়। তাই তো পাহাড়ের বুকে তারা আশ্রয় নিয়ে নতুন স্বপ্ন রচনা করতে প্রয়াসী হয়, পাহাড়-গাছপালা, লতাপাতা, পশুপাখি, ঝরণা, ছড়া থেকে শিখে নেয় তাদের জীবন ও জীবিকাকে বাঁচিয়ে রাখার কৌশল।
আদিবাসীদরকে জমির জন্য, ভিটে মাটির জন্য, জুমের জন্য এবং নিজ অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য আজীবন সংগ্রাম ও লড়াই করতে হয়েছে। আদিবাসীরা পাহাড় পোড়ে না, গাছ কাটে না, জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে না! কৃষি কাজের জন্য তারা পতিত ও অব্যবহৃত নেড়া পাহাড়ে গাছ রোপণ করে, জৈব সার ব্যবহার করে এবং ফসলে কোন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার না করে উৎপাদন করে। সারা বিশ্বের মানুষ যখন কোন না কোনভাবে প্রাণবৈচিত্র্য হরণ ও প্রকৃতি বিনাস প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সেখানে আদিবাসী জনগোষ্ঠী পাহাড়-বন-জঙ্গলনির্ভর জীবন পদ্ধতি পরিচালনা করে প্রকৃতি ও পরিবেশকে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় করে তুলতে অবদান রেখে চলেছেন। আদিবাসীদের এলাকায় গেলে বিশেষ করে খাসিদের গ্রামের গেলে লাখ লাখ দেশি গাছপালা, গুল্ম ও লতা দেখা যায়। প্রাকৃতিকভাবেই এসব গাছপালা ও গুল্ম জন্মলাভ করে। এসব গাছপালা ও গুল্ম নিধন না করে আদিবাসীরা এগুলোকে সংরক্ষণ করে রেখেছেন তাদের নিজস্ব প্রয়োজনেই! তাই তো বলা হয়, যেখানে আদিবাসীদের ‘বাস’ রয়েছে সেখানে এখনও বন টিকে রয়েছে, টিকে রয়েছে হাজারো দেশীয় গাছপালা ও প্রাণবৈচিত্র্য। অথচ দেশে আজ দেশীয় প্রজাতির বদলে বিদেশি আগ্রাসী প্রজাতির গাছের বনায়ন চলছে। এসব আগ্রাসী গাছগুলোকে এদেশের পাখি চেনে না, পোকামাকড় চেনে না, চেনে না অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণ ও জীবন। তাই এসব আগ্রাসী গাছের ফুল ও ফল তারা খেতে পারে না। ফলশ্রুতিতে ভিন্ন ভিন্ন বাস্তসংস্থানে বসবাসকারী প্রাণ ও জীবনের খাদ্যচক্র ব্যাহত হচ্ছে। খাদ্যশৃঙ্খলে অশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার কারণে অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে খাদ্যাভাবের কারণে। কিন্তু আদিবাসীদের এলাকায় এখনও অনেক প্রাণী ও ক্ষুদ্র প্রাণ রয়েছে। প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্ব করেই তাদের জীবন ও জীবিকা আবর্তিত হয়।
আমরা সবাই কমবেশি জানি যে, বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসী মানুষের জীবন-জীবিকা অনেকাংশে প্রাকৃতিক সম্পদকেন্দ্রিক। প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য্যতা তাদের জীবন ও জীবিকাকে যেমন সহজতর করে তুলে তেমনি এসব প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট হলে, অপ্রতুল হলে তাদের এই জীবন ও জীবিকা বিপন্ন হতে বাধ্য। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক সম্পদ দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানান দুর্যোগ প্রকৃতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর বাসস্থান, খাদ্যচক্র এবং জীবনকে ব্যাহত করেছে। কোন কোন প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে খাদ্যশৃঙ্খলে নানান পরিবর্তনের কারণে। আবার কোন কোন প্রাণী ও উদ্ভিদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিও পরিলক্ষিত হয়েছে, যা প্রকৃতির পরিবেশকে ভারসাম্যহীন করে তুলেছে। ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণবৈচিত্র্য হ্রাস পাওয়ায় প্রকৃতিতে সম্পদের যোগান কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আদিবাসীদের নিজস্ব কৌশল ও উদ্যোগ রয়েছে। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনে তারাই সবচে’ বেশি ক্ষতিগ্রস্ততার শিকার হচ্ছেন সেহেতু এ পরিবর্তন মোকাবিলা করে কীভাবে নিজের জীবন-জীবিকা ধরে রাখা যায় সে বিষয়ে আদিবাসীদের নিজস্ব জ্ঞান ও কৌশল রয়েছে। এসব কৌশল ও জ্ঞানের গুণেই এত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও তারা আজও টিকে আছেন, আজও নিজেদের জীবন-জীবিকা পরিচালনা করছেন। জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে আদিবাসীদের বৃহত্তর কোন উদ্যোগ না থাকলেও প্রকৃতির পরিবর্তনের সাথে তারা অভিযোজন এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রশমন (গাছ রোপণ) করেই টিকে থাকার নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আদিবাসীরা যে কৃষি চর্চা করেন, যে জীবিকা পরিচালনা করছেন, সেগুলো পরিবেশবান্ধব এবং কম কার্বন নিঃসৃত হয়, যা দীর্ঘমেয়াদী হিসাবে বলা যেতে পারে যে, তারা জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে অবদান রেখে চলেছেন নিরন্তরভাবে। খাসিরা বংশপরম্পরায় কম কার্বনভিত্তিক জীবিকা পরিচালনা করে আসছেন। পানচাষের জন্য তারা প্রচুর গাছপালা সংরক্ষণ করেন, প্রয়োজনে বন্ধ্যা জমিতে নতুন গাছপালা রোপণ করেন। জীবিকার তাগিদেরই তারা এ কাজটি করে আসছেন। আমরা জানি, গাছপালা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে কার্বন ডাই অক্সইড। খাসিরা সামাজিক বনায়ন তো করেই থাকেন উপরোন্তু তারা দীর্ঘদিন থেকে প্রাকৃতিক বন রক্ষা করে আসছেন। বাংলাদেশে বসবাসরত অন্যান্য আদিবাসীরাও সাধ্যমতো প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ করেন। তারা প্রকৃতির কোন ক্ষতি না করেই তাদের প্রকৃতিঘনিষ্ঠ জীবন-জীবিকা পরিচালনা করেন।
আদিবাসীদের এলাকায় এখনও অসংখ্য প্রজাতির দেশী গাছপালা ও উদ্ভিদ থাকায় নানান প্রজাতির পশু-পাখি, সরীসৃপ, অণুজীব সেখানে বসতি স্থাপন করে। বলা হয়, প্রতিবেশ বা পরিবেশ-প্রকৃতির সাথে আদিবাসীদের একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কের কারণে আদিবাসীরা হাজার হাজার বছর ধরে প্রকৃতিতে টিকে রয়েছেন। আদিবাসীরা তাদের পুষ্টি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সামাজিক এবং আত্মিক অস্তিত্বের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। তাই নিজের প্রয়োজনেই তাদেরকে প্রকৃতি ও বন সংরক্ষণ করতে হয়। প্রকৃতিতে দীর্ঘদিন বসবাসের কারণে গত কয়েক দশক থেকেই আদিবাসীরা প্রথমবারের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। তারা তাপমাত্রার পরিবর্তন, বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের গুণগত ও পরিমাণগত পরিবর্তন এবং ঋতুর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে আসছে সেই দীর্ঘদিন থেকে। তাদের এই বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যবেক্ষণ, জ্ঞান ও অনুশীলনগুলো যার সাহায্যে তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে অভিযোজন করে আসছে সেগুলোকে কোনভাবে ছোট করে দেখা উচিত নয়। কারণ এই জ্ঞান, অনুশীলন ও পর্যবেক্ষণের গুণেই অনন্য জাতিগোষ্ঠী হিসেবে তারা হাজার হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকতে পারছেন।
আদিবাসীরা তাদের জীবনের মাধ্যমে বন রক্ষা করে চলেছে। মজার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে বর্তমানে যেখানে বন রয়েছে সেখানে আদিবাসীদের বাস রয়েছে। সেটা সুন্দরবন, মধুপুর, সিলেটের পাহাড় ও টিলা সব এলাকাতেই বিভিন্ন আদিবাসীরা বসবাস করে এসব বনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বন সংরক্ষণ এবং জীবিকার তাগিদে নতুন বন সৃষ্টির মাধ্যমে আদিবাসীরাই পথ দেখিয়ে যাচ্ছেন। এসব বন এবং বনের বিভিন্ন উপাদান তথা উদ্ভিদ, প্রাণীসহ নানান অণুজীব মানুষের কল্যাণ বয়ে এনেছে। আদিবাসীরা এসব প্রাণবৈচিত্র্য স্মরণাতীত কাল থেকে রক্ষা ও সংরক্ষণ করে আসছেন। তাই তো বলা হয় প্রকৃতির সাথে আদিবাসীদের একটি আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে।
প্রকৃতি থেকে আদিবাসীরা জীবন পরিচালনার সব ধরনের উপাদান সংগ্রহ করেন। এসব উপাদান বা সম্পদ যাই বলি না কেন সেগুলো মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করে। বিজ্ঞানভিত্তিক যেসব গবেষণা পরিচালিত হয়েছে সেগুলোতে বলা হয়েছে প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেশ, প্রজাতি এবং জেনেটিক বৈচিত্র্যের অস্তিত্ব মানুষের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও যত্ন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে; বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি প্রদান, সংক্রামক ও পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই প্রতিরোধ এবং দুর্যোগজনিত বিভিন্ন ঝুঁকি হ্রাস করতে এসব প্রাকৃতিক উপাদান বিশেষ ভূমিকা রাখে। শুধু তাই নয়, প্রাণবৈচিত্র্য বলতে গেলে প্রায় সব ধরনের ঐতিহ্যবাহী ও সিন্থেটিক ঔষুধপত্র তৈরির উপাদান ও উপকরণ প্রদান করে। মানবস্বাস্থ্যের জন্য প্রাণবৈচিত্র্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, প্রাণবৈচিত্র্য মানুষের রোগবালাই নিরাময় ও রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান ও উপকরণ প্রদান করে। বিশ্বের প্রায় ৭৫% মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন গাছ-গাছড়া থেকে তৈরি করা প্রাকৃতিক ঐতিহ্যবাহী ঔষুধের ওপর নির্ভর করে। এছাড়া বর্তমান বিশ্বে সিন্থেটিক যেসব ঔষুধপত্র রয়েছে সেগুলোর ৬০% প্রাথমিক উৎস হচ্ছে প্রাকৃতিক গাছ-গাছড়া বা উদ্ভিদ। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মানবসভ্যতায় আদিবাসীদের বিশাল অবদান রয়েছে। কেননা প্রকৃতি, পরিবেশ ও বন ধ্বংস করার সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই; বরং প্রকৃতি ও বনকে জীবনের অন্যতম বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করেই তাদের জীবন ও জীবিকা পরিচালনা করেছেন; প্রকৃতি থেকে গ্রহণ করেছেন অনেক সেবা এবং বিনিময়ে প্রকৃতি ও বনকে রেখেছেন সজীব ও জীবন্ত।
তাই বলা যায়, মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে আন্তঃনির্ভরশীলতা সম্পর্ক যত বেশি হবে ততবেশি লাভবান হবে মানুষ নিজে। কারণ একমাত্র মানুষই প্রকৃতির সব ধরনের উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। পরিবেশ ও প্রকৃতি সুরক্ষিত ও সমৃদ্ধ হলে মানুষ তো বটেই প্রকৃতির বিভিন্ন প্রাণও উপকৃত হবে। জলবায়ু পরিবর্তনও প্রশমিত হবে। কেননা যতগুলো কার্বন নির্গত হবে সেগুলো শোষণ করার মতো গাছ ও বন থাকবে। আদিবাসীরা তাদের জীবন ও জীবিকা দিয়েই প্রকৃতি, বন ও পরিবেশ রক্ষা করে চলেছেন। কম কার্বন জীবন-জীবিকা পরিচালনার মধ্য দিয়েই তারা পৃথিবীকে জলবায়ু দুর্যোগ থেকে রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
আজ বিশ্বের সবচে’ বেশি আলোচিত সমস্যা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। বন উজাড় ও প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনাসের কারণে দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসহ এদেশের মানুষের অভিযোজনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০০৮ সালে সরকার বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশলপত্র ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে যা Bangladesh Climate Change Strategy and Action Plan সংক্ষেপে (BCCSAP) নামে পরিচিত। এই কৌশলপত্র প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতির সাথে বাংলাদেশের মানুষের অভিযোজনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া। বাংলাদেশ সরকার এই কৌশলপত্র ও কর্মপরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে জলবায়ু সুরক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ ইতিমধ্যে নিয়েছে এবং আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার পথে রয়েছে। আমরা মনে করি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের সরকারি উদ্যোগে আদিবাসীদের অর্ন্তভুক্ত করলে আদিবাসীদের জীবন ও জীবিকা যেমন সুরক্ষা পাবে তেমনিভাবে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে সরকারও সফল হবে। কেননা আদিবাসীরা তো তাদের জীবন-জীবিকা দিয়েই এসব কাজ করে আসছেন। এছাড়া আদিবাসীদের বন ও প্রকৃতিনির্ভর জীবিকা স্বীকৃতি দিয়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতে হবে। এতে করে প্রাকৃতিকভাবেই বন, পরিবেশ ও প্রকৃতি সুরক্ষিত হবে।