করোনা মোকাবেলায় পাঠশালার উদ্যোগ
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
পদ্মা পাড়ের পাঠশালা যুবদের একটি সমন্বিত উদ্যোগ। যুবকগণ অবসর সময়ে দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার করানোর মাধ্যমে নিজেদের মেধাবিকাশে সহায়ক হয়। শিক্ষার্থীগণ পরিবারের মত লেখাপড়া মাধ্যমে সমাজের প্রতি কর্তব্য ও মেধাবিকাশে সুযোগ পায়। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবেলায় অন্যদের সহযোগিতা করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়। স্বেচ্ছায় সামাজিক কাজে উদ্বুদ্ধু সমাজের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। যুবটিমের সদস্যগণ ২০১৪ সালে বারসিক হরিরামপুরে স্বেচ্ছায় কাজ করার শিক্ষা অর্জন করেন। যুবকগণ দেশ ও সমাজের দায়বদ্ধতা থেকে সমাজের জন্য কাজ করে আসছে। বারসিক পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে পদ্মা পাড়ের পাঠশালাকে সহযোগিতা করে আসছে। পদ্মা পাড়ের পাঠশালা সমাজের উন্নয়নে স্বেচ্ছায় শ্রম ও দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষের পাশে থাকার প্রত্যয়ে হরিরামপুরের উজ্জ্বল নক্ষত্র।
করোনায় মানুষ যখন ঘরে বন্দি ঠিক তখন পদ্মাপাড়ের পাঠশালা ও যুব টিমের সদস্যগণ করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষসহ প্রাণিদের পাশে দাঁড়ানোর সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সমাজসেবক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় করোনা সচেতনতায় লিফলেট বিতরণ, পোষ্টার টানানো ও বিলবোর্ড টানোর কাজ করে। প্রচার কার্যক্রমের জন্য যুবকগণ স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে জনসচেতনতায় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বারসিক লিফলেট দিয়ে ও যুব টিমের সদস্যদের করোনা মোকাবেলায় জনসচেতনতায় মাইক দিয়ে প্রচার করেন।
পদ্মা পাড়ের পাঠশালার পরিচালক মীর নাদিম করোনায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া জন্য পিতা মাতার সাথে কথা বলেন। পড়ার অগ্রগতি জানার জন্য শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর নেওয়া হয়। বাড়িতে পরে থাকা গল্পের বই ও বড় ভাইদের পাঠ্য বই পড়তে উৎসাহ সৃষ্টি করেন। শিক্ষার্থীদের ছোট ভাই বোনদের আর্ট করোনোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাড়িতে আর্ট করা বিষয়গুলো স্কুল খোলা হলে জমা দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের আর্ট করার বিষয়গুলোকে বাছাই করে বারসিক পুরষ্কার দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
যুব টিমের সদস্যগণ করোনা মোকাবেলায় জনগণকে সচেতনতার পাশাপাশি পরিবারকে আর্থিক দিক দিয়ে সুরক্ষায় দিতে বাড়িতে ও মাঠে ধান, শাক-সবজি উৎপাদনের কাজ করেন। প্রতিবেশীদের কৃষি কাজের আগ্রহ সৃষ্টির জন্য বীজ বিনিময়ে ও জৈব উপায়ে চাষাবাদে উৎসাহ প্রদান করেন। যুবক টিমের সদস্যগণ মাঠে উৎপাদিত লাল শাক, ডাটা শাক, পুই শাক, পাটশাক, ডাটা, ঢেরস বিক্রয় করে আর্থিভাবে লাভবান হয়। তাছাড়াও মাচায় আছে ঝিঙ্গা, চাল কুমড়া গাছ। মাঠে আমন মৌসুমে ডেপর, দিঘা, আমশাইর ধান চাষ করে।
করোনায় সরকার লক ডাউনের ঘোষণা দিলে খেটে খাওয়া মানুষদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হরিরামপুরে কৃষি শ্রমিক, নৌকা শ্রমিক, কাঠ মিস্ত্রি, রড মিস্ত্রি, রাজ মিস্ত্রি, নাপিত, কুমার, কামার, ব্যবসায়ী, ঢাকায় যারা কাজ করতেন তারা বাড়িতে বসে গেলে কষ্ট তাদের বাড়তে থাকে। চরের কৃষকদের হাট-বাজার বন্ধ হয়ে গেলে কৃষি পণ্য বিক্রয় করতে না পারায় আর্থিক সংকটে পরে। কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদ বৃদ্ধির জন্য বীজ বিনিময়ে সহযোগিতার বাড়ে। কৃষকগণ উৎপাদনে মনোযোগ দিয়ে আর্থিক সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পদ্মা পাড়ের পাঠশালা ও যুব টিমের সদস্যগণ খেটে খাওয়া মানুষের পাশে খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেন। বারসিক কৃষকদের পরামর্শ, শাক-সবজির বীজ দিয়ে ও বিনিময়ে উৎসাহ প্রদান করেন। কৃষক পর্যায়ে পতিত জায়গায় জৈব উপায়ে চাষাবাদে উদ্যোগ সৃষ্টি করে।
পদ্মা পাড়ের পাঠশালা ও যুব টিমের সদস্যগণ করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় জনসচেতনতার পাশাপাশি খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে শক্তি সাহস যোগিয়েছেন। দুর্যোগ মোকাবেলায় নিজেদের মনোবল আরো শক্তিশালী হয়েছে সমাজসেবক ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়ে কাজ করায়। আমরা যুবকগণ স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে মানুষসহ প্রাণিদের পাশে থাকতে পারায়। আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে আমরা নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সাথে যুক্ত হচ্ছে যুবকগণ আমরা করোনা মোকাবেলায় সফল হবো।