বোরো ধানে পোকা দমনে পাখি
ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর সরকার
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। প্রাচীন পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে ফসল উৎপাদনে যুগে যুগে চাষাবাদে এসেছে অনেক পরিবর্তন। দেশীয় পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সবে। সহজে ক্ষতিকারক পোকাঁ দমন ও অথনৈতিক ভাবে সাশ্রয় হওয়ায় কৃষকদের এ পদ্ধতি ব্যবহারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এ পদ্ধতি।
এর মধ্যে এক অদৃশ্যশক্তি করোনা নামে ভাইরাস যখন সমগ্র বিশ্বকে আক্রান্ত করেছে; তখন প্রকৃতি তার নিজস্ব রুপে চলছে। আলো, বাতাস, গাছপালা, নদী, বৃষ্টি সব কিছু ঠিকমত চলছে। পাখিরা মুক্ত আকাশে দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। করোনা যুদ্ধ কেবল মানুষকে নিয়ে- অন্যদের নিয়ে নয়। এই করোনা যুদ্ধে কৃষকরাও পিছিয়ে নাই। তাদের মাঠে বোরো ধান এই ধানেই হতে পারে করোনা যুদ্ধে জয়।
কৃষক তার নিত্য প্রয়োজনীয় সবজি বিক্রি ও পরিবহনে বাঁধা পাচ্ছে; আবার দামও কম পাচ্ছে। তাতেও কৃষকরা পিছিয়ে নেই; তাদের কৃষি কাজ নিয়ে করোনা নামক অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে জয়ী হতে হবে। তাদের চিন্তা শুধু নিজেদের জন্য নয় পৃথিবীর সকল প্রাণীদের নিয়ে। কৃষক ফসল ফলাতে পারলে দেশ ও জাতি খাবার পাবে। তারপরও দেখা যায় কৃষক অবহেলিত। তবুও থেমে নেই কৃষকেরা।
কৃষকদের বন্ধু হয়ে আসছে প্রকৃতির মুক্ত পরিবেশে উড়ন্ত কালো পাখি ফেচকা। এ পাখির পাকস্থলী খুব শক্তিশালী এনজাইম থাকায় সে বিষাক্ত পোঁকা-মাকড় খেয়ে হজম করতে পারে। তেমনী ঘটনা ঘটছে ঘিওর উপজেলার ঠাটাংগা, গাংডুবী, কেল্লাই গ্রামের কৃষকের বোরো ধান ক্ষেতে পাখি বসে জমিতে সবুজ ফড়িং, সাদা ফড়িং, মাজরা পোকার ডিম খেয়ে কৃষকদের ধান রক্ষা করে যাচ্ছে। ফড়িং পোঁকা ধানের পাতা খেয়ে ফেলে এতে ধানের ভিতর চিটা ও ফলন কম হয়।
গাংডুবী কৃষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল কুমার মন্ডল বলেন, “আমাদের এলাকায় বারসিক কৃষিপ্রাণ বৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিভিন্ন কাজ করে থাকে। কৃষিকাজ ও মাঠে মাঠে কৃষকদের সাথে কাজ করে চলছে সেই জন্য কৃষকরা তাদের জমিতে এখন নিয়মিত ঝাটাঁ পুতে দেয়- সেখনে পাখি বসে ক্ষেতের পোকাঁ খায় এবং পাখির বিষ্ঠা থেকে কৃষকের জমিতে জৈব সার তৈরী হয়। এতে কৃষকদের অনেক টাকা কম লাগে, জমিও উর্বর হয়”। গগণ আলী ৫০ শতাংশ জমিতে বোরো মৌসুমে ব্রি-২৯ জাতের ধান রোপন করে ঝাঁটা পুতে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “পাখি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোঁকা খায়। এতে তার জমিতে এখনো পোঁকায় ক্ষতি করতে পারেনি, তার জমির আশে পাশে সবাই জমিতে ঝাঁটা পুতে দিয়ে সুফল পাচ্ছে। কৃষক গগন আলী বলেন, “কোম্পানীর এজেন্টেদের পরামর্শে ধানের ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার করে পরিবেশের ক্ষতি ও কৃষকরা নানা ধরনের রোগে ভুগছেন। অজানা কীটনাশক ব্যবহার করে ধানের ক্ষেতে উর্বরকারী ব্যাকটেরিয়া ও ধানের উপকারী পাখির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এ দিক থেকে আমরা লাভবান হচ্ছি।”
কৃষকরা মনে করেন এভাবে পাখি দিয়ে পোকাঁ দমন করা সম্ভব । পাখি আমাদের পরম বন্ধু; তাদের রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।