পরিবেশ সংরক্ষণ ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে গ্রাম পর্যায়ে বৃক্ষ রোপণ
নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমি
এখন বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাস, এখন দেশব্যাপী প্রায় প্রতিদিনই মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে বৃষ্টিপাত অঞ্চল হিসেবে খ্যাত ভারতের চেরাপুঞ্জি সংলগ্ন সীমান্ত এলাকাগুলোতে পাহাড়ি ঢলসহ আগাম বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা এবং চেরাপুঞ্জি সন্নিকটে হওয়ায় নেত্রকোনা অঞ্চলেও জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। নিয়মিত বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ অঞ্চলে বৃক্ষ রোপণের উত্তম সময় এখন। নিয়মিত বৃষ্টিপাতের সুযোগ নিয়ে নেত্রকোনা অঞ্চলের বৃক্ষপ্রেমী জনগোষ্ঠী, শিক্ষার্থী ও যুবরা সাধ্যমত তাদের পছন্দের ফলদ, কাঠ ও ঔষধি গাছের চারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তার ধারে এবং বসতভিটায় রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে।
কাইলাটি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দা রক্তের বন্ধন যুব সংগঠন, অক্সিজেন যুব সংগঠন ও ফুল-পাখি কিশোরী সংগঠনের উদ্যোগে সম্প্রতি এলাকার পরিবেশ সুরক্ষা এবং গ্রামের জনগোষ্ঠীর পুষ্টির উৎস বৃদ্ধি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে বালি আব্বাসীয় উচ্চ বিদ্যালয় এবং মৌজেবালি শহিদিয়া আলিম মাদ্রাসা ক্যাম্পাস ও দরুণবালি গ্রামে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কাইলাটি ইউনিয়নের স্থানীয় সরকার প্রধান (চেয়ারম্যান) নাজমুল হক বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচিটি উদ্বোধন করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাইলাটি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার ও দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষসহ সকল শিক্ষকগণ। যুব সংগঠনের সাথে দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষসহ সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচিটি সাফল্যমন্ডিত করে তুলেন। বারসিক’র নিকট থেকে চারা সহযোগিতা নিয়ে বালি আব্বাসীয় উচ্চ বিদ্যালয় ও মৌজেবালি শহিদিয়া আলিম মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে ৫০টি নিম, ৩০টি কৃষ্ণচুড়া, ২০টি কাঁঠাল ও ২০টি সাজনা ডাল রোপণ করা হয়। যুব ও কিশোরী সংগঠন ত্রয়ের সদস্যদের উদ্যোগে দরুণবালি গ্রামে বিভিন্ন পরিবারের বসতভিটায় ১৫০টি সাজনার ডাল রোপণ করা হয়।
বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি উপলক্ষে আলোচনায় কাইলাটি ইউনিয়নের স্থানীয় সরকার প্রধান (চেয়ারম্যান) নাজমূল হক বলেন,“সুষ্ঠু ও সুন্দর জীবনের জন্য প্রয়োজন সুন্দর পরিবেশ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের। আর সুন্দর পরিবেশের জন্য প্রয়োজন বৈচিত্র্যময়তার। বৈচিত্র্যময় গাছ-পালা (কাঠ, ফলদ, ঔষধি ও সৌন্দর্য বর্ধনকারী গাছ) আমাদের বিশুদ্ধ অক্সিজেন ও নির্মল বায়ু ও পুষ্টির যোগান দেয়ার পাশাপাশি বাহারী ফুলের সৌন্দর্য্যে আমাদের মনকে আনন্দ দেয়। তাই উত্তম পরিবেশ গড়ে তুলতে সকলকে সাধ্যমত বৃক্ষ রোপণ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফল ও ঔষধি গাছ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও পুষ্টি পাই। ঔষধি উদ্ভিদ হাতের কাছে থাকলে আমরা জরুরি মূহুর্তে প্রাথমিক চিকিৎসা করতে পারি। ফুল সকলকেই আনন্দ দেয়। রাস্তায় বা কোন প্রতিষ্ঠানে কৃষ্ণচুড়া ফুল গাছ থাকলে এ মৌসুমে সে রাস্তা বা প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্য অনেক বেড়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘সাজনা বিশ্বের একটি মহামূল্যবান পুষ্টি সমৃদ্ধ উদ্ভিদ। সাজনার পাতা ও ডাটা খুবই উৎকৃষ্ট মানের সবজি। সাজনা পাতায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, আমিষ, পটাশিয়ামসহ প্রায় সব ধরণের পুষ্টি রয়েছে। সাজনা ডাটার চেয়ে সাজনা পাতা বেশি উপকারী। সাজনা চাষে তেমন কোন খরচও নেই, শুধুমাত্র ডাল মাটিতে ভালোভাবে রোপণ করলেই হলো। সাজনা পাতা শুকিয়ে সংরক্ষণ করে সারা বছর চা করে খেলে শরীরের অনেক উপকার হয়। সাজনা পাতা শরীরের কোষ্ঠ্যকাঠিন্য নিরাময়, আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ, উচ্চ রক্তচাপ কমায়, চুলপড়া বন্ধ করাসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করে। এছাড়াও সাজনা ডাটার চাহিদা ও বাজার মূল্যও অনেক। সাজনা পাতার চাহিদাও বাজারে অনেক। তাই আমরা সকলেই যদি নিজ নিজ বসতভিটায় দু’টি করে সাজনা ডাল রোপন করি তাহলে আমাদের পুষ্টির চাহিদা যেমন পূরণ হবে, তেমনি বাজারে বিক্রি করে পরিবারের আয় বৃদ্ধি করতে পারবো।” তিনি সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গ্রামের জনগোষ্ঠীকে বৃক্ষ রোপণের এই মৌসুমে বসতভিটা ও জমি পতিত না রেখে সাধ্যমত বৈচিত্র্যময় বৃক্ষ রোপণের আহবান জানান। তিনি এলাকার পরিবেশ সুরক্ষায় যুব সংগঠনগুলোর এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
যুব সংগঠনের নেতৃস্থানীয় সদস্য পরাগ আহম্মদ বলেন, ‘আমরা সাংগঠনিক উদ্যোগে (অক্সিজেন যুব সংগঠন, রক্তের বন্ধন যুব সংগঠন ও ফুল-পাখি কিশোরী সংগঠন) প্রতি বছর বৃক্ষ রোপণের মৌসুমে বালুয়াকান্দা, বালি ও দরুনবালি গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে সাধ্যমত ফলদ, ঔষধি ও সবজি জাতীয় গাছের চারা রোপণ করে থাকি। সে কাজেরই ধারাবাহিকতায় এ মৌসুমেও আমরা সাংগঠনিক উদ্যোগে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রামের যেসব পরিবারে সাজনা ও নিম গাছ নেই সেসব পরিবারে নিম ও সাজনা ডাল রোপণের উদ্যোগ নিয়েছি। চলতি মৌসুমে আমরা গ্রামে ১৫০টি সাজনার ডাল রোপণের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা বালি আব্বাসীয় উচ্চ বিদ্যালয় ও মৌজেবালি শহিদিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গন এবং দরুনবালি গ্রামে চার ধরণের (নিম, কাঁঠাল, কৃষ্ণচুড়া ও সাজনা) ২৭০টি গাছের চারা ও ডাল রোপনের উদ্যোগ নিয়েছি।’
বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে যুব সংগঠনের যারা নেতৃত্ব দেন তাদের মধ্যে রক্তের বন্ধন যুব সংগঠনের এস.এম ইউসুফ আলী, দুলন, ইমন, হারুন, রাহাদ, রিয়াদ ও পিয়াস উল্লেখযোগ্য।