সাইকেল চালিয়ে আমরা সময়ের মধ্যে স্কুলে যেতে পারি
সত্যরঞ্জন সাহা হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
‘মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের পদ্মার পাড়ে বাহিরচরে আমাদের বাড়ি। আমরা প্রতি বছর বর্ষা ও বন্যার পানিতে আমাদের ফসল ও প্রাণি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমরা দুর্যোগ মোকাবেলা করেই জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকি। তেমনিভাবে লেখাপড়ার জন্য মাধ্যমিক স্কুল প্রায় ৩ কিলো দূরে হওয়ায়, এলাকার মেয়েদের লেখা পড়ার জন্য একধরনের যুুদ্ধ করতে হয়। দুরে স্কুল হওয়ায় পরিবার থেকে মেয়েদের লেখাপড়া করতে দেওয়া আগ্রহ কম। তবে বারসিক নারীদের শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায় কাজ করছে। নারীদের সাইকেল চালিয়ে লেখাপড়া করার ক্ষেত্রে উৎসাহ দিয়ে আসছে।’
উপরোক্ত বক্তব্যটি হরিরামপুরের বাহিরচর এলাকার কিশোরীদের। সম্প্রতি বারসিক’র আয়োজিত একটি সভায় এ কথা বলে তারা। আলোচনায় বাহিরচর সাইকেল আমার স্বাধীনতা কিশোরী সংগঠনের সভাপতি সুমি আক্তার বলেন, ‘আমাদের গ্রামের মেয়েরা আগে সাইকেল চালাতে পারত না। নারীরা দূরের স্কুলে পায়ে হেটে যেতো। তাছাড়াও পরিবারের মেয়েদের লেখা পড়ার আগ্রহ কম থাকায়, নারী শিক্ষা ছিল কম। নারী শিক্ষা কম থাকায় আগে বাল্য বিবাহ হতো। বারসিক স্কুলে ও গ্রামের পরিবারের সাথে আলোচনা করে বাল্য বিবাহ রোধ ও নারীদের সাইকেল চালানো উৎসাহিত করে আসছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিক্ষার প্রয়োজনে প্রথমে সাইকেল চালাতে শিখি ও স্কুলে যাই। গ্রামের অন্যান্যরা মেয়েরা সাইকেল চালানো দেখে উৎসাহিত হয়। মেয়েদের সাইকেল চালানো শুরু ভালোভাবে করতে পারাই বর্তমানে স্কুলে ও প্রাইভেট পড়ারর ক্ষেত্রে খুবই উপকারে আসে।’
বাহিরচর সাইকেল আমার স্বাধীনতা কিশোরী সংগঠনের সদস্য লামিয়া আক্তার বলেন, ‘বাহিরচরে মেয়েরা সাইকেল চালায়, এটা আমাদের সুনাম মনে করি। সাইকেল চালানোর জন্য আমরা সহজে স্কুলে যেতে পারি, প্রাইভেট পড়তে পারি। আমাদের গ্রামে প্রায় মেয়েরা সাইকেল চালায়, কিন্তু পাশের গ্রামেই মেয়েরা সাইকেল চালাতে পারে না। ফলে তাদের লেখাপড়া করতে কষ্ট হয়। আমাদের সাইকেল চালাতে বারসিক উৎসাহ দিয়ে সহযোগিতা করছে। তবে আমাদের কথা শুনে, আমাদের সাইকেল চালানো দেখে, অন্য গ্রামের মেয়েরা সাইকেল চালাতে শুরু করেছে। আমাদের কাছে ভালো লাগছে আমরা নিজে শিখে অন্যদের শিখাতে সহযোগিতা করছি।’
হরিরামপুর বাহিরচরের কৃষক গবেষক শহীদ বিশ^াস বলেন, ‘এখন ছেলে মেয়ে সবাইকে আমরা সমভাবে মানুষ করতে চাই। সকল ছেলে মেয়েকে লেখা পড়া শিখাইতে চাই। কিন্তু লেখা পড়ার জন্য স্কুল দূরে হলে যাতায়াত বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। গ্রাম থেকে অনেক পরিবারেরই সম্ভব না প্রতিদিন যাতাযাত খরচ দিয়ে লেখাপড়ার করার। এক্ষেত্রে ছেলে মেয়েরা সাইকেল চালাতে পারলে শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় সহায়ক হয়। গ্রামে মেয়েদের সাইকের চালাতে এখও অনেক পরিবার দেয় না। এ সমস্যা সমাধানে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও পরিবারকে আরো বেশি এগিয়ে আসতে হবে। নারী শিক্ষায় ও সাইকেল চালাতে সহযোগিতা করতে হবে।’
উল্লেখ্য, গত ৮ বছর আগে এলাকার মেয়েরা এমএ রাজ্জাক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও পাটগ্রাম অনার্থ বন্ধু সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পায়ে হেটে লেখা পড়া করত। বারসিক থেকে উদ্যোগ নিয়ে ২০১৫ সালে এমএ রাজ্জাক ও পাটগ্রাম স্কুলের ছাত্রীদের অংশগ্রহণে সাইকেল চালানো উদ্বুদ্ধকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রাম পর্যায়ে আলোচনা করে মেয়েদের সাইকেল চালানো পরিবারের অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। পরিবারের উদ্যোগে মেয়েরা সাইকেল চালানো শিখে। বাড়িতে ভালো ভাবে সাইকেল চালানোর শিক্ষার মাধ্যমে স্কুলের সাইকেল নিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা সাইকেল চালানো দেখে অন্যরাও শিখে। গ্রামের মেয়েরা সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাওয়ায় লেখাপড়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার কষ্ট দূর হয়।