তালপাতার শব্দে ইঁদুর পালিয়ে যায়
ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে শ্যাময়েল হাসদা
ইঁদুর আমাদের প্রাণবৈচিত্র্যের একটি প্রাণী। প্রাণবৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষা করতে ইঁদুরের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সময়ে সময়ে ইঁদুর ফসল ও কৃষকের শত্রু হিসেবে হানা দেয়। জমির শস্য ও গোলার ফসল রক্ষার্থে ইঁদুর না মেরেও লোকায়ত চর্চা ও পদ্ধতির মাধ্যমে ফসল রক্ষা করা যায়।
ঘিওর উপজেলা নালী ইউনিয়নের হেলাচিয়া চকে দেখা যায়, বোরো ধান ক্ষেতে বাঁশের সাথে তালপাতা (তালের ডাইগা) বেঁধে দেওয়া হয়েছে। দেখে অবাক হলেও সত্যিটা হলো ক্ষেতের ইঁদুর তাড়াতে ও পাখি বসতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন হেলাচিয়া গ্রামের কয়েকজন কৃষক। দিনের বেলায় পাখি বসে এবং পোকামাকড় খায়। আর রাতের বেলায় ইঁদুর তাড়াতে সাহায্য করে। এটা হচ্ছে ইঁদুর তাড়ানোর অতি প্রাচীন পদ্ধতি। এটা অনেক বেশি কার্যকরী ও পরিবেশবান্ধব বলে কৃষকরা জানান।
কৌতুহলবশত ক্ষেতে তালপাতার এমন ব্যবহার কেন? জানতে চাইলে কৃষক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ ধান খেতে ইঁদুরের আক্রমণে অনেক ধানের গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছের গোঁড়া কেটে দিয়েছে। ক্ষেতে অনেক বড় বড় গর্ত তৈরি করছে। দিনের বেলা মানুষের উপস্থিতির কারণে তারা কম আক্রমণ করে। তবে রাত হলে উপদ্রব বেড়ে যায়। তাই এই তালপাতা (তালের ডাইগা) ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো শব্দ পেলে ইঁদুর স্থান পরিবর্তন করে। রাতে শুকনা তালপাতা বাতাসে নড়ে উঠে, শব্দ করে আর এ শব্দে ইঁদুর পালিয়ে যায়। এতে জমিতে ইঁদুরের উপদ্রব কমে যায় এবং অনেকের তুলনায় ফলন ভালো পাওয়া যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইঁদুরের প্রধান শত্রু পেঁচা, চিল, সাপ, গুইসাপ, শিয়াল, বেজি, বন বিড়াল প্রভৃতি দিয়ে জৈবিক উপায়ে ইঁদুর দমন করা গেলে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা পাবে। সেইসাথে কৃষকও স্বল্প খরচায় ফসলি জমির ও গোলার শস্য ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতির থেকে রক্ষা করতে পারবে। কাজেই ইঁদুর ভোজী প্রাণীদের বংশ বিস্তারের যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। এখন এলাকায় ইঁদুর তাড়াতে লোকজ পদ্ধতিতে ব্যবহার করছেন অনেকে।’