বৈষম্য নিরসন ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ সামাজিক সংহতি

সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শিমুল বিশ্বাস
যে কোন ধরনের বৈষম্য দুরীকরণ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় জনগোষ্ঠীর মধ্যে একতা ও সংহতির বিকল্প নাই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, যারা সুবিধা বঞ্চিত এবং বৈষম্যর শিকার হয় তারা হলেন দেশের দ্ররিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। যাদের নাই কোন একতা, নাই কোন ঐক্যবন্ধ মঞ্চ। ফলে তারা দেশের সব ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় বা বৈষম্যর শিকার হয়। এ ধারণা থেকেই সম্প্রতি মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলায় সামাজিক সমাবেশন ও সংহতি মঞ্চের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন বিষয়ে প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে বারসিক।


প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ছিলো সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের কৌশলগত দক্ষতা উন্নয়ন করা। যাতে সুবিধা বঞ্চিত মানুষগুলো অধিকারভিত্তিক কাজে এবং শক্তিশালী সংহতি মঞ্চ বির্নিমাণে নিজেদের ধারণাগত মাত্রা, অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণে সক্ষম হন, সমাজে তাদের অবস্থা ও অবস্থান, ভূমিকা, অবদান ও অন্যান্যদের সঙ্গে, বিশেষ করে ক্ষমতা কাঠামোর সাথে তাদের সম্পর্ককে বুঝতে ও বিশ্লেষণ করতে পারেন। সেই সাথে মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা কীভাবে দ্বা›িদ্বক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে এবং এ ক্ষেত্রে করণীয় ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে নিজেদেরকে সংগঠিত ও সুসংহত করে অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেন।

গত ২৫ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর ৪ দিনব্যাপি প্রশিক্ষণে সিংগাইর উপজেলায় পরিচালিত কৃষকের অধিকর কর্মসূচির আওতাধীন ১২টি কৃষক সংগঠনের মোট ২০ জন প্রতিনিধি এবং এ প্রকল্পের ৫জন কর্মী সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। দাতা সংস্থা দি সোয়ালোজ ইন্ডিয়া-বাংলাদেশের সহায়তায় প্রশিক্ষণটি পরিচালনা করেন ক্লিও বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। উক্ত প্রশিক্ষণে কৃষক প্রতিনিধি এবং প্রকল্পের কর্মীগণ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বারসিক’র নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত সেন, ক্লিও বাংলাদেশের উপদেষ্টা সোহেল ইবনে আলী, সোয়ালোজ প্রতিনিধি শিউলী হক প্রমুখ। উক্ত প্রশিক্ষণটি পরিচালনায় ক্লিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সহায়কের ভূমিকা পালন করেন জামিল মোস্তাক।


গত ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১০:০০টায় বারসিক’ নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত সেন, সোয়ালোজ প্রতিনিধি শিউলী হক এবং ক্লিও বাংলাদেশের উপদেষ্টা সোহেল ইবনে আলী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে মোববাতি প্রজ্জলনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। এরপর সহায়ক জামিল মোস্তাক সাবলিলভাবে সকল পর্যায়ের অংশগ্রহণকারীদের সম্পৃক্ত করে প্রশিক্ষণের নির্ধারিত বিষয়বস্তুগুলোর স্বচ্ছ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেন।


চার দিনব্যাপি প্রশিক্ষণের আলোচ্য সূচিতে ছিলো: এ্যাক্টর ম্যাপিং, কনফ্লিক্ট ট্রি বিশ্ল্ষেণ, দ্ব›দ্ব ত্রিভূজ ও ডু নো হার্ম, সম্পদ সমাবেশীকরণ ও ক্ষমতায়ন, অধিকারভিত্তিক কাজ ও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাজ বিশ্লেষণ, শ্রম বিশ্লেষণ ও আন্তঃশ্রেণী নির্ভরশীলতা, অধিকারভিত্তিক পন্থা, কমিউনিটি মবিলাইজেশন, অধিকার প্রতিষ্ঠায় এ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং, জেন্ডার সমতা ও ন্যায্যতা, প্রশিক্ষণ যোগাযোগ ও সহায়তাকরণ দক্ষতা, সাংগঠনিক গতিশীলতা ও শক্তিশালী সংহতি মঞ্চ বিনির্মাণ কোর্স পরিচালনার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।


মূলত: প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়াটি ছিলো অভিজ্ঞতাভিত্তিক, অনুশীলনমূলক, প্রতিফলনমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক। যে কারণে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিলো যথেষ্ট প্রশংসনীয়। তাছাড়া প্রশিক্ষণ সহায়ক জামিল মোস্তাক এবং উপদেষ্টা সোহেল ইবনে আলীর কৌশলী উপস্থাপনা ছিলো যথেষ্ট প্রাণবন্ত। ফলে এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপরোক্ত বিষয়বস্তুগুলোর উপর একটা পরিস্কার ধারণা অর্জন করতে পেরেছেন বলে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীগণ মন্তব্য করেন। অংশগ্রহণকারীগণ মনে করছেন, বৈষম্য দূরীকরণ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সমমনা মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে এ প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান অনেক গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কৃষক প্রতিনিধিগণ এটাও বলেছেন যে, বিগত দিনে সংগঠনের মাধ্যমে এলাকার তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করে এসেছেন তারা, সমস্যা সৃষ্টির কারণগুলো অনুসন্ধান করার কথা ভাবেননি কখনো। মুলত: এ প্রশিক্ষণ অংশগ্রহণকারীদেরকে এলাকার প্রভাবশালী মানুষ বা ক্ষমতাধর মানুষ, তাদের সহায়তাকারী এবং কে তাদের বিরোধীতাকারী এবং এসব ক্ষমতাধর মানুষের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক কি তা বিশ্লেষণ করার দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করবে।

happy wheels 2

Comments