জীবে প্রেম করে যেই জন

:: রাজশাহী থেকে মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ

Untitledতাঁর নাম শ্রীমতী মমতা রাণী। মমতা নামের সাথে তাঁর ব্যক্তি জীবনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পরম মমতা ও ভালোবাসায় আগলে রেখেছেন তার পালিত প্রাণীগুলোকে। আমরা রাজশাহীর তানোর উপজেলার হরিদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমতি মমতা রাণীর (৫০) কথা বলছি। লেখাপড়া না জানা এই নারী বিগত ১২ বছর ধরেই পশুপালন করতে শুরু করেন। প্রথমে হাঁস পালন এবং পরে হাঁসের বিক্রি টাকা জমিয়ে তিনি প্রথম দুটি ছাগল কিনে পালন শুরু করেন। এভাবে একটি একটি করে তিনি অনেকগুলো ছাগলের মালিক হয়েছেন। গত বছর মমতা রাণীর মোট ৭২টি ছাগল ছিলো। এর মধ্যে কয়েকটি বিক্রি করেছেন এবং বেশ কয়েকটি নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। বর্তমানে তার কাছে ৫৩টি ছাগল রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, “ছাগল পালনে আমার যে খুব বেশি লাভ হয় তা নয়; কিন্তু জীবের মায়ায় পালন করি।”

মমতা রাণীর নিজের বাড়ি বলতে গেলে নেই। পরিবারের সবাই বসবাস করে সেই বাড়ির বিপরীত দিকে তিনি একা বাস করেন। ছোট্ট বাড়িটির চারপাশে ছাগল আর ছাগল। ছাগলসহ বিভিন্ন পশু-প্রাণী পালনে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে নানাভাবে বারণ করলেও  তিনি তা শোনেননি। ছাগলসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রতি তার মায়া ও ভালোবাসা থেকেই তিনি তা পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন। প্রাণীর প্রতি তার ভালোবাসার প্রমাণ মেলে যখন তাঁর সাথে আলোচনা করি। তিনি যেখানে ঘুমান সেখানেই ছাগলসহ অন্যান্য প্রাণীগুলো থাকে। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে তিনি ছাগলগুলোর যন্ত নেন, খাওয়ান। ছাগল, বিড়ালগুলোও কখনো তার গাল চেটে বা কান চুষে তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। এতে তিনি মোটেও বিরক্ত নন।

ছাগল ছাড়াও তার তিনি ৪টি কুকুর এবং ৪টি বিড়াল পালন করেন। সামর্থ্য থাকলে তিনি আরও অনেক পশুপ্রাণী পালন করবেন বলে জানান। এ প্রাণীগুলো তার ও ছাগুলের নিরাপত্তা দেয়। তার ভাষ্যমতে, “এখন সন্ধা লাগলেই খাবার না পেয়ে বাড়ির আশেপাশে শিয়াল আসে, চারটি কুকুর থাকায় আমার বাড়ির আশেপাশে কোন শিয়াল আসতে পারে না। কোন ছাগলকে শিয়ালের পেটে যেতেও দেয় না। আর বিড়ালগুলো ঘরে ইঁদুর আসলে সঙ্গে সঙ্গে ধরে খেয়ে ফেলে। রাতের বেলা বাড়িতে চোর আসলে কুকুরগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। আবার সাপ জাতীয় কিছু আসলে বিড়ালগুলো অন্য রকমের শব্দ করে।” তাই নিজে অভুক্ত থাকলেও পালিত প্রাণীগুলোকে তিনি কখনও অভুক্ত রাখেন না। তিনি বলেন, “আমি নিজে না খেলেও এদের আমি খেতে দিই।” অন্যদিকে অন্য কারও পশু-প্রাণী যদি অবহেলায় ও অযত্নে পড়ে থাকে সেটাও তাকে পীড়া দেয়। তিনি পশু-প্রাণীর মালিকদের তাগাদা দেন যাতে তারা তাদের প্রাণীর প্রতি যত্নবান হন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অনেক সময় বৃষ্টির মধ্যে কারও গরু, ছাগল বেঁধে রাখতে দেখলে আমার খুব মায়া লাগে, তাদের মালিকদের ডেকে বলি জীবদের কষ্ট দিস না, তোরা জানিস না! জীবদের কষ্ট দিতে নাই, কষ্ট দিলে মরার পরে মানব কুলে জন্ম হবে না।”

মমতা রাণী শুধু ছাগল, হাঁস, বিড়াল বা কুকুর নয়; তিনি স্বপ্ন দেখেন আরও অনেকগুলো প্রাণী লালন পালন করার। তবে সামর্থ না থাকায় যতটুকু পারেন ততটুকুই করেছেন। পরিবারের সমর্থন না পাবার কারণে তার এ উদ্যোগ বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি বলে তিনি জানান। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের পশুর রোগের কারণেও তিনি তার স্বপ্ন এখন পর্যন্ত পূরণ করতে পারেননি। পশু পালনে নানারকম সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় তাকে। প্রায়ই তাঁর ছাগল মরে। কিন্তু কোথাও প্রতিকার পান না। সরকারি হাসপাতালে গেলে টাকা ছাড়াও কোন ওষুধপত্র দিতে চায় না-এ তার অভিযোগ। তাই বাধ্য হয়ে তিনি স্থানীয় ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ান। এতে করে বছরে তার ৮ থেকে ১০ হাজারের মতো খরচ হয়। তিনি মনে করেন, সরকারি বা বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে তিনি আরও ভালোভাবে পশুপালন ও যত্ন করতে পারতেন। তিনি ছোট্ট একটি আবদার করছেন যে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে যাতে বিনামূল্যে পশু-প্রাণীর চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়।

happy wheels 2

Comments