হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় কাঁঠাল
সাতক্ষীরা থেকে বাহলুল করিম:
বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে অন্যতম একটি ফল এটি। কাঁঠাল কেউবা খাঁয় এঁচোড় রান্না করে আবার কেউবা খায় পাঁকিয়ে। কাঁচা বা পাঁকা কাঁঠাল উভয়ই খেতে খুব সুস্বাদু। সুমিষ্ট রসে ভরা এই ফলে রয়েছে নানবিধ পুষ্টি গুণাগুণ। এছাড়া হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব দূর করতে, হাঁফানি বা এলার্জি সমস্যায়, মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে, ডায়রিয়া সমস্যায় কাঁঠাল ও এর শিকড় খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই কাঁঠাল গাছ দেখা যায়। সাধারণত লালচে মাটি ও উঁচু জায়গায় কাঁঠাল গাছ বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এটি একটি মাঝারি আকারের কাষ্ঠল প্রকৃতির বৃক্ষ। এর কা- শক্ত ও পুরু। এর শিকড় মাটির দুই মিটার পর্যন্ত যেতে পারে। কা- লম্বায় ৩০-৩৫ ফুট ও ব্যাসের আকৃতি ১০-১৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এর শাখা প্রশাখা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
কাঁঠালের পাতা গাঢ় সবুজ রঙের হয়ে থাকে। এর পাতা দেখতে উপবৃত্তাকার ও মসৃণ। পাতার বোটা শক্ত প্রকৃতির হয়। শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগ থেকে নতুন পাতা গজায়। পাতাগুলো প্রাথমিক অবস্থায় হালকা সবুজ বর্ণের হয় ও পরিণত হলে গাঢ় সবুজ বর্ণ ধারণ করে।
কাঁঠাল গাছ রোপণের সাত-আট বছরের মধ্যে ফল আসে। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে গাছে ফুল আসে। ফুল প্রাথমিক অবস্থায় ডিঙ্গি নৌকার মতো খোলস দ্বারা আবৃত থাকে। ফুল ফোটার তিন-চারদিনের মধ্যেই এর পরাগায়ন হয়ে যায়। এরপর আস্তে আস্তে ফল হয়। কাঁঠাল কাঁচা অবস্থায় সবুজ বা হলুদাভ বর্ণের হয়ে থাকে। পাঁকলে লালচে হলুদাভ বর্ণের হয়। কিছু কাঁঠাল আবার পাঁকা ও কাঁচা উভয় আবস্থাতেই লালচে বর্ণের হয়।
কাঁঠালের বাইরের আবরণ বেশ পুরু। এর খোসায় অসংখ্য কাঁটা থাকে। কিন্তু এই কাঁটা আবার ফোটে না। কাঁঠলের ভিতর রসালো কোষ বা কোয়া থাকে। এই কোষ বা কোয়া মিষ্টি ও টক স্বাদের হয়ে থাকে। কাঁঠাল আবার দুই প্রকার হয়ে থাকে। এর একটি রাসালো অপরটি খাঁজা। রসালো কাঁঠাল নরম প্রকৃতির হয়ে থাকে। আর খাঁজা কাঁঠাল শক্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে। কাঁঠালের কোষে বীজ বা দানা থাকে। এই বীজ রান্না করে বা পুড়িয়ে খাওয়া যায়।
এছাড়া কাঁচা অবস্থায় কাঁঠালের এঁচোড় সকলের কাছে খুবই জনপ্রিয়। সাতক্ষীরা জেলায় সবজি হিসেবে সকলের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে কাঁঠালের এঁচোড়। এঁচোড় ছোট-বড় সকলের কাছে খুবই প্রিয় একটি সবজি। এর বীজ বা দানা বাদামের মতো ভেজে বা পুঁড়িয়ে খাওয়া যায়। এছাড়া কাঁঠালে রয়েছে নানা পুষ্টি গুণাগুণ।
এ ব্যাপারে মৃগীডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা রেশমা খাতুন বলেন, “এঁচোড় খ্ুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি খাবার। হালকা বুট ডাল ও চিংড়ি মাছ দিয়ে এঁচোড় রান্না করলে খেতে খুব ভালো লাগে। ছোট-বড় সকলের কাছে খুবই জনপ্রিয় সবজি এটি। সকলেই এঁচোড় পছন্দ করে।”
সদর উপজেলার দক্ষিণ কাটিয়ার বাসিন্দা নার্গিস আক্তার বলেন, “কাঁঠাল রসে ভরা সুমিষ্ট একটি ফল। যখন কাঁঠাল পাঁকে এর সুমিষ্ট ঘ্রাণ সকলকে মোহিত করে। এর দানা রান্না করেও খাওয়া যায়। আবার পুঁড়িয়ে বা বাদামের মতো ভেজেও খাওয়া যায়। পাঁকা কাঁঠাল গর্ভবতী মা ও বাচ্চার স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এছাড়া কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। তাই নিয়মিত কাঁঠাল খেলে রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।”
এ ব্যাপারে শহরের পুষ্টির ফেরিওয়ালা বাবর আলী বলেন, “কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি গুণ। কাঁঠাল কাঁচায় রান্না করে খাওয়া যায় আবার পাঁকাও খাওয়া যায়। পাঁকা কাঁঠাল হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কাঁঠাল কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। মায়ের বুকের দুধের স্বল্পতায় চিকিৎসকরা প্রতিদিন কাঁঠাল খাওয়ার পরামর্শ দেন। হাঁফানি বা এলার্জিজনিত সমস্যায় ও ডায়রিয়া সমস্যায় কাঁঠালের শিকড় ওষুধের মতো কাজ করে।”
কাঁঠাল গাছের পাতা গবাদি পশুর একটি মজাদার খাদ্য। গাছ থেকে তৈরি হয় মুল্যবান আসবাবপত্র। কাঁঠাল ফল ও গাছের আঁঠালো কষ কাঠ বা বিভিন্ন পাত্রের ছিদ্র বন্ধ করার কাজে ব্যবহৃত হয়।
বিশ্ব মুক্তকোষ উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ‘কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম অৎঃড়পধৎঢ়ঁং যবঃবৎড়ঢ়যুষষঁং। এর ইংরেজী নাম ঔধপশভৎঁরঃ। এটি মোরাসিয়া পরিবারের আর্টোকার্পাস গোত্রের একটি ফল। কাঁচা কাঁঠালকে বলা হয় এঁচোড়।
ভারতীয় উপমহাদেশ বিশেষত বাংলাদেশ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে কাঁঠালের উৎপত্তি স্থান হিসেবে বিবেচিত। সাধারণত লালচে মাটি ও উঁচু এলাকায় এটি বেশী দেখা যায়। বাংলাদেশের মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং পার্বত্য এলাকায় কাঁঠালের চাষ বেশী হয়।
এছাড়া কাঁঠাল ওজন কমাতে সাহায্য করে। কাঁঠালের অন্যতম উপযোগিতা হল ভিটামিন সি। প্রাকৃতিকভাবে মানবদেহে ভিটামিন ‘সি’ তৈরি হয় না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে ভিটামিন ‘সি’। কাঁঠালে আছে ভিটামিন বি-৬; যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।