কাঁকড়া ধরে সংসার চলে গীতা সরদারের
সাতক্ষীরা থেকে সৈয়দা তৌহিদা ইসলাম নিশি
শ্যামনগর উপজেলার আবাদ চন্ডিপুর গ্রামের খেটে খাওয়া পরিবারের সংগ্রামী এক নারীর নাম গীতা সরদার। স্বামীর পাশাপাশি পরিবারের স্বচ্ছলতা আনতে এলাকার বিভিন্ন স্থানে কাঁকড়া খুঁজে বেড়ান তিনি। সকাল থেকে দুপুর অবধি চলতে থাকে তার এই সংগ্রাম। এলাকার বিভিন্ন নোনা পানি চলাচলের ড্রেন, নদীর পাশসহ বিভিন্ন স্থানে কাকড়া ধরার বড়শী দিয়ে কাঁকড়া আহরণ করেন গীতা সরদার।
উপজেলার পানখালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,ওয়াপদার নিচে দাঁড়িয়ে পানিতে বড়শী ফেলছেন তিনি। এক ধরনের লম্বা রশির মাথায় ইট ও বড়শী বেঁধে নদীতে ফেলে ধরা হয় কাঁকড়া। এছাড়াও এক প্রকার বিশেষ জাল ব্যবহার করেও ধরা হয় কাঁকড়া। গীতা সরদারের পাশে যেতেই মাথার কাপড় তুলে দেন গীতা সরদার।
তার কাছে কেন এভাবে কাঁকড়া ধরতে এসেছেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘সংসারের অভাব কাটাতে এখানে আসা। তার স্বামী এলাকায় বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে কামলা খাটেন।’ ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া এবং সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে তিনি প্রতিনিয়ত এভাবে কাঁকড়া ধরে থাকেন বলে জানা যায়। প্রতিদিন কাঁকড়া ধরে তিনি কত টাকা উপার্জন করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর অবধি এভাবে কাকড়া ধরতে থাকলে হয়তোবা ১০০-১৫০ টাকা আয় হতে পারে।’
এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে একই এলাকার বিভিন্ন স্থানে। গ্রামীণ নারীদের খেটে খাওয়া নতুন কিছু না হলেও কিছু কিছু কাজ একেবারেই ভিন্ন চিত্রের।এলাকার অন্যান্য পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের কাঁকড়া ধরার এই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। তবে এলাকার জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন জাল বা চাই দ্বারা মাছ শিকার করতে গিয়ে অনেকেই ছোট কাঁকড়া মেরে ফেলছেন। এতে করে কাঁকড়ার পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে নিয়মনিতি মেনে চলেই কাঁকড়া ধরা উচিত বলে মনে করেন এখানকার অধিকাংশ জেলে।
গীতা সরদার কতদিন যাবত এভাবে কাঁকড়া ধরছেন জানতে চাইলে তিনি বিগত ৬ বছর যাবত এভাবে কাকড়া ধরার কথা জানান। তিনি কাকড়া ধরার পরে এগুলো নিয়ে নিজেই বাজারজাত করেন বলেও জানান। নারী হওয়ার কারণে তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় বলেও জানান তিনি। তবে কোনো প্রতিকূলতা আজ পর্যন্ত তাঁকে হারাতে পারেনি একথা গর্বের সাথে জানান।