প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো উদ্ভিদগুলো পুষ্টির উৎস, নিরাময় করে রোগও
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম (শহিদ) ও অমৃত সরকার
বাড়ির আশেপাশে অনেক গাছপালা-ঝোপঝাড় থাকার কারণে যেখানে সেখানে জন্মায় নোনতা, সুনসুনি, ডুমুর, খোকসা, তেলাকুচার মতো অন্য অনেক উদ্ভিদ কিন্তু তিনি এই উদ্ভিদগুলোকে কখনই নষ্ট করেন না। কারণ সেখান থেকে পুষ্টির একটি উৎস খুঁজে নিয়েছেন। এভাবে কুড়িয়ে পাওয়া উদ্ভিদকে আগাছা হিসেবে না ফেলে দিয়ে পরিবারের পুষ্টির যোগান হিসেবে বিবেচনা করেন অঞ্জলী রাণী সূত্রধর (৪৬)। রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোকুল-মথুরা গ্রামের অঞ্জলী পেশায় গৃহিনী এবং স্বামী পেশায় একজন কৃষক ও কাঠ মিস্ত্রী। দুই ছেলে আর এক মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে অঞ্জলী রাণীর সংসার। অঞ্জলী সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই কুড়িয়ে পাওয়া উদ্ভিদগুলো খাবার হিসেবে ব্যবহার করেন।
এই কুড়িয়ে পাওয়া উদ্ভিদ কীভাবে তার সংসারের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে জায়গা করে নিলো সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে অঞ্জলী বলেন, “বিয়ের পর আমার শাশুরী মাঝে মাঝে পাশের ফসলের জমি, পতিত জমি থেকে বিভিন্ন ধরনের শাক তুলে নিয়ে এসে রান্না করতেন। সে শাকগুলোর স্বাদও ছিল ভালো।” শ্বাশুরির কাছ থেকে এই কুড়িয়ে পাওয়া শাক বা উদ্ভিদগুলোর পুষ্টিগুণ ঔষুধি গুণ সম্পর্কে জেনেছেন বলে জানান। মূলত এসব বিষয় শ্বাশুরির কাছ থেকে জেনে যাওয়ার পর থেকে অঞ্জলী রাণী তার আশপাশে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে নেওয়া কোন উদ্ভিদকে নষ্ট করেন না; বরং এসব উদ্ভিদ যাতে বেড়ে উঠতে পারে সেজন্য তিনি সেগুলো পরিচর্যাও করেন। শুধু নিজে নয় অন্যদেরকে এসব উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও পরিচর্যার করার উৎসাহ দেন। অঞ্জলী রাণী বর্তমানে জানেন কোন উদ্ভিদের বা কোন শাকের কি গুণাগুণ আর তা কোন সময় শরীরের কোন কাজে লাগে। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে এই কুড়িয়ে পাওয়া উদ্ভিত কি কি উপকার করে সে সম্পর্কেও তিনি ভালো জানেন।
অঞ্জলী রাণী তার মাত্র ২৮ শতাংশ বাড়ি ভিটার সবটাই বিভিন্ন দেশীয় ফলজ, বনজ ও ঔষধি আবাদ করে পরিপূর্ণ করেছেন। কুড়িয়ে পাওয়া বিভিন্ন শাকের গুনাগুন সম্পর্কে জানার পর থেকে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁর বাড়িকে একটি আদর্শ বাড়ি হিসেবে গড়ে তোলার। তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “বর্তমান সময়ে আগের তুলনায় আর সে রকমভাবে এই কুড়িয়ে পাওয়া শাকগুলো পাওয়া যায় না। কারণ আগে সময় মত বৃষ্টি হত বৃষ্টির পরপর অনেক অচাষকৃত উদ্ভিদ জন্মাত। এখন আর তা হয় না। পাশাপাশি আগাছা মারার বিষ দেয়ার ফলে অনেক শাকের গাছও মারা যাচ্ছে।”
অঞ্জলী রাণীর মতো বাংলাদেশে আরও অনেক নারী ও কৃষক রয়েছেন যারা প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এসব উদ্ভিদের বহুমূখী ব্যবহার সম্পর্কে জানেন এবং সেগুলো যতœ করেন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং মানুষসহ পৃথিবীর সকল প্রাণের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বা কুড়িয়ে পাওয়া এসব উদ্ভিদগুলোর যতœ, পরিচর্যা ও সংরক্ষণ করা আমাদের সবার কর্তব্য।