কন্যাশিশু দিবসে কন্যাদের প্রত্যয়
মানিকগঞ্জ থেরক রাশেদা আক্তার
‘আমরা কন্যাশিশু- প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হবো, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো’-এ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পূর্ব মকিমপুর গ্রামে কিশোরীদের উদ্যোগে এবং বারসিক’র সহযোগিতায় গতকাল পালিত হলো আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস ২০২১। দিবসকে কেন্দ্র করে বাল্যবিয়ে রোধ, কন্যাশিশুর প্রতি সকল ধরণের নির্যাতন ও বৈষম্য প্রতিরোধে আলোচনা সভা মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ‘আমরা কিশোরী বাল্যবিয়ে করবো না, কন্যাদের নির্যাতিত হতে দেব না’-শ্লোগানকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসে কিশোরীরা বাল্যবিয়েরোধসহ কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে ‘একতা কিশোরী সংগঠন’ নামে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট সংগঠন গঠন করে। কিশোরী সামিয়া আক্তারকে সভাপতি করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
নব গঠিত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া আক্তার বলে, ‘আগে তো জানতামই না আমাদের জন্যও দিবস আছে। আজ এখানে এসে জানলাম। আমরা সবাই মিলে সংগঠন করলাম। আমার খুব ভালো লেগেছে।’ কিশোরী মলি আক্তার বলে, ‘আজ আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। এখানে এসে অনেক কিছু জানলাম। আমরা এক ভাই এক বোন। আমার মা-বাবা আমাকে কোনো কিছুতেই বাধা দেয়না। সব খানে যেতে দেয়। কিন্তু বেশির ভাগ মা-বাবাই তাদের ছেলে-মেয়েদের আলাদাভাবে দেখে। মেয়েদের কোথাও যেতে দিতে চায়না। সব মা-বাবার উচিত তাদের ছেলে-মেয়েদের সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া।’ কিশোরী খাদিজা আক্তার বলে, ‘আজ কন্যাশিশু দিবস। মেয়েরা বিভিন্ন ভাবেই অবহেলিত। কোথাও যাওয়া যাবে না, এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবেনা। সব কিছুতেই না আর না। কিন্তু মেয়েরাও অনেক কিছু পারে। তাদের সুযোগ দিতে হবে। আমরা অবহেলা চাইনা। আমরা সমান সুযোগ চাই।’
আলোচনা সভা ও নব গঠিত সংগঠনের সভাপতি সামিয়া আক্তার বলে, ‘আজ আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। আমাদের আশেপাশে সব সময়ই বাল্যবিয়ে হচ্ছে। ফলে তারা অনেক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মেয়েদের সব ক্ষেত্রেই অবহেলা করা হয়। খাবারের ক্ষেত্রে অবহেলা করে, কিছু কিনে দিতে গেলে অবহেলা করে। মেয়েরা কিছু করলে আশে-পাশের লোক কি বলবে সেটা ভাবে। যার জন্য আমরা কিছু করতে পারিনা। এর শিকার হচ্ছে আমাদের মত মেয়েরো। আমরা সংগঠন করেছি ভালো কিছু করতে চাই। বাল্যবিয়ে রোধ করতে চাই সকলে মিলে।’
কন্যাশিশুদের বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বারসিক জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধকল্পে ছাত্র-যুব শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করে থাকে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইনগত সহায়তা, যৌন নির্যাতন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধে সচেতনতা ও সংগঠিতভাবে প্রতিরোধ বা নিজেদের সুরক্ষা যাতে নিজেরা করতে পারে সেই জন্য স্কুল ও গ্রাম পর্যায় কিশোরী ও জনসংগঠন গঠনের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে, যৌন হয়রানী ও বয়োঃসন্ধিকালের বিষয়সমূহ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।’
এর আগে কিশোরী সামিয়া আক্তারের সভাপতিত্বে আলোচনার শুরুতেই দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রবন্ধ পাঠ করে কিশোরী খাদিজা আক্তার। প্রবন্ধে বলা হয়, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ রাষ্ট্রসমূহ প্রতিবছর ১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ২০১২ সাল থেকে। এই দিবসটি মেয়েদের দিনও বলা হয়। শিক্ষার অধিকার, পরিপুষ্টি, আইনি সহায়তা ও ন্যায্য অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা, বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বলপূর্বক তথা বাল্যবিয়ে। কানাডাভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্লান ইন্টারন্যাশনাল ‘কারণ আমি একজন মেয়ে” (ইবপধঁংব ও অস ধ এরৎষ) এই নামে কন্যা শিশু দিবস উদযাপনের প্রস্তাবনা উত্থাপন করে। ২০২১ সালে ১৯ ডিসেম্বর তারিখে এই প্রস্তাব রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় গৃহীত হয় ও ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর তারিখে প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালন করা হয়।
আলোচনা সভা শেষে কিশোরীদের অংশগ্রহণে মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বাল্যবিয়ে, যৌন হয়রানি, শিশু নির্যাতন প্রতিরোধসহ কন্যাশিশুদের প্রতি সকল ধরণের বৈষম্য প্রতিরোধে সকলে এক সাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।