অনাবৃষ্টি ও খরায় নেত্রকোনা অঞ্চলে কৃষি ও প্রাণবৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত
নেত্রকোনা থেকে মো. অহিদুর রহমান
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষকের পিছু ছাড়ছেনা। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে বার বার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আগাম বন্যা, পাহাড়িঢল, বালির আগ্রাসন, বাঁধভাঙ্গা, অনাবৃষ্টি, অসময়ে বৃষ্টি, কোল্ড ইনজুরি, হটইনজুরি, বজ্রপাত, গরম, পোকার আক্রমণ, কৃষি উপকরণের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি সবমিলে কৃষকের সর্বনাশ। এবছর ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় নেত্রকোনা অঞ্চলের মানুষের কৃষকের জীবনকে তছনছ করে দিয়ে যায়। কৃষক অনেক আশা করেছিলো বন্যার পরবর্তী সময়ে আমন মৌসুমে ধান রোপণ করে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠবেন। কিন্তু সবই আশায় গুড়েবালি। নেত্রকোনা অঞ্চলের কৃষক পানির অভাবে আমন ধান রোপণ করতে পারছেন না। যে ধান রোপণ করেছিলেন সেই জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। অনেক জমি পানির অভাবে শুকিয়ে ফেটে গেছে। অনেক কৃষকের রোপিত ধান মরে গেছে।
বন্যার পানি যেমন নেত্রকোনা অঞ্চলের মানুষের জীবনে হাহাকার নিয়ে এসেছিলো এখন খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে নদী, নালা, খাল বিল শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। পানির অভাবে খাঁ খাঁ করছে ফসলের মাঠ। প্রচন্ড তাপদাহে খরায় ঝুঁকিতে পড়ছে কৃষকের কৃষি ও এ অঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্য। জলাধার শুকিয়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিক মাছের প্রজনন বৃষ্টি ব্যাহত হচ্ছে। অনেক বন্যপ্রাণি অভিযোজন করতে না পেরে লোকালয়ে এসে মানুষের আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া, কলমাকান্দা, মদন, নেত্রকোনা সদর, কেন্দুয়া, বারহাট্টাসহ ১০ উপজেলায় কোন বৃষ্টি নেই। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিলো সেই বৃষ্টি নেই। কৃষক ধান লাগাতে পারছেন না। যেগুলো রোপণ করেছিলেন সেগুলোও মরে যাচ্ছে। গভীর নলকূপেও পানি উঠছেনা না।
এই প্রসঙ্গে প্রবীণ কৃষক আমিল উদ্দিন বলেন, “আমার জীবনে এভাবে কম বৃষ্টি হইতে দেখছিনা, আমার ১২ কাঠা জমি রইতে পারলাম না।” তিনি জানান, এবছর খাদ্যঅভাব দেখা দিবে। প্রতিবছর এ সময়ে আমন ধান রোপণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করেন খাদ্যযোদ্ধারা। অনেক কৃষক সেচের মেশিন বসিয়ে পানির ব্যবস্থা করছেন। নেত্রকোনার কৃষি আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো: আল মামুন জানিয়েছেন যে এই গরম আরো বাড়তে পারে।
তাছাড়া গরমের কারণে রোগবালাইও বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ডায়রিয়া, জ্¦র পেটের পীড়া, প্রেসারসহ নানান রোগের কারণে ভর্তি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রোগীদের মাঝে প্রবীণ ও শিশুরাই বেশি।