পানি সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান চাই
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি (রাজশাহী)
‘মিথ্যে আশ্বাসে আমাদের আর বিশ্বাস হয় না, শুধুই কথা বলে, এই প্রকল্প আসে, সেই প্রকল্প আসে কিন্তু আমাদের পানির সমস্যা সমাধান হয় না, জলবায়ু পরির্বতনের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলো যেমন আমাদের মিথ্যা আশ^াস দেয়, তাঁরাই আবার বিলাসী জীবনযাপন করছে, আবার আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজনীর ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেনা, তেমনি স্থানীয়ভাবেও সরকার আমাদের সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করছেনা। জলবায়ু পরির্বতনে নেতিবাচক প্রভাবের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে অনাবৃষ্টি, তীব্র দাপদহসহ কিছু কিছু এলাকায় পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।’
গতকাল পানির দাবিতে, পানির সংকট সমাধানে বরেন্দ্র অঞ্চলের নারী, কৃষক এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ‘পানি শুনানীতে’ এ কথা বলেন। তারা জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিসহ পানির সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি করেন।
রাজশাহীর তানোর উপজেলা মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিশ^ জলবায়ু কর্ম-সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে জলবায়ু পরির্তন ও খরার কারণে সৃষ্ট পানি-দূর্গত মানুষের জবানবন্দী হিসেবে পানি শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরাম’র যৌথ আয়োজনে উক্ত পানি শুনানীতে বিভিন্ন বয়সের মানুষ পানির অধিকার ও ন্যায্যতা বাস্তবায়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবার দাবি জানান।
পানি শুনানীতে বিভিন্ন দাবি সম্বিলিত প্লেকার্ড ফেস্টুন নিয়ে নারী শিশু ও কৃষকরা জলবায়ু পরির্বতনের জন্য ধনী দেশগুলোকে দায়ী করে ক্ষতি পূরণের দাবি করেন। শুনানীতে অংশগ্রহণকারী মন্ডুমালা মাহালী পাড়ার ক্রিস্টিনা হে¤্রম( ৪৫) বলেন, ‘এক কিলোমটিারের বেশি দূরে গিয়ে মাত্র এক কলস পানি সংগ্রহ করতে আমার কোমড় ভেঙ্গেছে, আর্থিক অভাবে ভালোভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি, আমার পরিবারের আত্মীয়স্বজনের আসলেও এই পানির কারণে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।’ পিরণপুকুর গ্রামের আঙ্গুরি বেগম (৩৮) বলেন, ‘তীব্র তাপদাহ এবং পানির অভাবে আমার একমাত্র সম্বল তিনটি ছাগল মারা গেছে।’ অন্যদিকে মিশন পাড়ার সুজললা মার্ডি (৪০) বলেন, ‘এই তাপদাহের কারণে আমার একটি গরুও মারা গিয়েছে।
অন্যদিকে দিনমজুর কৃষক শ্রমিক আলবিকুস হে¤্রম (৪৮) বলেন, ‘অনেক তাপমাত্রা, গরম আবার অনাবৃষ্টি, এর মধ্যে আবার পানি নেই, পানির অভাবে এবং তীব্র তাপদাহের কারণে রোগবালাইও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবার ভরা বর্ষার সময়েও তীব্র খরা এবং অনাবৃষ্টির কারণে তাঁর কোন কাজ ছিলো না, যার ফলে ধার দেনা বেড়ে গেছে। আবার এই গরমে জ¦র সর্দি কাশিসহ নানা রোগবালাই বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিকে যেমন কাজ নেই, অর্থের অভাব, অন্যদিকে রোগবালাইও বেড়েছে। ধার দেনা করে দিন পার করতে হচ্ছে।’
পানি শুনানীতে জলবায়ু পরির্তন ও খরার কারণে সৃষ্ট পানি-দুর্গত মানুষ তাদেও ক্ষতিপূরণের দাবি করেন। একদিকে যেমন জলবায়ু পরির্বতনের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলো অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে সরকার যেন তাদের সমস্যাগুলো স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট সমস্যার কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের যে আর্থিক, স্বাস্থ্য এবং মানসিকসহ নানা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তার জন্য ক্ষতিপূরণের জোর দাবি জানান। একইসাথে বরেন্দ্র অঞ্চলের পানির সমস্যা সমাধানে স্থায়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবার দাবিও করেন।
উক্ত পানি শুনানী’তে অংশগ্রহণ ও সংহতি জ্ঞাপন করেন মন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র সাইদুর রহমান, বরেন্দ্র অঞ্চল জনসংগঠন ফোরামের সভাপতি ও জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক নূর মোহাম্মদ, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, বারসিক’র সমন্বয়কারি জাহাঙ্গীর আলম, বরেন্দ্র যুব সংগঠন ফোরাম’র আহবায়ক রুবেল হোসেন মিন্টুসহ প্রমুখ বৃক্তিবর্গ। পানি শুনানী’ টি পরিচালনা করেন বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারি ও গবেষক মো. শহিদুল ইসলাম।
বিশেষজ্ঞ বক্তব্যে লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আমরা মোটেও দায়ী নই। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আমাদের যে লস এবং ড্যামেজ হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ পাওয়া আমাদের ন্যায়সংগত অধিকার। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ^ নেতৃবৃন্দ সমঝোতার নামে বছরের পর বছর দেন দরবার করে কাটিয়ে দিয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত তারা সময়ক্ষেপণ করছে কিন্তু তারা কোন সমাধানে পৈীছাতে পারেননি। যার ফলে জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চত করছেনা।