অমাব্যসার কালী পূজায় অচাষকৃত উদ্ভিদ এর ব্যবহার
রাজশাহী থেকে অনিতা বর্মণ
তানোর উপজেলার গোকুল মথুরা গ্রামের নারীদের মধ্যে চলছে অচাষকৃত উদ্ভিদ এর সংগ্রহের প্রতিযোগিতা। গ্রামের নারীরা ছুটে চলেছে মাঠে-ঘাটে, বনে-জঙ্গলে, রাস্তার পাশে অযত্নে বেড়ে উঠা অচাষকৃত উদ্ভিদ সংগ্রহ করতে ।
গোকুল-মথুরা গ্রামের শ্রীমতি অঞ্জলী রানী সূত্রধর বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অচাষকৃত উদ্ভিদ বা শাক মাঠ-ঘাট থেকে সংগ্রহ করে রান্না বা ওষুধি হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। এতে আমাদের সংসারের সবজি বা ওষুধের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করতে পারি। তবে আমাদের গ্রামের নারীরা প্রতিবছর অমাব্যসার কালী পুজার আগের দিন ১৪ রকম এর অচাষকৃত উদ্ভিদ সংগ্রহ করে রান্না করে খেয়ে থাকে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের মা, ঠাকুমার সময় থেকে দেখে আসছি এই নিয়ম নীতি। আর তারই সুত্র ধরে আমরা ও এই নিয়ম পালন করে চলে আসছি। তাই প্রতিবছর কালী পুজার আগের দিনে অচাষকৃত উদ্ভিদ সংগ্রহ করার ধুম পড়ে যায় আমাদের এই গ্রামে।”
অঞ্জলী রানী সূত্রধর জানান, অমব্যসা কালী পুজার আগের দিন হাতে গুনা ১৪ রকম অচাষকৃত উদ্ভিদ এর পাতা, কচি ডাটা একত্রে রান্না করে খেলে শরীরের নানা রকম রোগ ব্যাধি দুর হয়ে যায়। এই বছর তাঁরা যে উদ্ভিদগুলো সংগ্রহ করেছেন তা হলো -শুলকুমড়, সাদা ছটপটা, লাল ছটপটা, পটকা, পিপল, কালকাসিন্দা, লটাখুড়া, কাটা খুড়া, মিশরীদানা, বাউনজোড়া, বনকাবাশি, গিমা, জোয়ানবির, খাটো ব্যাড়াল।
অন্যদিকে শ্রীমতি নিভারানী বলেন, “১৪ রকম উদ্ভিদের মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ নয়, এই ১৪ রকম উদ্ভিদ খাওয়ার পাশাপাশি মাটির তৈরি ১৪টি বাতি (প্রদীপ) তৈরি করে চৌদ্দ পুরুষের মঙ্গল কামনায় রাস্তা-ঘাটে, বাড়িতে, মন্দিরে এই বাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।” শ্রীমতি অঞ্জলী রানী সূত্রধর জানান, কালিপুজার রাতে আবারো মাটির প্রদীপ তৈরি করে পুজার রাতে প্রতিটি ওষুধি গাছের গোড়ায় দিয়ে সেই গাছগুলোকে জাগিয়ে রাখতে হয়। পুজার শেষের দিন (পরের দিনে) প্রদীপ দিয়ে জাগিয়ে রাখা গাছগুলোর শেকড়, ছাল তুলে তৈরি করা হয় মহা ঔষুধ। প্রায় ২৫/৩০ প্রজাতির উদ্ভিদ (উলটকম্বোল, কাটাখুড়া, বনকাবাশি, ঘৃতকাঞ্চন, শতমুল, অনন্তমুল, জোয়ানবির, মিশরিদানা, তুলসি, লাল ছটপটা, সাদা ছটপটা, পিপল, শুলকুমড়, অর্জুন, শিমুল, র্দুবাঘাস,ডরপি, ভুতরাজ, খাটো ব্যাড়াল, ব্যানা ব্যাড়াল, তেরাকুচা, কালকাসিন্দা, পাওনজোড়া,কালোকেশর) সংগ্রহ করে একসাথে তা শিলপাটায় পিসে নিতে হয়। এরপর প্রায় ৬/৭ কেজি জলের সাথে সেই ওষুধগুলো মিশিয়ে শরবত এর মতো করে তৈরি করা হয়। তিনি আরও জানান, এই ওষুধ চিনি বা সন্দেশ দিয়ে খেতে হয় । এই ওষুধ গ্রামের হিন্দু ও মুসলিম, নারী-পুরুষ সকলে আসে খেতে। এই ওষুধ মেহদোষ, শারীরিক দুর্বলতা দুর করতে বেশ উপকারি।
শ্রীমতি অঞ্জলী রানী সূত্রধর বলেন, এই ঔষুধ তৈরির কাজটা আমি প্রতিবছর করে থাকি। আমি বিয়ের পর এই গ্রামে আসার পর থেকে দেখেছি আমার মামা শ^শুর এই কাজটি করতেন। মামার বয়স হয়েছে তাই এখন আমি এই নিয়ম নীতি ও শিখে ফেলেছি এই ঔষুধ তৈরি করা। আমি মনের আনন্দে এই কাজটি করি। আমি মনে কিছুটা হলে ও মানুষকে অচাষকৃত উদ্ভিদের ঔষুধ তৈরি করে তাদের সেবা দিতে পারছি ।