প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে রুদ্ধ প্রাণ ও প্রকৃতি
:: পাভেল পার্থ, লা বুর্জ, প্যারিস, ফ্রান্স
এক
ফ্রান্সের প্যারিসের লা বুর্জে বসেছে জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ২১তম আসর। জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রসমূহের পতাকার নমুনাকে পিলারে পেঁচিয়ে সাজানো হয়েছে সম্মেলন স্থলের বহিরাঙ্গন। সম্মেলন স্থলজুড়ে রাখা হয়েছে দুনিয়ার নানা বাস্তুসংস্থানের প্রাণবৈচিত্র্য। সুন্দরবনে বাঘ, মেরু ভল্লুক, মরুভূমির উট থেকে শুরু করে হাতি, গন্ডার, কাঠবিড়ালী, কাঠঠোকরা, পেঁচা, কুমির কতকিছু। ঝুলন্ত বাগানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে উদ্ভিদ-বাস্তুতন্ত্রের নমুনা। কিন্তু এই একটুখানি সাজানো পর্যন্তই। স্বচ্ছ নানা রঙের প্লাস্টিক বোর্ড দিয়ে তৈরি পশু-পাখি। নানারঙের পশু-পাখিদের ভেতর দিয়ে হরদম হেঁটে যাচ্ছেন বিশ্ববাহাদুরেরা। দুনিয়াজুড়ে এই উদ্ভিদ কি প্রাণিদের আহাজারি শোনার কারো সময় নেই। বিশ্বনেতারা ব্যস্ত জ্বালানি বাণিজ্যের নতুন ফায়সালা নিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের মোড়ককে সামনে রেখে আগামীর দোকানদারি কার নিয়ন্ত্রণে কীভাবে থাকবে মূলত: এই নিয়েই মূল দরবার। কিন্তু সবকিছুই সামাল দেয়া হচ্ছে প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষা ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধের শোরগোল তুলে। ৩০ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া জলবায়ুর এই বিশ্ব সম্মেলন নির্দয়ভাবে দুনিয়ার প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি নিশ্চুপ। নিরুত্তর। কৌশলে প্রাণবৈচিত্র্যের রক্তাক্ত জমিন মাড়িয়ে বিশ্বনেতারা উষ্ণতার তর্ক নিয়েই মশগুল। কোনোভাবেই জায়গা পাচ্ছে না দুনিয়ার নানাপ্রান্তের গরিব মানুষের কার্বন-নিরপেক্ষ টিকে থাকবার অবিস্মরণীয় সব আখ্যান। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে প্রাণ ও প্রকৃতির আওয়াজ রুদ্ধ হয়ে আছে।
দুই
নিরাপত্তাবলয় শেষে লম্বা করিডোর পেরিয়ে সম্মেলন কক্ষগুলোতে ঢোকার আগেই আয়োজক দেশ ফ্রান্স দু’পাশে দু’টি কৃতজ্ঞতার বিজ্ঞাপন টানিয়েছে। বিশ্বের মারদাঙ্গা ৬৩টি কোম্পানিকে জলবায়ু সম্মেলন আয়োজনে সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে। লরেল, ফিলিপস, স্যানোফি, বিক, পুমা, অরেঞ্জ, নেক্সটারের মতো কর্পোরেটদের লোগোগুলো ডানে-বায়ে রেখেই বিশ্ব জলবায়ু দরবারে প্রবেশ করতে হয়। বহুজাতিক কোম্পানিদের বিলবোর্ডের পরই শুরু হয়েছে প্লাস্টিকে বানানো প্রাণিদের নমুনা। প্রাণিদের স্বচ্ছ শরীরের ভেতর থেকে স্পষ্ট টের পাওয়া যায় তাদের রক্তাক্ত করুণ আর্তি। এইসব বহুজাতিক কোম্পানির জন্যই আজ দুনিয়াটি বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। বহাজাতিক কোম্পানির রাসায়নিক দূষণে পৃথিবীর মাটি, জল ও বাতাস আজ মুমূর্ষু। অরণ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ নিঃশেষ। আদিবাসী ও স্থানীয় জনগণের ঐতিহাসিক জীবনধারা লন্ডভন্ড। তারপরও বহুজাতিক কোম্পানিরদের বাণিজ্য বিস্তার থেকে নেই। তারাই লাগাতার কার্বন নির্গমণ ঘটিয়ে উষ্ণ থেকে উষ্ণতর করে তুলছে পৃথিবী নামের এই নীল গ্রহটি।
তিন
শার্দ-দ্যু-গাল বিমানবন্দর থেকে শুরু করে পুরো প্যারিস যেন বিশ্বের মারাদাঙ্গাসব প্রসাধনীর বাজার। চারধারে ফুরফুরে ভুরভুরে মুরমুরে চুরচুরে কত জানা-অজানা গন্ধ! এই গন্ধ-প্রসাধনীর ব্যবহারই কিন্তু এখনও পর্যন্ত ধনী-গরিব এই রকমের শ্রেণিদ্বন্দ্ব জিইয়ে রেখেছে। কে কী ধরণের গন্ধদ্রব্য ব্যবহার করলো পশ্চিমী এই উপনিবেশিক মনস্তত্ত্ব এখনো জীবন্ত আছে বাংলাদেশেরও অনেকের ভেতর। সে অবশ্য অন্য এক আলাপ, ওই আলাপ অন্যদিন করা যাবে। গরিব দেশগুলোতে প্রসাধন-উপনিবেশিকতা উস্কে দেয়া লরেলও তেমনি এক বিশ্বকাঁপানো প্রসাধন কোম্পানি। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন আয়োজনের জন্য ফ্রান্স সরকার এই কোম্পানির কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। ১৯০৯ সনে ফ্রান্সের প্যারিসে প্রতিষ্ঠিত এই প্রসাধন কোম্পানিতে বর্তমানে প্রায় ৬৭,৫০০ জন মানুষ কাজ করে। পৃথিবীর ১৩০টি দেশে প্রায় ৪২টি কারখানা আছে লরেলের। কিন্তু এই কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতিবেশ দূষণ ও প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংসের অভিযোগ আছে। লরেল তাদের প্রসাধনীতে ‘কোয়াটারনিয়াম-১৫’ এবং ‘ডিএমডিএম হাইডেনটইন’ রাসায়নিকগুলো প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহার করে। এসব থেকে ফরমালডিহাইড তৈরি হয় যা ক্যান্সার তৈরি করে। এছাড়াও লরেল তাদের পণ্যে দীর্ঘশিকল প্যারাবেন ব্যবহার করে যা মানুষের প্রজননস্বাস্থ্যের ব্যাঘাত ঘটায় (সূত্র: www.ewg.org)। লরেল তাদের প্রসাধনীর উদ্ভিজ্জ তেলের কাঁচামাল সংগ্রহ করে মরক্কোর আরগান নামের এক গাছ থেকে। মরক্কোর সাহারা মরুভূমিতে জন্মানো এই গাছটি এনডেমিক। মানে প্রাকৃতিকভাবে শুধু সেখানেই জন্মায়। মরুভূমির আরগান বনভূমিকে ১৯৯৮ সনে ইউনেস্কো ‘বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ’ ঘোষণা করেছে। প্যারিস সম্মেলনে যোগ দেয়া মরক্কোর সাংবাদিক সোফিয়া ফ্যাগরাউন্ড জানান, আরগানের মতো অনেক গাছপালা ও পশুপাখি মরুভূমি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রাণবৈচিত্র্য টিকে থাকবার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মরক্কোর স্থানীয় নারীরা আরগান গাছের বীজ ও পাতা থেকে তেল তৈরি করেন, যা লরেল কোম্পানি সংগ্রহ করত। কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য সনদ (১৯৯২) অনুযায়ী, লরেল কোম্পানি এই উদ্ভিদ একতরফা ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি আইনি বাধ্যবাধকতার ভেতর আসে। ‘ইয়ামানা’ নামের এক স্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ‘লা ল্যাবরেটরিজ সেরোবায়োলজিকস’ ও ‘লরেলের’ ভেতর একটি চুক্তি হয় (সূত্র: www.cbd.int)। আরগান গাছের সুরক্ষা নিশ্চিত করে স্থানীয়দের মাধ্যমে এই গাছ ব্যবহারে বাধ্য হয় লরেল। প্রাণবৈচিত্র্য সনদ অনুযায়ী ‘আরোগ্যপাচ্চা’ উদ্ভিদ নিয়ে দক্ষিণ ভারতে কানি আদিবাসী, টিবিজিআরআই এবং দ্য আরায়া বৈদ্য ফার্মেসির ভেতরও এই চুক্তি হয়েছিল। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনেও সকলেই চাইছে এবার জলবায়ু বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতাসহ একটি ন্যায্য চুক্তি হবে।
চার
প্যারিসের রাস্তাঘাটে কবুতর দেখা যায়। বাংলাদেশের সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা অঞ্চলে জালালি কবুতর যেমন পবিত্র পাখি প্যারিসেও তাই। কেউ ধরে না, মারে না, খায় না। কিন্তু বিশ্বব্যাপী পাখিরা নিরাপদে নেই। পাখিদের আবাস, খাদ্য, বিচরণস্থল সবই আজ দূষিত। একতরফা খাদ্য উৎপাদনের নামে বহুজাতিক কোম্পানির রাসায়নিক পণ্যের বাণিজ্যের জন্যই বিশ্বব্যাপী পাখিরা আজ বিপন্ন। বিশ্বব্যাপী পাখিদের নিরাপত্তা নিয়ে কর্মরত সংগঠন ‘বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনালের’ ডেভিড হাওয়েল যোগ দিয়েছেন প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে। হাওয়েল জানালেন, কীটনাশকের ফলে পাখিরা আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আর এই কীটনাশক তৈরি করতে কোম্পানিগুলো মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নির্গমণ ঘটাচ্ছে। যার ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। এই উষ্ণতায় সব ধরণের পাখিদের টিকে থাকা দায়। তার মানে সবদিক থেকেই পাখিরা আজ অনিরাপদ। বিশ্বব্যাপী পাখিরা নিরাপদে আছে এটি প্রকৃতি ও জলবায়ুর এক সুস্থতার নির্দেশ। বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে এবং জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবেলায় আমাদের পাখিদের নিরাপত্তার কঠোর নীতি গ্রহণ করতে হবে। কঠোর নীতি গ্রহণ করতে হলে তো জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে বহুজাতিক কোম্পানিদের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত গরিব ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলো কী তা পারবে? মনস্যান্টো, সিনজেনটা, ডুপন্ট, ডাউ ক্যামিকেল, কারগিল, বিএএসএফ এর মতো কোম্পানিগুলোর লাগাতার বিষবাণিজ্যকে জাতীয় নীতি ও আইনের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে তো এই বিষবাণিজ্য বেড়েই চলেছে। মরছে শামুক, মাকড়সা, পতঙ্গ, কেঁচো, পাখি এমনকি শিশুরা। এসব নির্দয় মৃত্যুর জন্য কখনোই বহুজাতিক কোম্পানির বিচার হয়নি!
পাঁচ
কেবল অরণ্য, জলাভূমি বা ভূমিবাস্তুসংস্থানের প্রাণবৈচিত্র্য নয়; সমুদ্রের প্রাণবৈচিত্র্যই আজ হুমকীর সম্মুখীন। সম্মেলনে যোগ দেয়া যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন ‘পাইওনিয়ারিং মেরিন সাইন্স ফর সাসটেইনেবল সীজ’ এর বিজ্ঞানী ক্যারল টারলে জানান, বৈষ্ণিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রে বসবাসকারী প্রাণবৈচিত্র্য ও সমুদ্রের পরিবেশ আজ বিপন্ন। সমুদ্র বাঁচলে পৃথিবী বাঁচবে, সমুদ্রের কথা শুনতে হবে। জলবায়ু চুক্তিতে সমুদ্র সুরক্ষার আইনি ধারা যুক্ত করতে হবে। সকল পক্ষকেই এই ধারা মানতে হবে। সমুদ্রের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বনভূমি সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘গোব্লাল ক্যানোপি প্রোগ্রামের’ প্রকল্প সমন্বয়কারী ডেভিড স্যাবোগাল। বনভূমি সুরক্ষায় বাংলাদেশের সক্ষমতা তুলে ধরেন সম্মেলনে যোগ দেয়া বাংলাদেশের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু বনভূমি সুরক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থার সমালোচনা করেন উদীচী ফ্রান্স সংসদের সভাপতি কিরণময় মন্ডল ও উপদেষ্টা জহির হোসেন ভুঁইয়া। তাদের নেতৃত্বে উদীচী ও সুন্দরবন রুক্ষা জাতীয় কমিটির ফ্রান্স শাখার প্রতিনিধিরা জলবায়ু সম্মেলনের জেনারেশন এরিয়াতে অংশ নিয়ে সুন্দরবন সুরক্ষার জোর দাবি জানান। সুন্দরবন লাগোয় কয়লাভিত্তিক রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধীতা করেন তারা। কিরণময় মন্ডল জানান, সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্য। ইউনেস্কো পর্যন্ত এই বিদ্যুৎপ্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। সুন্দরবনের আশেপাশে সকল ধরণের বৃহৎপ্রকল্প বাতিল করে এই বন সুরক্ষায় নজির স্থাপন করতে পারলে বৈশ্বিক জলবায়ু দেনদরবারে বাংলাদেশ আরো জোর গলায় হিস্যা আদায় করতে সচেষ্ট হবে।
ছয়
বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক সম্পদনির্ভর গ্রামীণ জনগণ, আদিবাসী এবং বিশেষত নারীরাই প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষা করে আসছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী গরিব মানুষের এই টিকে থাকার অভ্যাস ও সংগ্রাম প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে মর্যাদা ও গুরুত্ব পাচ্ছে না। সম্মেলনে যোগ দেয়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সমুদ্রবিষয়ক সংগঠন ‘গ্লোবাল ওসান হেলথের’ জুলিয়া স্ক্যাডার এবং মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব আর্টস এন্ড সাইন্সেস এর সহকারী অধ্যাপক সৌরাসেনি সেন রায় জানান, অবশ্যই স্থানীয় মানুষদের জ্ঞান ও চর্চাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ মানুষের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা থেকেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার অভিযোজন কৌশলগুলো বেরিয়ে আসবে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্যাভিলিয়নে জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন বিষয়ক এক সংলাপে কোরিয়ার ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব মেটেরিওলজিক্যাল সাইন্সেস’ এর বিজ্ঞানী উও-তাই-উন জানান, কোরিয়া ও জাপান একসময় বাঘ ও বানরের জন্য বিখ্যাত ছিল। কোরিয়ার রূপকথা বাঘে ভরপুর। কিন্তু কোরিয়ায় এখন বাঘের কোনো অস্তিত্ব নেই। জলবায়ু পরিবর্তন স্থানীয় বাস্তুসংস্থান ও সংস্কৃতির উপর প্রভাব তৈরি করে। এই প্রভাব এক এক জায়গায় এক এক রকম। এই ভিন্নতা বুঝতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় স্থানীয় মানুষদের অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে হবে। সম্মেলনে যোগ দেয়া ভারতের কলকাতাভিত্তিক পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘সাউথ এশিয়ান ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্টের’ প্রধান ড. দীপায়ন দে জানান, প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য জাতিসংঘের অপরাপর চুক্তি ও ঘোষণাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের উপর চাপ তৈরির জন্য দরকার নানা দেশের সক্রিয় নাগরিকদের একটি ঐক্য। প্রাণ ও প্রকৃতির সুরক্ষায় অবশ্যই বিশ্বব্যাপী এক সক্রিয় পাটাতন জরুরি। কারণ পৃথিবী একটিই। মেরু ভল্লুক কি সুন্দরবনের বাঘ, মরুভূমির উট কি অষ্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারু সব কিছ ুতো পৃথিবীর প্রতিনিধি। জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেয়া রাষ্ট্রপক্ষকে দুনিয়ার প্রাণ ও প্রকৃতির এই ঐতিহাসিক বিস্তারকে মর্যাদা দিতে হবে। জলবায়ু সংকটের ভেতর পৃথিবীকে পিষে না মেরে সকলের ভেতর জাগ্রত হোক প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দর্শন। সবক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতাই একমাত্র অবস্থান হলে ফ্রান্স বা বাংলাদেশে এত কবুতর উড়ে বেড়াতো না। আশা করি প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন দুনিয়ার টিকে থাকবার এই শর্ত ও অভ্যাসের মূল্য দিবে।