হলুদ ফুলের সৌন্দর্য
সাতক্ষীরা থেকে এস. এম. নাহিদ হাসান:
শিয়ালকাঁটা। একটি গাছের নাম। স্থানীয়দের দাবি গাছের পাতা শিয়ালের লেজের মতো দেখতে। আপনি যদি শিয়ালকাঁটার পাতা ভালভাবে খেয়াল করেন তাহলে শিয়ালের লেজ ছাড়া আর কিছু মনে হবে না। তাই নাম হয়েছে শিয়ালকাঁটা। কাঁটাযুক্ত গুল্মজাতীয় এ উদ্ভিদ যত্ন ছাড়াই জন্ম নেয়। কোন পরিচর্যা ছাড়াই নিজে বেঁচে থাকে। শিয়ালকাঁটা গাছ অনেক বিষাক্ত হয়। কিন্তু এর হলুদ ফুলের সৌন্দর্য এবং ওষুধি গুণ অনন্য। যারা গ্রামে তাদের শৈশব পার করেছেন তাদের কাছে এ গাছ খুব পরচিতি। ছোটবেলায় শিয়ালকাঁটার হলুদ ফুল দেখে মনে হতো ফুলটি যেন হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। শিয়ালকাাঁটা গাছ দেশের প্রায় সব অঞ্চলে পওয়া যায়।
সাতক্ষীরার প্রতিটি এলাকায় প্রচুর শিয়ালকাঁটা গাছ দেখা যায়। রাস্তার দু’পাশে, মাটে-ঘাটে, যেখানে সেখানে শিয়ালকাঁটার ফুল হাসি দিচ্ছে। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে এ গাছ সকলের নজরে আসে। গাছের প্রতিটি ডালের শেষ প্রান্তে একটি করে হলুদ ফুল সহজে মানুষের নজরে আসে। শিয়ালকাঁটার কান্ড বেশ নরম হয়। এর পাতা ও সারা গায়ে কাঁটা থাকে। লম্বাটে পাতার প্রান্তভাগ খাঁজকাটা থাকে। যা মোটা সুঁচের মতো দেখা যায়।
শিয়ালকাঁটার ফলও অন্যরকম। ফলের গায়েও কাঁটায় ভরা থাকে। এর ফল খাওয়া যায় না। শিয়ালকাঁটার ফুলের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। কারণ এর ফুল যেকোন মানুষেরই পছন্দ হবে। গাছের প্রতিটি ডালের শেষ প্রান্তে একটি করে ফুল দেখা যায়। হালকা হলুদ রঙের ফুলের ছয় সাতটি পাপড়ি থাকে। এ গাছ একবার ফল দিয়ে মারা যায়। শিয়ালকাঁটা গাছ প্রচন্ড সূর্যকিরণ সহ্য করতে পারে এবং শুষ্ক মাটিতে বহু দিন বেঁচে থাকে। এ গাছ এক থেকে প্রায় চার ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতার দৈর্ঘ্য দুই থেকে চার ইঞ্চি হয়। পাতার রং সবুজ হয়। তবে পাতার মাঝখান দিয়ে সাদা রংয়ের শিরা উপশিরা চলে গেছে।
মুক্তকোষ উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে, শিয়ালকাঁটার বৈজ্ঞানিক নাম Argemone Mexicana। একটি কাঁটাযুক্ত পপি জাতীয় (প্যাপাভারেসি গোত্রের) গাছ যা মেক্সিকো থেকে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম (আর্জিমোন মেক্সিকানা) প্রাচীন গ্রিক ভাষার আর্জিমা (“ছানি” বা “ক্যাটারাক্ট”) থেকে এসেছে। এই গাছের রস চক্ষুরোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হত বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে আর্জিমোন এবং মেক্সিকোয় পাওয়া যায় বলে মেক্সিকানা। এটি একাধারে বিষাক্ত আগাছা এবং ওষধি গুল্ম।
এ বিষয়ে কবিরাজ নির্মল সরকার বলেন, “শিয়ালকাঁটার রস ক্ষতরোগের জন্য বেশ উপকারী। এছাড়া এ গাছের রস, চন্দন গাছের রসের সাথে মিশিয়ে কুষ্ঠ রোগের নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। শিয়ালকাঁটার বীজের তেল সরিষার তেলে পাক করে পাঁচড়া ও চুলকানির জায়গায় ব্যবহার করলে উপকারে আসে। এ গাছের আঠা গণোরিয়া ও কুষ্ঠরোগের উপসমের জন্য ব্যবহৃত হয়। শিয়ালকাঁটা গাছের বীজ ও আঠা বিষাক্ত তাই পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া ব্যবহার না করা উচিত।”