কেওড়ার আচার স্বাদে গুণে অনন্য
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
কেওড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি জনপ্রিয় একটি ফল। বছরের জুন থেকে অক্টোবর টক জাতীয় এই মৌসুমি কেওড়া ফল উপকূলবাসীর অধিকাংশ বাড়িতে ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। কাচা, সেদ্ধ করে, তরকারী রান্না করে, ডালের সাথে, টক রেঁধে, অম্বল, তৈরি ও নানা স্বাদের আচার তৈরিসহ নানাভাবে খাওয়া যায় এটি। ওই সময়ে প্রাকৃতিক এই কেওড়া ফল থেকে উপকূলীয় মানুষের মধ্যে আচার তৈরির হিড়িক পড়ে যায়। টক, ঝাল, মিষ্টি স্বাদের আচার, জেলি, চকলেট, নোড়াসহ নানা আইটেম বানিয়ে রেখে দেন সারাবছর খাওয়ার জন্য। অত্যন্ত যত্ন ও গুরুত্বের সাথে পাঠিয়ে দেন দেশে বিদেশে বিভিন্ন আত্মীয় ও পরিজনদের কাছে।
স্বাদে ও গুণে অনন্য এই ফল বনজীবীরা মহাঔষধি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এটাই একমাত্র উপকারী টক ফল যা কিনা নানাভাবে খাওয়ার উপযোগি। এই কেওড়া দিয়ে আচার, জেলি, চকলেট, নোড়াসহ বিভিন্ন ধরনের আইটেম তৈরি করে রেখে দেন পরম মমতায়। কেননা এটা ২ বছর পর্যন্ত কোন প্রকার নষ্ট হয় না কিংবা ফ্যাঙ্গাস পড়ে না। সচরাচর এটা পারিবারিকভাবে খাবার জন্য তৈরি করা হলেও কেউ কেউ সারাবছরের জন্য বিভিন্ন পদ তৈরি করে সংরক্ষণ করে রেখে দেন। উপকূলের কেউ কেউ এটা দিয়ে আচার বা চকলেট বানিয়ে বিক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছেন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সুন্দরবনের কোলে দাতিনাখালী গ্রামে বাঘ বিধবা নারী ও অসহায় প্রান্তিক বনজীবি জনগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গড়ে ওঠে বাদাবন সম্ভার। সুন্দরবনের কাঠ বর্হিভূত বনজ সম্পদ দ্বারা সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ও অর্গানিকভাবে প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী আধুনিকতার ছোয়ায় বোয়েম ও প্যাকেটজাত করছেন বাদাবান সম্ভার কর্তৃপক্ষ। এই প্রসঙ্গে বাদাবন সম্ভারের চেয়ারম্যান শেফালী বিবি বলেন, ‘বারসিক এর সহযোগি এই প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি কেওড়া ফল দিয়ে চার রকমের আচার, জেলি, চকলেট, নোড়া প্রভৃতি তৈরী করে বিক্রয় কার্যক্রম চালু রেখেছি।’
আমাশয়, ক্ষুধামন্দা, হজম শক্তি বৃদ্ধি, বমিভাব দূর, সর্দি, কাশি ও মুখে রুচি ফিরিয়ে আনাসহ ঔষধিগুণ সম্পন্ন এই কেওড়া ফল দিয়ে সম্পূর্ণ অর্গানিকভাবে তৈরি করা হয় বিভিন্ন পদ। সামান্য পরিমাণে লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচ, ঝালের গুড়া, মরিচ গুড়া, জিরা, চিনি, তৈল, লেবু ও লবনের সংমিশ্রণে তৈরি হয়ে থাকে কেওড়ার বিভিন্ন আইটেম।
স্থানীয়ভাবে এর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বিশ্ব বাজারে এটার চাহিদা বৃদ্ধিসহ প্রচার ও প্রসার করতে পারলে বাঘ বিধবা নারী তথা সুন্দরবননির্ভর বনজীবীদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ সার্বিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।