একজন সংগ্রামী নারী মাধবীলতার কথা
মানিকগঞ্জ ,সিংগাইর থেকে আছিয়া আক্তার
সুন্দর এই পৃথিবীটা সবার জন্য সবসময় সুন্দর সাবলীল অবস্থায় থাকে না! একে সুন্দর করে নিতে হয়। আর একে সুন্দর করার পিছনে থাকে অনেক দুঃখ-কষ্ট, পরিশ্রম আর ইচ্ছা শক্তি। এমনই এক দুঃখ কষ্টে ভরা জীবনকে নিজের মতো করে সুন্দর করে নিলেন সংগ্রামী নারী মাধবীলতা।
সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নেরে শিবপুর গ্রামের বউ মাধবীলতা (৩৩)। স্বামী মৃত সাধন সুত্রধর। ছেলে অপু সুত্রধর (১৪), নবম শ্রেণীর ছাত্র। মাধবি লতা পাটুরিয়া গোয়ালখালির মেয়ে। বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। দুই ভাইয়ের খুব আদরের একটি মাত্র বোন তিনি। বড় ভাই প্রথম আলো পত্রিকা অফিসে গ্রাফিক্স ডিজাইনারের কাজ করেন। আর ছোট ভাই শিবালয় কলেজের সদোরুদ্দিন কলেজের প্রভাষক।
২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিয়ে হয় তাদের। ২০১৫ সালে তার স্বামীর ডায়াবেটিকস্সহ নানা ধরনের অসুখ বিসুখ দেখা দেয়। কাজ কর্ম আগের মত করতে না পারায় অনেক কষ্টে থাকতে হয়েছে তাদের। স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধার দেনায় জড়িয়ে যায়। পরবতীতে ২০২০ সালে স্ট্রোক করে মারা যান তার স্বামী। বাড়িটা ছাড়া তাঁর স্বামী আর কোন টাকাপয়সা, সহায় সম্পত্তি কিছুই রেখে যাননি ।
স্বামী মারা যাবার পর মাধবীলতার বাবা মা তাকে তাদের বাড়ি নিয়ে যেতে চান। কিন্ত তিনি কারো বোঝা হতে চান না, আর সেটা ভেবে বাবার বাড়িও যান না। এ সমস্ত বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি বারসিক’র মাধ্যমে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে ৩ মাসব্যাপি সেলাই ও বিউটিফিকেশনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ থেকে ১২ হাজার টাকা ভাতা পান। সে টাকা দিয়ে সেলাই কাজ শুরু করেন। আশপাশ থেকে বেশ ভালো অর্ডার পেতে থাকেন। এতে করে তার কাজের আগ্রহ বেড়ে যায়।
পরবতীতে বাড়ি থেকে একটু দূরে স্টান্ডে ১৫ শ’ টাকা মাসিক হারে একটি দোকান ভাড়া নেন। শিশুদের প্যান্ট, ফ্রক থেকে শুরু করে বড়দের থ্রি পিচ, ব্লাউজ, পেটিকোট, মেকসি সব তৈরি করেন। এখানে তিনি পার্লার ও দর্জি কাজ দুটোই করেন। প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে আয় হয় তার দোকান থেকে। স্বল্প মুজুরি নেওয়ায় তার কাষ্টমারও অনেক। থ্রি-পিচের মুজুরি ১৫০, ফ্রকের মুজুরি ৮০,প্যান্টের ৪০, মেকসির মজুরি ৮০ টাকা।
মাধবীলতা বলেন, দআমি নারী তাতে কি? আমিও পারি, আমি কারো বোঝা নয়। আমার গায়ে শক্তি আছে, মাথায় বুদ্ধি আছে আর আছে আমার ইচ্ছে শক্তি। আমার ছেলের লেখাপড়ার খরচসহ আমার সংসার সকল ব্যয় আমি নিজে বহন করি। বাবার বাড়ি থেকে দিতে চাইলেও আমি তা নিই না। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে বেশ সুখে আছি। আমি সকলের জীবন আনন্দময়ী হোক এই প্রত্যাশা করি।’