শেফালী বিবি’র উপজেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা অর্জন
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
উপকূলীয় বনজীবী নারী হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার লাভ করলেন শেফালী বিবি। গত ৯ ডিসেম্বর শনিবার আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে উপজেলা পর্যায়ে বিজয়ী জয়িতাদের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী ক্যাটাগরিতে এদিন সকালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা শেফালী বিবি জয়িতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা শেষে এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান মহোদয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সাতক্ষীরা ৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দায় উপস্থিত ছিলেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুজন সরকার, থানা অফিস ইনচার্জ মো. মান্নান আলী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, এসএম আতাউল হক দোলন, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মিসেস শাহানা হামিদ, সাবেক অধ্যক্ষ আশেক-ই এলাহী, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাইদুর রহমান। সবশেষে অতিথিবৃন্দ বিজয়ী জয়িতাদের হাতে ক্রেষ্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন।
শেফালী বিবি সুন্দরবন সুরক্ষা ও বনজীবীদের জীবনের মান উন্নয়নের জন্য এলাকার বননির্ভর নারীদের নিয়ে বনজীবী নারী উন্নয়ন সংগঠন গড়ে তুলে কাঠ বর্হিভুত বনজ সম্পদ দ্বারা কেওড়ার চকলেট, শুকনা আচার, জেলী (টক, ঝাল, মিষ্টি) জেলী (টক, মিষ্টি) ও কেওড়ার নোড়া এবং সুন্দরবনের সংগৃহীত মধু পরিশুদ্ধ করে বোয়েম জাত, মোম দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের মোমবাতি, শোপিচ, সীট তৈরি, আরি, জুরি ও বাটিক বুটিকের কাজ করে, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে অর্গানিকভাবে প্রস্তুতকৃত এসব পণ্য আধুনিকতার ছোয়ায় বোয়েম/প্যাকেট জাত করে বিক্রয় করে যে লভ্যাংশ পেয়েছেন, তার মাধ্যমে ২০ শতক জমি ক্রয় করেছেন। নিজের বসত ঘরটাকে মজবুত করেছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখাচ্ছেন। সংসারের অভাব ঘুচিয়েছেন। যে কারণে তার জয়িতা অর্জন সম্ভব হয়েছে।
উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা বিজয়ী আবেগ আপ্লুত শেফালী বিবি বলেন, “জয়িতার পুরস্কার পাওয়ার আনন্দ কোনদিন আমি ভূলতে পারবো না। আমার মত একজন সাধারণ বনজীবী নারী আজ এখানে দাঁড়াতে পারছি বারসিক এর কারণে। তারা আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে। আমি মনে করি আমাদের দেশকে উন্নত করতে হলে পুরুষের পাশাপাশি নারীকে এগিয়ে যেতে হবে।” উপকূলীয় বনজীবী নারী শেফালী বিবি অর্থনৈতিকভাবে বিশেষ সাফল্য অর্জন করার জন্য উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার লাভ করেন। তার সফলতার গল্প নারী সমাজকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করবে।
উল্লেখ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ এর আওতায় ৫টি ক্যাটাগরিতে সমাজ উন্নয়নে যেসকল নারীরা বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন তাদেরকে জয়িতা সম্মাননা প্রদান করে সমগ্র নারী সমাজকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে চলেছেন। সরকারি নির্ধারিত পুরস্কারের ৫টি ক্যাটাগরি/বিভাগে (অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী, শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য, সফল জননী, নারী নির্যাতনে অবদান ও সমাজ উন্নয়নে অবদান) আবেদন জমা নেওয়া হয় ইউনিয়ন পর্যায়ে। ইউনিয়ন বাছাই কমিটি প্রতিটি ক্যাটাগরি থেকে শ্রেষ্ঠ একজন নির্বাচন করে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে জমা দেন। এভাবে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বাছাইয়ের পর সর্বশেষ সেগুলো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জমা হয়। বনজীবী শেফালী বিবি নিজের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জয়িতা পুরস্কারের জন্য আবেদন ফরম সংগ্রহ করে তা পূরণসহ প্রয়োজনীয় ছবি, প্রত্যয়নপত্র এবং সকলপ্রকার ডকুমেন্ট প্রস্তুত করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহোদয়ের প্রত্যয়ন করে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর বরাবর জমা দেন। সেখানে উপজেলা বাছাই কমিটির মাধ্যমে উপজেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে নির্বাচিত হন শেফালী বিবি।