শেফালী রানীর কৃষি খামার
সাতক্ষীরা থেকে ফাতিমা আক্তার
কৃষিকে আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহসহ উদাহরণ সৃষ্টি করছেন উপকূলীয় অনেক পরিবার। তেমনই এক সফল দম্পতি হল দুর্গাবাটি গ্রামের শেফালী-তপন দম্পতি। উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দূর্গাবাটি গ্রামের এই দম্পতি নিজেদের উদ্যোগে নিজের বাড়ীটিকে সমন্বিত কৃষি খামর হিসেবে গড়ে তুলেছেন। নিজেদের বসতভিটায় বছরব্যাপী বৈচিত্র্যময় ফসল চাষাবাদসহ প্রাণী সম্পদ পালন করে সফলতার দিকে এগিয়েছেন এই দম্পতি।
তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে স্বামী-স্ত্রীসহ চার সদস্যের ছোট সংসার তার। শেফালী রানীর (৪৩) মেয়ে দিপ্তী (২১)ও ছেলে দিপু (১৯) কলেজে পড়া লেখা করেন। স্বামী তপন মন্ডল (৪৯) দিন মজুরের কাজের পাশাপাশি বাড়ির কৃষি পরিচর্যায় সহযোগিতা করেন। স্বামী, স্ত্রী মিলে অনেক পরিশ্রম করে সন্তানদের পড়া চলমান রেখেছেন।
২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দুর্গাবাটি গ্রামে ময়ূর সিএসও দলে যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক আলোচনায় সভা, প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রমে ধারাবাহিক অংশগ্রহণ করে আসছেন। দলে যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে উৎপাদনশীল মূল সম্পদ হিসাবে তাকে ৩টি ছাগল সহযোগিতা করা হয়। এছাড়াও তাকে একটি কদবেল ও পেয়ারার চারা, কিছু বর্ষাকালীন বীজ ও তিনটি হাঁসসহ মোট ১৩ হাজার ৫শ’ টাকার সম্পদ সহযোগিতা করা হয়। সহযোগিতা পাওয়ার পর থেকে সম্পদগুলো তিনি পরম মমতায় আগলে রাখেন।
এ বিষয়ে শেফালী রানী বলেন, “বারসিক থেকে আমাকে ৩টি ছাগল সহযোগিতা দেয়, সেইগুলো আমি ভালোভাবে লালন পালন করি। ছাগলগুলোর যাতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয় দিকে খেয়াল রাখি, অসুখ-বিসুখ বা খাবার-দাবার কোন দিকে আমি অসুবিধা হতে দিইনে। ঠিকমত যতœ সহকারে লালন পালন করি। এখন আমার ঘরে ১৪টি ছাগল রয়েছে।”
স্বামী ও স্ত্রী দুজন মিলে পরিকল্পনা করে নিজেদের মাত্র ১০ শতক বসতি জায়গাতে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বছরব্যাপী মৌসুমভিত্তিক ফসল উৎপাদন করেন। জৈব পদ্ধতিতে নিবিড় যতœ ও পরিচর্যার মাধ্যমে উৎপাদন করেন সব ধরনের সবজি ও ফসল। তাঁরা সারাবছর মৌসুম ভিত্তিক কুশি, ঝিঙ্গা, তরুল, সীম, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, ঢেড়ষ, কামরাঙা ঢেড়ষ, বেগুন, ঝাল, পুঁইশাক, ডেমোশাক, টমেটো, পালংশাক, লালশাক, তরমুজ, ওল, হলুদ, কচুরমূখী, উচ্ছে, লাউ, কলমীশাক, মূলা, ওলকপি, বাঁধাকপি, বীটকপি, ইত্যাদি ফসল চাষাবাদ করেন। বাড়ীতে হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালনসহ কৃষিকাজ করে আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি সন্তানদের পড়ালেখার কাজে ব্যয় করেন।
শেফালী তপন দম্পতির স্বপ্ন দেখেন আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপশি সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করে সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা।