তানোরের সর্বজনীন উদ্যোগগুলো আজ দৃশ্যমান হচ্ছে
তানোর, রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার বাগধানী বাজার পার হলেই শুরু হয় তানোর উপজেলার সীমানা। সেখানে সীমানা ফলকের মাধ্যমে তানোর উপজেলায় আগমনের জন্য স্বাগতম জানানো হচ্ছে। কিন্তু রাস্তার দুপাশে ভালো করে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে কোন গাছে দুটি পাতা আবার কোনটাতে একটি পাতা। গাছগুলোর বয়স এক বছর কয়েক মাস হবে। এখানে যে গাছের নাম বলা হচ্ছে তা হলো তাল গাছ, হ্যাঁ তাল গাছ।
গত বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের কথা গাছে গাছে তাল পরিপক্ক হয়ে গেছে। গ্রামের মানুষের পাঁকা তালের পিঠা খাওয়ার পর তা বাড়ির একটি নিদিষ্ট স্থানে জমা করে রেখেছেন। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় তানোর উপজেলায় ২০১৭ সালে বর্জ্রপাতে মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বেশি। পাশাপাশি সারাদেশেও অন্য বছরের তুলনায় বজ্রপাতের পরিমাণ বেশি ছিল। বাংলাদেশ সরকার বজ্রপাতকে জাতীয় দূর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, তাল গাজ বজ্রপাত নিরোধক বৃক্ষ হিসেবে স্বীকৃত।
এমতাবস্থায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা: শওকাত আলী ও বারসিক মিলে আলোচনার মাধ্যমে উদ্যোগ নেয় সমগ্র তানোর উপজেলায় একযোগে তাল বীজ রোপণ ক্যাম্পেইন আয়োজন করার। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলার সকল দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা, সেচ্ছা সেবী সংগঠন, নারী সংগঠন ও সর্বস্থরের জনগনকে উক্ত ক্যাম্পেইনে যোগদানের আহবান জানান। একাধিক সভা ও আলোচনার মাধ্যমে ১৬ গত সেপ্টেম্বর-১৭ শনিবার দিন নির্ধারণ হলো সমগ্রহ উপজেলায় তাল বীজ রোপণ করার। সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে তালবীজ সংগ্রহ করলেন। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের, রাস্তার দুইপাশে, সরকারি খাস জমিতে, পতিত জমিতে এই তাল বীজ রোপণ করা হবে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর-১৭ শনিবার দিনটি পরিণত হলো তালবীজ রোপণ উৎসব হিসেবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় সকাল ৯.৩০ মিনিটে উপজেলায় তালবীজ রোপণের মাধ্যমে এই মহৎ কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন। শুরু হলো সর্বস্তরের জনগণের তালবীজ রোপণ উৎসব। উপজেলার সকল প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সকল বেসরকারী সংস্থার সদস্য ও গ্রামের সাধারণ মানুষ মিলে একদিনে প্রায় দুই লাখ তালবীজ রোপণ করলেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় নিজে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, রাস্তার পাশে ও গ্রামের সাধারন মানুষের সাথে তালবীজ রোপণের মাধ্যমে কার্যক্রমে উৎসাহ যোগালেন। তালবীজ রোপণের মাধ্যমে তানোর রচিত হলো একটি ইতিহাসের, যা পরিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে সহযোগিতা করবে গ্রামেরই সাধারণ মানুষকে।
এই সর্বজনীন উদ্যোগ আজ সফল হতে শুরু করেছে। বীজ থেকে আজ গাছগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। এখন প্রয়োজন আমাদের আবার উৎসবমূখরভাবেই গাছগুলো রক্ষা করার মাধ্যমে বড় করে তোলা। তাহলে আমরাও এই ইতিহাসেরই সাক্ষী হয়ে থাকতে পারব। ধন্যবাদ জানাই একজন উদ্যোগী মানুষ মুহা: শওকাত আলীকে।