অচাষকৃত উদ্ভিদ আমাদের সম্পদ
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল ও রামকৃষ্ণ জোয়ারদার
‘এক সময় আমাদের এলাকাতে বিভিন্ন ধরনের লতাপাতা, গাছ গাছালি, চাষ করা ও চাষবিহীন বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদে ভরা ছিল। মাঠেঘাটে, বিলের রাস্তা, ওয়াপদা রাস্তা, বিল্ডিং এর গায়ে, ঝোপঝাড়ে বিভিন্ন জায়গায়ে তাকালে এসকল উদ্ভিদ চোখে পড়তো। এমনকি অনেক পরিবারের দু এক সাজের খাদ্য চাহিদা পূরণ হতো এসকল কুড়ানো আজাবা শাক দিয়ে। সময়ের বিবর্তনে সবকিছু হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে এই এলাকাটি একেবারে বৃক্ষ ও উদ্ভি শুন্য হয়ে গেছে। তারপর থেকে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে আবার লাগাতে শুরু করেছি। তার মধ্যে কিছু টিকে আছে আবার অনেক কিছু টিকতে পারছে না।’
উপরোক্ত কথাটি বলেছেন শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ বেস্টিত পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের রাবেয়া বেগম। বারসিক শ্যামনগর রিসোর্স সেন্টারের সহযোগিতায় শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাখিমারা পরিবেশবান্ধব আইএফএম কৃষি নারী সংগঠনের উদ্যোগে অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ এবং নতুন প্রজন্মের মাধ্যমে অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের গুণাবলী এবং পরিচিতিকরণের লক্ষ্যে আয়োজিত রান্না প্রতিযোগিতা ও স্বাদ গ্রহণ কর্মসূচিতে এই কথা বলেন তিনি।
প্রতিযোগিতায় পাখিমারা গ্রামের স্থানীয় জনগোষ্ঠী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ প্রায় ৭৫ জন অংশগ্রহণ করেন। রান্না প্রতিযোগিতায় পাখিমারা গ্রামের ১৫ জন নারী ১৫ ধরনের অচাষকৃত উদ্ভিদের তৈরিকৃত খাদ্য রান্না করেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কৃষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ৬ সদস্যের একটি বিচারক দল তৈরি করা হয়। তাঁরা রান্না পরবর্তীতে খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করেন এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের তাদের খাদ্যের তৈরির সময়, এলাকাতে পাপ্তি কেমন, কোন সময় বেশি পাওয়া যায়, কি কি দিয়ে রান্না করা যায়, এসব খাদ্য তারা পরিবারে ব্যবহার করে কিনা এসব খাদ্যে কি কি গুণাবলী আছে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করেন এবং নাম্বার প্রদান করেন।
রান্না প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সারিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের মতো ইউনিয়নে এসকল অনুষ্ঠান বেশি করে করা দরকার। কারণ আমাদের চারিপাশে শুধু নোনা পানি। এখানে অচাষকৃতু এসকল উদ্ভিদের খুবই অমিল এবং বাচ্চারা এর গুনাগুণ সম্পর্কে সচেতন নয়। তাদেরকে এবং এলাকার মানুষকে সচেতন করা জরুরি। তাহলে উদ্ভিদ বৈচিত্র্য রক্ষা পাবে এবং এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।’ শিক্ষক জি এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘এটি একটি ভিন্ন কর্মসূচি। উপকূলীয় এলাকার জন্য এ কর্মসূচি একটি মডেল। এ কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে করা এবং এটি আমাদের স্কুল পর্যায়ে করতে হবে।’ প্রাক্তন মেম্বর মো. আশরাফ হোসেন বলেন, ‘এ কর্মসূচি আরো বড় করে করতে হবে। আমাদের এলাকাতে এরকম কর্মসূচি আয়োজন করার জন্য বারসিককে ধন্যবাদ। আমাদের আনাচে কানাচে পুষ্টি ভরপুর তা বাদ দিয়ে আমরা বাজারের দিকে ঝুঁকছি। আমাদেরকে এটা বুঝতে হবে এবং অন্যদেরকে বুঝাতে হবে। এগুলো সংরক্ষণ, এর ব্যবহার বাড়ানোর জন্য এরকম কর্মসূচি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
রান্না প্রতিযোগিতায় বুনো আমড়ার কাটা রান্না করে প্রথম স্থান অধিকার করেন নাজমা বেগম, মিম্রিত শাকের চপ তৈরি করে ২য় শিক্ষার্থী ইতি, আদাবরণ শাক রান্না করে ৩য় স্থান অধিকার করেন ফতেমা বেগম।